কলকাতা: ডিএ-র দাবিতে ধর্মঘটী শিক্ষকদের ‘শাস্তি’র বিষয়ে ঢোঁক গিলতে চলেছে রাজ্য সরকার। ধর্মঘটের দিন অনুপস্থিত শিক্ষকদের শোকজ করা নিয়ে এবার নরম মনোভাব পোষণ করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। ১০ মার্চ ডিএ-র দাবিতে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশ একদিনের কর্মবিরতি করেছিলেন। এই কর্মবিরতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ওইদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন যাঁরা, তাঁদের শোকজ করেছে। সাত দিনের মধ্যে উত্তর দেোয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে বৃহস্পতিবার যে বিজ্ঞপ্তিটা দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, পর্ষদকে উত্তর দিতে হবে না। প্রতিটি জেলার ডিআইয়ের কাছে জমা দিলেই হবে। প্রয়োজনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তা চেয়ে নেবে।
শিক্ষক মহল মনে করছে, ১০ মার্চ ধর্মঘট করেছিলেন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরা। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও প্রাথমিক বোর্ড অনুপস্থিত থাকা কর্মীদের বিরুদ্ধে শোকজ লেটার দিয়েছিল। তা সাদরে গ্রহণ করেছেন তাঁরা। অনেকে বাঁধিয়ে রেখেছেন। সরকারের রক্তচক্ষুকে ভয় না পেয়ে তাঁরা যে কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছেন, শোকজে তা স্পষ্টভাষায় লেখা রয়েছে। সাত দিনের অনেক আগেই তাঁরা উত্তর দিয়েছেন। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আজ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরাসরি বোর্ডকে না দিলেও হবে। জেলার ডিআইকে দিলেই হবে। হার্ড কপি হোক বা সফট কপি হোক দিতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে কোন আগের সেই তেজ নেই বলে দাবি শিক্ষক মহলের। এমনকী নতুন বিজ্ঞপ্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়নি। প্রয়োজনে ডিআইয়ের কাছ থেকে উত্তর নিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সংগ্রামী যৌথমঞ্চের ডাকা ধর্মঘটকে (Strike) সমর্থন করে ১০ মার্চ রাজ্যের বহু শিক্ষিক-শিক্ষিকা অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল রাজ্য সরকার (State Government)। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকা ধর্মঘটে কতজন শিক্ষক-শিক্ষিকা অনুপস্থিত ছিলেন তার তালিকা বিভিন্ন জেলা থেকে চেয়েছিল রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা অনুপস্থিত ছিলেন। সব থেকে বেশি অনুপস্থিত ছিলেন কোচবিহার (Cooch Behar) জেলায়। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলাতেও লক্ষণীয়ভাবে অনুপস্থিতির সংখ্যা বেশি।
এছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনা (North 24 Parganas), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (South 24 Parganas) সহ কয়েকটি জেলাতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুপস্থিতি লক্ষণীয় ভাবে ধরা পড়েছে। তাঁদের নাম সহ তালিকা তৈরি করে শিক্ষা দফতর। তৃণমূল জমানায় সরকারি হুমকি উপেক্ষা করে কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছিলেন। সরকারি অফিসের সামনে পিকেটিং, মিছিল, মিটিং চালিয়ে গিয়েছেন ধর্মঘটীরা। নবান্ন থেকে জারি করা নির্দেশিকায় হুমকি দেওয়া হয়েছিল, শুক্রবার কেউ ছুটি নিতে পারবেন না। কাজে অনুপস্থিত থাকলে শোকজ করা হবে। একদিনের জন্য চাকরি ছেদ করা হবে। কিন্তু ধর্মঘটীরা সেই নির্দেশিকাকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। উল্টে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ওই নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে আইনি পথে যাবে বলে গতকালই জানিয়ে দিয়েছে। সিপিএম প্রভাবিত রাজ্য কোঅর্ডিনেশন কমিটিও এই কর্মবিরতির ডাককে সমর্থন করে পথে নেমেছে।