বসিরহাট: স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশ ও রাজ্যজুড়ে যখন বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, পরাধীন ভারতের এক পাঠাগারকে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নিল বসিরহাট পুরসভা। বসিরহাট পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মজুমদার বাগান। ১৯৩০ সালে এই এলাকায় ৫ কাঠা জমির উপর তৈরি হয়েছিল জাতীয় পাঠাগার ব্যায়ামপীঠ। বসিরহাটের স্বাধীনতা সংগ্রামী দীনেশ মজুমদারের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পাঠাগারের পথচলা। কিন্তু কালের নিয়মে ব্যায়ামপীঠের অস্তিত্ব অনেকটাই মলিন হয়ে যায়। তাকে এবার নতুন রূপে সাজাতে উদ্যোগ নিল বসিরহাট পুরসভা।
১৯৩০ সালে একটি খড়ের চালের ঘরে জাতীয় পাঠাগার ব্যায়ামপীঠ তৈরি হয়েছিল। স্বাধীনতার পূর্বে বঙ্গ তথা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছিল একাধিক ব্যায়াম সমিতি। তৎকালীন বিপ্লবীরা এই সব অনুশীলন সমিতির ঘরে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা পুস্তিকা আকারে লিপিবদ্ধ করতেন। দেশবাসীর মনে দেশাত্ববোধ জাগানোর জন্য সেই প্রতিলিপিগুলি পুস্তিকা কিংবা পত্রিকা আকারে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যেত।
সম্প্রতি দীনেশ মজুমদারের স্বপ্নের সেই জাতীয় পাঠাগার ব্যায়ামপীঠ তার পুরোনো খোলস ত্যাগ করে নবরূপে সজ্জিত হয়েছে। বিভিন্ন স্বদেশী পত্রিকা তথা পুস্তিকাতেও বসিরহাটের এই জাতীয় পাঠাগারের উল্লেখ আছে। এই পাঠাগারে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবির পাণ্ডুলিপি, অমৃতবাজার থেকে যুগান্তরের মতো স্বদেশী সংবাদপত্র পুস্তিকা আকারে সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু অবহেলায় পড়ে থাকার কারণে প্রায় ভগ্নপ্রায় অবস্থা হয়েছিল পাঠাগারের। বসিরহাট পুরসভার উদ্যোগে পাঠাগারের দেওয়ালে বিভিন্ন রং তুলির ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অন্যদিকে শতাব্দীপ্রাচীন এই জাতীয় পাঠাগারকে সংরক্ষণ করার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশিষ্ট সমাজকর্মী ছন্দক বাইন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই পাঠাগারটি বেহাল ও ভগ্ন অবস্থায় পড়েছিল, এবার নতুন রূপ পেল।’ বসিরহাটের ছাত্র অর্কজ্যোতি হাজরা বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মোবাইলের স্ক্রিন দেখতে দেখতে চোখের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তেমন মানুষ গৃহবন্দিও হয়ে পড়ছে। তাই বেশি করে বই পড়লে মনের বিকাশ ঘটবে। সেই সঙ্গে জ্ঞানেরও প্রসার ঘটবে। আমি চাই, সব ছাত্রছাত্রী পাঠাগারে এসে তাদের পুরনো ভারতবর্ষের ইতিহাস পড়ে, সংস্কৃতি জানার চেষ্টা করে, বিপ্লবীদের কথা জানতে পারুক।”