কলকাতা: দলীয় পদ থেকে অপসারিত তৃণমূল (TMC) নেতা কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) পাশে বিজেপির তাপস রায় (Tapas Roy)। বুধবার তিনি বলেন, কুণাল তো কিছু অন্যায় বলেনি। যা সত্যি, তাই বলেছে। উত্তর কলকাতায় তৃণমূলের মধ্যে ভূরি ভূরি বিক্ষুব্ধ আছে। কতজনের বিরুদ্ধে তৃণমূল ব্যবস্থা নেবে। তাঁর দাবি, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে উত্তর কলকাতার মানুষ জোট বেঁধেছে।
এদিন উত্তর কলকাতায় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি ক্লাবের রক্তদান শিবিরে এক মঞ্চে ছিলেন তাপস এবং কুণাল। তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসের স্থানীয় অনেক নেতাও হাজির ছিলেন অনুষ্ঠানস্থলে। এই অনুষ্ঠান যখন চলছিল, ঠিক তখনই উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ রোড শো করছিলেন। সেই মিছিলে হাজির ছিলেন না উত্তর কলকাতারই নেতা কুণাল। রক্তদান শিবিরের মঞ্চে তিনি এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়কে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। কুণাল বলেন, তাপসদার দরজা সব সময় মানুষের জন্য খোলা থাকে। তিনি মানুষের সেবা করেন। উত্তর কলকাতায় এবার ছাপ্পা ভোট হতে দেওয়া যাবে না বলে কুণাল জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, মানুষকে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে হবে।
আরও পড়ুন: সলমানের বাড়ির বাইরে গুলি: অভিযুক্তের মৃত্যু
এই ঘটনার পরই তড়িঘড়ি তৃণমূল বিবৃতি জারি করে কুণালকে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি কুণাল ঘোষ যে সব মন্তব্য করেছেন, সেগুলি দলের মতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে কুণাল অবশ্য নিরুত্তাপ। তিনি বলেন, আমি যখন দলীয় সূত্রে জানতে পারি, চিঠি টাইপ হচ্ছে, তার কিছুক্ষণ পর আমি ফোন অফ করে ঘুমিয়ে পড়ি। এখন ময়দানে হাওয়া খেতে যাচ্ছি। কুণাল বলেন, সিনিয়র নেতানেত্রীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরাই বলতে পারবেন। ভগবান তাঁদের মঙ্গল করুন। আমি বিভিন্ন জেলা থেকে দলীয় কর্মী, নেতাদের কাছ থেকে বহু শুভেচ্ছা পাচ্ছি। সকলে পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন মোবাইলে মেসেজ করে। কুণাল আরও বলেন, আমি তো নিজেই আগে দলীয় মুখপাত্র এবং সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়ে দিতে চেয়ে চিঠি দিয়েছি। আমাকে সরানোর প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে। তবে আমি এখনও কোনও চিঠি বা বার্তা পাইনি। প্রসঙ্গত, কুণালকে চিঠি দিয়েছেন ডেরেক ও ব্রায়েন। কুণাল তাঁকে কুইজ মাস্টার বলে কটাক্ষ করে বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতে চাই, তিনি কি জানেন, আমি সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়তে চেয়ে চিঠি দিয়েছি। আমি তৃণমূলের সৈনিক। তৃণমূলে ছিলাম, আছি, থাকার চেষ্টা করব। দল যখন যা দায়িত্ব দিয়েছে, তখন তা পালন করেছি। তিনি বলেন, আমি কি রক্তদান শিবিরে গিয়ে তাপস রায়ের সঙ্গে মারামারি করব, গুঁতোগুঁতি করব?
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া তাপস রায় বলেন, কুণাল তাঁর পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে। এটা তাঁদের দলের ব্যাপার। আমার কিছু বলার নেই। বলার নেই বলেও উত্তর কলকাতার এই প্রাক্তন প্রবীণ তৃণমূল নেতা উত্তর কলকাতার বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ এবং এবারের প্রার্থী সুদীপের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। সুদীপের সঙ্গে বিরোধের কারণেই তাপস দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তৃণমূলে কি সৌজন্য বা গণতন্ত্রের কোনও জায়গা নেই? আজ যে ক্লাবের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, সেখানে প্রতি বছর যাই। তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসের আরও অনেকে ছিলেন। ক্লাব তো আমাকে জিজ্ঞাসা করে কাউকে নিমন্ত্রণ করেনি।
তাপস বলেন, গত পুরসভা ভোটে উত্তর কলকাতার বহু ওয়ার্ডে রিগিং, ছাপ্পা ভোট হয়েছে। নাহলে এত ভোট, এত আসন পায় কী করে। গণতন্ত্রের কথা বলব। আর পুলিশ, দুষ্কৃতীর সাহায্য নিয়ে কাউন্সিলর, এমএলএ, এমপি হব, সেটা হয় নাকি। আমাকে সুদীপ কোনও কাজ করতে দেননি। তিনি অনেককে কাঠি করেছেন। পরেশ পাল, স্বর্ণকমল সাহাদের টিকিট দিতে বাধা দিয়েছেন। কুণাল যখন জেলে ছিল, তখন খ্যাক খ্যাক করে হাসতেন তিনি। তৃণমূল কতজনকে সাসপেন্ড করবে।
আরও খবর দেখুন