ইম্ফল: অশান্তির আগুনে জ্বলছে মণিপুর (Manipur)। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও জটিল হচ্ছে উত্তর-পূর্ব রাজ্যের পরিস্থিতি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার অভিযান (Operation) শুরু করল অসম রাইফেলস ও সেনাবাহিনী (Army)। সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে সেখানে সাম্প্রতিক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শনিবার মণিপুর সফর করবেন বলে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রাজ্যে নতুন সহিংসতার খবরের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলস মণিপুর জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ইম্ফল পূর্ব এবং চার্চন্দপুরের উভয় নিরাপত্তা দল দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলিকে প্রতিরোধ করেছিল, যেখানে কিছু সশস্ত্র লোক গুলি চালায়। তবে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি এবং পরবর্তী অভিযান চলছে। জানা গিয়েছে, সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু ও ইম্ফল উপত্যকা ঘিরে রাখা পাহাড়গুলিতে অভিযান শুরু করেছে অসম রাইফেলস ও সেনাবাহিনী। গভীর জঙ্গলে আত্মগোপন করে থাকা কুকি ও নাগা সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধেই এই অভিযান।
এর আগে শুক্রবার, মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং জানিয়েছিলেন যে রাজ্যে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী আনা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ), মণিপুর পুলিশ, মণিপুর রাইফেলস, ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন (আইআরবি) এবং গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিএফ) সমন্বয়ে গঠিত নিরাপত্তা কর্মী। 38টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হওয়ার বার্তাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান যে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে।তিনি জনগণকে হিংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে যাতে উত্তেজনা না ছড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি স্বাভাবিক পরিস্থিতি আনতে সরকারের প্রচেষ্টার প্রতি জনগণের সমর্থন চেয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে মিজোরাম সরকার (Government of Mizoram) মানবিক পদক্ষেপে নিয়েছে, মণিপুর থেকে অনেক বাস্তুচ্যুত শিশুরা মিজোরামে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই স্কুলগুলোতে যথাযথ নথিপত্র ছাড়াই তাদের ভর্তি করতে নির্দেশ দিয়েছে।
মণিপুরে ট্রাইবাল বা আদিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই নতুন কিছু নয়। কয়েকশো বছর ধরে তা চলছে। তবে এবার তা ভিন্ন মাত্রা ধারণ করেছে। এই আশান্তির পিছনে আছে মণিপুর হাইকোর্টের একটি নির্দেশ। মেতেই সম্প্রদায়ের লোকজন তাদেরকে তফসিলি উপজাতি করা দাবি করেছিল। এই দাবি বিবেচনা করে দেখার জন্য মণিপুর সরকারকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এর ফলে, কুকি-ঝাোমি ও টাংখুল নাগাদের মতো রাজ্যের সংখ্যালঘু আদিবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে। তারপরেই এই নির্দেশের বিরোধিতায় পথে নামে আদিবাসীরা। গত ৩ মে থেকে সে রাজ্যে দুই সম্প্রদায় কুকি-ঝোমি ও অন্য আদিবাসীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে চলছে।