কলকাতা : মে মাসের শেষ দিন। অফিসিয়ালি বর্ষা এখনও আসেনি।আসবে আসবে করছে। তবে কারোর কারোর মন আজ অকাল বর্ষায় ভিজছে। কেউ মনে রেখেছেন, কেউ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রেখে চমকে উঠেছেন আজকের তারিখটা দেখে! ৩১ মে কৃষ্ণকুমার কুন্নথের(KrishnaKumar Kunnath) চলে যাওয়ার দিন, আজ কেকে(KK)-র চলে যাওয়ার দিন। ২০২২-এ এই দিনই নজরুল মঞ্চে(Najrul Manch) অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন কে কে। অনুষ্ঠান চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি।হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিল্পীকে। বেশি রাতে আসে মন খারাপের খবর, না ফেরার দেশে চলে গেছেন কেকে। বড় অকালেই,মাত্র ৫৩ বছর বয়সে সকলকে ছেড়ে অচিনপুরে পাড়ি দেন বলিউডের এই জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। সুরের শহর, এই তিলোত্তমার বুকে আচমকাই থেমে গিয়েছিল কেকে-র সুর। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে যাঁদের বড় হয়ে ওঠা, তাঁদের কাছে আজও কে কে মানে শুধুই অসংখ্য হিট গান নয়, একরাশ ইমোশন।
গান মানে সেই সময় বড়দের ধমক খেয়েও টেপ রেকর্ডারের অডিও ক্যাসেটে গান শোনা। অবশ্য ডিভিডিও এসে গিয়েছে ততদিনে।সেই সময় কে কে-র একের পর এক দুর্দান্ত গানে মজে থাকত আঠারোর স্পর্ধা।বয়সে ছোট কিংবা একটু বড়দের কাছেও সমান জনপ্রিয় ছিল কে কে-র গান। প্রেমে আঘাত খেয়ে বহু ব্যর্থ প্রেমিক মন গেয়ে উঠেছে, ‘লুট গ্যয়ে হম তেরে মহব্বত মে!’ আবার মনের মানুষের সামনে দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে ‘জারা সা দিল মে দে জাগা তু’ গেয়ে প্রপোজ করেনি এমন প্রেমিকের সংখ্যাটাও কিন্তু মোটেই হাতে গোনা নয়।।দেশি-বিদেশি কেবল্ চ্যানেলের দারুণ রমরমার সেই সময় বাড়ির টিভিতে কে কে-র গান দেখা কিন্তু বারণ ছিল।কারণ, নেপথ্যে কে কে-র কন্ঠ থাকলেও পর্দা জুড়ে থাকতেন বলিউডের কিস কিং ইমরান হাসমি(Emran Hashmi)। অভিনেতার ছবির গান টিভিতে দেখা বারণ, কেন সেটা নিশ্চয় আজ আর বলে দিতে হবে না। কিন্তু সেই সময় দারুণ জনপ্রিয় ছিল ইমরান আর কে কে জুটি।
‘আশিক বানায়া আপনে’ , ‘অকসর’ থেকে ‘গ্যাংস্টার’ কিংবা ‘জন্নত’।কে কে-র সেরা দশ গানের তালিকা করতে বসে নাজেহাল হবেন, কারণ আপনি কনফিউশড হয়ে যাবেন যে, কোন গানটা রাখবেন,আর কোনটা বাদ দেবেন। ‘তুম মিলে’ ছবির ‘দিল ইবাদত’ গানটা মনে আছে ? আহা, কি সব গান গেয়েছেন কে কে। আজও যেন চোখ বুজলেই অনায়াসে কানে আসে শিল্পীর সেই অনবদ্য স্টাইল । আরও নস্টালজিক হয় প্রেমিক মন। টাইমমেশিনে চড়ে অনায়াসেই ফিরে যায় সেই কৈশোর কিংবা যৌবনের ফেলে আসা সেই দিনগুলোতে।সংগীত প্রেমী বাঙালির কাছে ভাল শিল্পীর কদর চিরকালীন ।
বাঙালি গান বোঝে, প্রকৃত শিল্পীর সম্মান করতে জানে।তাই তো, তাদের প্রিয় আরেক বাঙালি শিল্পী কে কে-কে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কুকথা বললে প্রতিবাদে সোচ্চার হয় বাঙালি। এ প্রতিবাদ শুধু ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়, এ প্রতিবাদ গানকে ভালবেসে প্রতিবাদ, ভিন রাজ্যের মানুষ,এক মালয়লী পরিবারের ছেলে কৃষ্ণকুমার কুন্নথকে ভালবেসে প্রতিবাদ। আসলে কে কে-র ভক্তকূলের বাঙালি, গুজরাতি হয় না। বিহারী-পঞ্জাবী হয় না। হয় না তামিল কিংবা তেলুগু। সবার কাছে আজও আবেগের আর এক নাম কে কে……কৃষ্ণকুমার কুন্নথ। আমরা আপনাকে চিরদিন মিস করব। সত্যিই আজ মন ভালো নেই।