Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeFourth Pillar | নরেন্দ্র মোদি তাঁর দেশের মানুষকে বোকা ভাবেন  
Array

Fourth Pillar | নরেন্দ্র মোদি তাঁর দেশের মানুষকে বোকা ভাবেন  

Follow Us :

ভারতমণ্ডপম উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী, ওঁর আমলে যে কোনও উদ্বোধনই এখন এক হিন্দু বিধানসম্মত অনুষ্ঠান, এই অনুষ্ঠানও তার ব্যতিক্রম ছিল না। এই অনুষ্ঠানে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি বললেন আমরা এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি, আর ক’ বছরের মধ্যেই আমরা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠছি। বছর চারেক আগেই উনি ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির কথা বলেছিলেন, উনি সময়মতো ভুলে যেতেই পারেন, আমরা ভুলিনি, মানুষও ভোলেনি। ক’দিন আগেই আমেরিকাতে গিয়ে ইউনাইটেড নেশনস-এর মঞ্চে দাঁড়িয়েও এই দাবিই করেছেন। উনি কি সত্যি বলছেন? দেশের আমজনতা কি আজ এক পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির অঙ্গ, আর ক’দিন পরেই হতে চলেছে তৃতীয় বৃহত্তম? হ্যাঁ, ফর আ চেঞ্জ, নরেন্দ্র মোদি সত্যি কথাই বলছেন। অর্থনৈতিক বিষয়ে যে সব প্রতিষ্ঠানের কথা গ্রহণযোগ্য, তাদের অন্যতম মর্গান স্ট্যানলে বা গোল্ডম্যান স্যাশে ঠিক এই কথাই বলেছে। এদের কথা অনুযায়ী ২৭-২৮ এ আমাদের দেশ তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে, শুধু তাই নয় ২০৭৩-৭৪ নাগাদ আমাদের দেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠতেই পারে। মানে ৫০ বছর পরে আমাদের উপরে থাকবে কেবল আমেরিকা। ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডও এই একই কথা বলেছে। 
এখানে দুটো প্রশ্ন আছে, প্রথমটা হল কিসের হিসেবে এইসব কথা বলা হচ্ছে? দ্বিতীয়টা হল আগামী ৫-১০-১৫-২০-৫০ বছর পরে এদেশে নরেন্দ্র মোদির বা বিজেপির শাসন থাকবে কি না তা নিয়ে এতটা নিশ্চিত কেন আইএমএফ, মর্গান স্টানলে বা গোল্ডম্যান স্যাশে? নেতা বা দলবদল তো হতেই পারে তাই না? তো আগে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে আসা যাক, ওদের এই পূর্বানুমান বা প্রেডিকশন ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধিকে দেখে, কে শাসনে আছে বা কে শাসনে থাকবে, তাই দেখে নয়। অর্থনীতির বৃদ্ধি বা গ্রোথ হঠাৎ কোনও শাসক এসে করে দিতে পারে না, এ এক ব্যবস্থা যা একটু একটু করে গড়ে ওঠে, স্বাধীনতার পরে আমাদের অর্থনীতি এক ধরনের ছিল, এক মিশ্র অর্থনীতি, জওহরলাল নেহেরু এটাকেই বলেছিলেন সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের অর্থনীতি। রাজীব গান্ধী, নরসিমহা রাও, মনমোহন সিংহের আগে, রাজীব গান্ধীর সময় থেকে আমাদের দেশ সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের অর্থনীতি থেকে সরে আসতে থাকে, নরসিমহা রাওয়ের সময়ে সেই গতি আরও দ্রুত হয়, তারপর মনমোহন সিংয়ের সময়ে সেই অর্থনীতি এক অন্য রাস্তায় নামে যাকে উদার অর্থনীতি, খোলা বাজার অর্থনীতি, মনমোহনমিক্স ইত্যাদিও বলা হয়। এরপর থেকে আমাদের অর্থনীতির মূল ধারণা পাল্টায়নি। কাজেই দেশের মাথায় বিজেপি না নরেন্দ্র মোদি না হরিদাস পাল যেই থাকুক না কেন, যদি বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কোনও আমূল পরিবর্তন না হয়, তাহলে আমাদের দেশের অর্থনীতি যে হারে বাড়বে, অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো সেই হারের কথাই বলেছেন। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মেরে ঘর আ কে তো দেখো 

এবারে আসি প্রথম প্রশ্নে, কিসের ভিত্তিতে এই পঞ্চম বৃহত্তম, বা তৃতীয় বৃহত্তম ইত্যাদির কথা বলা হচ্ছে। ভিত্তিটা হল জিডিপি, গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট, মানে আমাদের দেশে যা যা উৎপাদন হয়, যন্ত্রপাতি থেকে রোজকার জিনিসপত্র বা খাদ্যশস্য যা যা উৎপাদন হয় এবং তার সঙ্গে সার্ভিস সেক্টর, মানে আইটি, স্বাস্থ্য, ট্যুরিজম ইত্যাদি বিভিন্ন সার্ভিস সেক্টরে যে মূল্যের সম্পদ উৎপাদন হয় তার সবটা যোগ করে একটা হিসেবকে বলা হয় গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট। মোদিজি বলেছেন, সেই গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্টের হিসেবে আমরা এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি, ২০১৪ সালে ছিলাম দশম, এখন পঞ্চম। আমরা এই সময়ের মধ্যে ইতালি, কানাডা, রাশিয়া, ফ্রান্স আর ব্রিটেন, মানে ইউনাইটেড কিংডমকে ছাড়িয়ে পঞ্চম স্থানে আছি, আর আমাদের উপরে আছে জার্মানি, জাপান, চীন আর আমেরিকা। এই কথাগুলো বলতে তো গর্বই হওয়া উচিত, আমরা ছিলাম দশম, ২০১৪তে, এখন ২০২৩-এ পঞ্চম। এই সময়কালের মধ্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি, কাজেই তিনি বুক বাজিয়ে সেই কথাই বলছেন। এবার আসুন এই দাবির পাশাপাশি বাকি কিছু তথ্যও দেখা যাক। বা আরও পরিষ্কার করে দুটো জমানার ফারাক আর মিলগুলো খুঁজে বার করা যাক। দুটো জমানা মানে ২০০৪ থেকে ২০১৪, ইউপিএ-র জমানা, মনমোহনের জমানা। ২০১৪ থেকে ২০২৩ বিজেপির জমানা, নরেন্দ্র মোদির জমানা। ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত জিডিপি বৃদ্ধি হয়েছে ১৮৩ শতাংশ, হ্যাঁ ১৮৩ শতাংশ। ৭০০ বিলিয়ন ডলার ইকোনমি থেকে ২০১৪ তে ২০৩৯ বিলিয়ন ডলার বা ২ ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে আমাদের জিডিপি। আর ২০১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়েছে ৮৩ শতাংশ, ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি এখন ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ আগের ১০ বছরের তুলনায় আমাদের বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। 

এই তথ্য তুলে ধরলেই বিজেপির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর দুনিয়াজোড়া মন্দার কথা বলবেন, সে কথা বলার মধ্যে যুক্তিও আছে। কিন্তু যে কথা ওঁরা বলছেন না তা হল এই জিডিপি বৃদ্ধির হার কমার অন্যতম ওই কারণগুলোর সঙ্গেই আছে ডিমনিটাইজেশন এবং অপরিকল্পিতভাবে জিডিপি এনে হাজির করা। কিন্তু সেসব হলেও ১৮৩-র জায়গায় ৮৩ শতাংশ গ্রোথ, এতটা কমে যাওয়ার পক্ষে ওই যুক্তিগুলো অবশ্যই যথেষ্ট নয়। অনেকেই বলবেন ১৮৩ না ৮৩, এসব কথা ছাড়ুন, আমরা যে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং কিছুদিনের মধ্যেই যে আমরা তৃতীয় স্থানে যাব, এটাও তো কম নয়, এবং এই সময়কালের নেতা তো নরেন্দ্র মোদি তা তো অস্বীকার করার নয়। ঠিক কথা। তাহলে এবার আসুন অন্য প্রসঙ্গে, একটা দেশ কেমন আছে, দেশের মানুষ কেমন আছে তা জানার জন্য এই জিডিপি মাপলেই চলবে? জিডিপি বেশি মানেই জয় শ্রীরাম, অচ্ছে দিন আ গয়ে? আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে? এই জিডিপি দিয়ে গোটা দেশের অর্থনীতির একটা ধারণা পাওয়া গেলেও দেশের পুরো ছবি ফুটে ওঠে না। দেশের মানুষের ধারণা অনেকটা পাওয়া যায় পার ক্যাপিটা ইনকাম দিয়ে, মানে দেশের মানুষের মাথা পিছু রোজগার কত? সেখানে আমরা কোথায়? আমরা ১৯৪টা দেশের মধ্যে ১২৮ নম্বরে, জিডিপিতে পঞ্চম একটা দেশ পার ক্যাপিটা ইনকামে ১২৮ নম্বরে আছে, তার মানে কী? দেশ সম্পদশালী, কিন্তু দেশের মানুষের কাছে রোজগার নেই। ধরুন যে ব্রিটেনকে ছাপিয়ে আমরা পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হলাম, সেই ইউকে-র পার ক্যাপিটা ইনকাম কত? ৪৭ হাজার ডলার, আমাদের কত? ২৬০০ ডলার, ২০২৮-এ যখন আমরা জার্মানি আর জাপানকে ছাড়িয়ে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠব, তখন আমাদের দেশের পার ক্যাপিটা ইনকাম হবে বছরে তিন লক্ষ টাকা, সেই সময় জার্মানির পার ক্যাপিটা ইনকাম হবে ৩৯ লক্ষ টাকা, জাপানের ২৯ লক্ষ টাকা। হিসেব মতো এখন আমাদের দেশের একজন মানুষ প্রতিদিন ৪৭৭ টাকা রোজগার করে, কিন্তু ক’জন মানুষকে আপনি দেখেছেন যাদের প্রতিদিন রোজগার ৪৭৭ টাকা? 

মাথাপিছু আয় ৪৭৭ হলে পরিবার পিছু আয় মাসে হবে ২৫ হাজার টাকার বেশি, আপনার চারপাশে কি সেরকম লোক প্রচুর? বরং উলটো, রিকসাওলা থেকে মুটে মজুর, বাড়িতে কাজ করেন এমন মহিলা থেকে বাজারের ছোট ছোট সবজিওলা, মাছওলাদের রোজগার তার থেকে অনেক কম, তাহলে কি তথ্যটা ভুল? এইখানে আরেকটা জটিলতা আছে, পার ক্যাপিটা ইনকাম দিয়ে দেশের মানুষের অবস্থার অনেকটা ছবি পাওয়া যায় কিন্তু সেখানেও সমস্যা আছে। ধরুন আপনার তিনজন বন্ধু, একজনের আয় এক হাজার, দ্বিতীয় জনের আয় ৮ হাজার আর তৃতীয় জনের আয় ৬০ হাজার, যদি তিনজনের গড় আয় বার করা হয়, তাহলে তিনজনের গড় আয় দাঁড়াবে ২৩ হাজার টাকা। কিন্তু সেই গড় দিয়ে প্রথম বা দ্বিতীয় জনের অবস্থার ছবি ফুটে উঠবে না। ঠিক সেই রকম আম্বানির আয়, কর্পোরেট সংস্থার কর্তাদের আয়, আইএএস, আইপিএস, অধ্যাপক, ব্যাঙ্ক ম্যানেজার, রাজ্য সরকারি কেরানি আর রিকশাওলার আয় যোগ করে গড় বের করলে তলার সারির লোকজনেদের আর্থিক অবস্থার হদিশ মেলে না। সেখানে আরেকটা হিসেবও জানতে হয়, তা হল আর্থিক বৈষম্যের কথা। এই বছরের অক্সফ্যাম রিপোর্ট বলছে, দেশের মাত্র এক শতাংশের হাতে আছে দেশের ৪০.৫ শতাংশ সম্পদ, তলার সারির ৫০ শতাংশ মানুষের কাছে আছে দেশের ১ শতাংশ সম্পদ, দেশের ১০ শতাংশ মানুষের কাছে আছে ৭২ শতাংশ সম্পদ আর বাকি ৯০ শতাংশ মানুষের হাতে আছে ২৮ শতাংশ সম্পদ। মানে চূড়ান্ত বৈষম্য। কাজেই দেশের অর্থনীতি দুই না পাঁচ না সাত ট্রিলিয়ন হল, তাতে দেশের সাধারণ মানুষের কিচ্ছু এসে যায় না, দেশের মানুষের রোজগার কোথায়? ৮০ কোটি মানুষকে তো নরেন্দ্র মোদির নিজের হিসেবেই র‍্যাশনের ফ্রি চাল আনাজ দিতে হয়, মাসে ১০-১৫ কেজি ফ্রি আনাজ দিয়ে যাদের পেট চলে তাদের দেশের অর্থনীতি পঞ্চম না তৃতীয়, তাতে কীই বা এসে যায়? এবং এই ধারাটা তো কেবল নরেন্দ্র মোদিজির নয়, তার আগের থেকেই হয়ে আসছে। উদার অর্থনীতির নাম করে, খোলা বাজারের নাম করে অর্থনীতির পরিমাণ তো বাড়ছে, কিন্তু আয় বাড়ছে না, বৈষম্য বাড়ছে সেই নরসিমহা রাও, মনমোহনের আমল থেকেই। সেদিনের ১৮৩ শতাংশ বৃদ্ধির পরেও দেশের সাধারণ মানুষের হাল ফেরেনি, আর মোদি জমানার ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধির পরে দেশের গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, তার পারচেজিং পাওয়ার, ক্রয়ক্ষমতা আরও কমেছে, বেকারত্ব বেড়েছে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে খেতে না পাই তো কী আছে রামমন্দির তো হচ্ছে, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তো উঠেছে, হিন্দু খতরে মে হ্যায়, হিন্দু রাষ্ট্রের মতো স্লোগান। সবমিলিয়ে এটা বলাই যায়, ভারতমণ্ডপম-এর উদ্বোধন করতে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী আসলে দেশের লোককে ভাঁওতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, সত্যি কথাটা লুকিয়ে মিথ্যে কথা বলেছেন। উনি দেশের মানুষকে বোকা ভাবেন।

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Narendra Modi | লুঠের টাকা ফেরত দেব, অশোকনগরে গ্যারান্টি মোদির
01:42:36
Video thumbnail
Narendra Modi | বান্দা ইয়ে বিন্দাস হ্যায়, 'বিন্দাস' মোদির ছবি দিল তৃণমূল
01:30:21
Video thumbnail
Cow Smuggling Case | বাংলাদেশে পাচার হচ্ছিল গরু, ধরল ডিস্ট্রিক এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ
03:47:16
Video thumbnail
Narendra Modi | মা সারদার বাড়িতে মোদি কী স্ট্র্যাটেজি বিজেপির?
01:18:05
Video thumbnail
Train Derailed | লিলুয়াতে লাইনচ্যুত লোকাল ট্রেন বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা
02:07:11
Video thumbnail
মার্কেট কাঁপাচ্ছে স্মার্ট গ্র্যাজুয়েট দিদি, দেখুন ভিডিও
01:13:20
Video thumbnail
বাংলার ৪২ | ডায়মন্ড হারবারে কোন দল এগিয়ে?
00:00
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | গুজরাতে ৯ শিশু সহ ৩৩ জনের পুড়ে মারা যাওয়া ইউটিউবার প্রতিবাদীদের চোখ এড়িয়ে গেল কেন?
00:00
Video thumbnail
চতুর্থ স্তম্ভ | Fourth Pillar | মোদি–শাহ চলে যাবেন, রেখে যাবেন এক বিভক্ত সমাজ, এক বিধ্বস্ত অর্থনীতি
00:00
Video thumbnail
বাংলার ৪২ | ডায়মন্ড হারবারে কোন দল এগিয়ে?
05:45