কলকাতা: নিজেরই দলের মন্ত্রী উদয়ন গুহকে ‘পাগল’ বললেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বাম আমলে চিরকুট দিয়ে চাকরি হত বলে শনিবার দাবি করেছেন উদয়ন। সেই নিয়ে প্রশ্ন করাতেই বেশ জোরের সঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ও কী পাগলের মতো বকছে আমার জানা নেই। এটা নিয়ে আমার বক্তব্যই নেই। চিরকুটে কোনও দিন লোক ঢোকানো যায় না। একটা আবেদনপত্র লাগে।
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যথেষ্ট চাপে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল (TMC)। সাম্প্রতিককালে এই কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছে একের পর এক। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অস্বস্তি কাটাতে তাই পাল্টা বামেদের দোষারোপের রাস্তায় হেঁটেছেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। তাঁদের দাবি, বাম আমলেও যথেষ্ট নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) থেকে শুরু করে একাধিক নেতা-মন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, বাম আমলে চিরকুটে চাকরি হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই তাল কাটল পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) মন্তব্যে। তাঁর দাবি, চিরকুটে চাকরি হত সাতের দশকে। তার পর থেকে নিয়োগ হয়েছে নিয়ম মেনেই। কার্যত বামেদের সুরেই সুর মেলালেন ফিরহাদ।
ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষ, উদয়ন গুহর মতো তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীরা বলেছিলেন, নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছিল বাম আমলেও। এক ধাপ এগিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) এও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিলেই এ নিয়ে তদন্ত শুরু হবে। এদিকে শনিবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ (Udayan Guha) বামেদের বিরুদ্ধে চিরকুট দিয়ে চাকরির অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু এই অভিযোগ স্পষ্টতই খারিজ করে দিলেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই। এটা আগে হত, সাতের দশকে হত।
আরও পড়ুন: Udayan Guha | বাবার আমলেও চিরকুটে চাকরি হয়েছে, বিস্ফোরক দাবি মন্ত্রী উদয়ন গুহের
দিনহাটায় নিজের বাড়িতে বসে উদয়ন এদিন বলেন, বাম আমলে কোটার চাকরি ভাগ হত। সেই সময় আমি ফরওয়ার্ড ব্লক (Forward Block) করতাম বলতে দ্বিধা নেই। আমার বাবা ফরওয়ার্ড ব্লকের মন্ত্রী ছিলেন। বাবার হাত দিয়েও অনেক বেআইনি চাকরি হয়েছে। সেই চাকরির একটা বড় ভাগ থাকত সিপিএমের (CPM) দখলে, দ্বিতীয় পার্টি হিসেবে একটা অংশ ফরওয়ার্ড ব্লকের জন্য আর বাকি সামান্য অংশ আরএসপি (RSP), সিপিআইয়ের (CPI) নামে ভাগ হত। কোটা অনুযায়ী যার নাম দেওয়া হত সে-ই মাস্টার। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হওয়ার জন্য কোনও যোগ্যতার মানই ছিল না। মাধ্যমিক পাশ হলেই কোটায় চাকরি হয়ে যেত। সার্টিফিকেট থাকলেই হত। এটা কি দুর্নীতি নয়!
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর এই বিস্ফোরক দাবিকে আদৌ মান্যতা দিলেন না মেয়র। বরং তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারকে (Left Front Government) ক্লিন চিট দিলেন। এদিকে সিপিএমের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বার্তা দিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তা নিয়েও দ্বিমত পোষণ করেছেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, সিপিএম-এর সঙ্গে আমরা লড়াই করেছি। কিন্তু মানুষ হিসাবে আমি তাদের থেকে দূরে থাকব এটা হয় না। সিপিএম-এর কেউ অসুস্থ হলে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আমরা মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতি করছি। সিপিএম আমাদের অনেক অত্যাচার করেছে। তার মানে সে করেছে বলে আমি করব সেটা হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বদলা নয়, বদল চাইয়ের কথা বলেছেন।