নাইরোবি: বিশ্ব থেকে নির্মূল করা হল ‘সীসাযুক্ত বিষাক্ত পেট্রোলে’র ব্যবহার। যার ফলে দশ লক্ষেরও বেশি অকাল মৃত্যু রোধ হবে। পাশাপাশি ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিও রক্ষা পাবে। সোমবার এমনটাই জানালো ইউনাইটেড নেশনস ইনভারমেন্ট প্রোগ্রাম বা ‘ইউএনইপি’।
গত এক দশক আগেই সীসাযুক্ত পেট্রোল ব্যবহারের বিষাক্ত প্রভাব সম্পর্কে সর্তকতা জারি করেছিলেন চিকিৎসকেরা। অন্যান্য দেশগুলি এই ধরনের পেট্রোল এর ব্যবহার বন্ধ করলেও আলজেরিয়া এই পেট্রোলের ব্যবহার করে আসছিল। তবে গত মাসেই সীসাযুক্ত পেট্রোল এর ব্যবহার ও সরবরাহ বন্ধ করেছে আলজেরিয়া। যার ফলে একটি যুগের অবসান হল বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল।
কেনিয়ার নাইরোবিতে ইউএনডইপি সদর দফতরে কার্যনির্বাহী পরিচালক ইঙ্গার অ্যান্ডারসন বলেন, ” সীসাযুক্ত পেট্রোলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য একটি বিশাল মাইলফলক। ”
আরও পড়ুন: বাজারে এল গুজরাটের অঙ্কলেশ্বরে তৈরি কোভ্যাক্সিনের প্রথম ব্যাচ
উল্লেখ্য গত দুই দশক আগেও বিশ্বের ১০০ টির বেশি দেশ এই সীসাযুক্ত পেট্রোল ব্যবহার করত। যার ফলে অকাল মৃত্যু দুর্বল স্বাস্থ্য ও বায়ু দূষণের মাত্রা প্রবল বৃদ্ধি পেয়েছিল।
সীসাযুক্ত পেট্রোলের নেতিবাচক প্রভাব প্রথম নজরে আসে ১৯২৪ সালে। শেষ সময় আমেরিকার একটি তৈল খনির ডজনেরও বেশি শ্রমিক শারীরিক অসুস্থতার শিকার হন। তৈলখনির মধ্যেই প্রবল খিঁচুনি দেখা যায় তাদের। হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পাঁচজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সমস্ত পেট্রোল ও পেট্রোপণ্যে সিসার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সেই কথা মাথায় রেখেই ২০০২ সালে সীসা যুক্ত পেট্রোলের ব্যবহার বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক স্তরে একটি প্রচার শুরু করা হয়। আমেরিকা চীন ও ভারত সেই পেট্রোলের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বিশ্বের নিম্ন আয় ভুক্ত দেশ গুলি এই ধরনের পেট্রোলের ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছিল।
যদিও ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমার ও আফগানিস্তান সিসাযুক্ত পেট্রোল এর ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধ করে দেয়। তবে সিরিয়া ইরাক, ইয়েমেনের মত দেশ গুলি এই পেট্রোল এর ব্যবহার অব্যাহত রেখেছিল।
সীসাযুক্ত পেট্রোলের ব্যবহার বন্ধ হলে ১০ লক্ষের উপর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। সেইসঙ্গে প্রায় বিশ্বের আড়াই ট্রিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা যাবে। কমবে অপরাধের প্রবণতাও। এমনটাই যুক্তি ইউএনইপি’র।
আরও পড়ুন: নিশানায় ছিল মার্কিন-ব্রিটিশ বিমান! কাবুলে রকেট হামলা ঘিরে উঠছে প্রশ্ন
আগামী দশকে যানবাহনের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০ কোটিরও বেশি। মূলত আমেরিকা ইউরোপ ও জাপান থেকে বিশ্বের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যানবাহনের রফতানি বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে বায়ু দূষণ এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি রিপোর্ট যথেষ্টই চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও। আর এই রিপোর্টটি চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বিজ্ঞানী থেকে চিকিৎসকদের কপালে।