নয়াদিল্লি: কতই বা বয়স ওদের? কারও বয়স ১০, কারও ১২, কারও খুব বেশি হলে ১৫। হিন্দুত্ব কী, এই বয়সে তাদের তা জানার কথাও নয়। কিন্তু আরএসএস তাদের মগজে হিন্দুত্বের কথা ঢুকিয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে ওদের মগজে মুসলিম বিরোধী বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা না হলে ওইটুকু বয়সের রোহন, পিন্টুরা বলতে পারে যে, মুসলিমরা আমাদের চরম শত্রু? ওদের বাবা-কাকারাও কেউ বজরং দলের সদস্য, কেউ আবার আরএসএস কিংবা হিন্দুবাহিনীর সক্রিয় সদস্য। বাড়ির ছেলেদর মগজ ধোলাইয়ে তাদের অবদানও কম নয়।
দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীতে হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে ওই কচিকাঁচাদেরও দেখা গিয়েছিল। তাদের কারও হাতে ছিল হকি স্টিক, কারও হাতে তরোয়াল, এমনকী কারও হাতে বন্দুকও ছিল। মুখে ছিল জয় শ্রীরাম ধ্বনি। জাহাঙ্গিরপুরীর জি ব্লকের এই বাসিন্দারা অধিকাংশই নিম্নবর্গের বাঙালি হিন্দু। রোহন, পিন্টুরা(নাম পরিবর্তিত) খোলাখুলিই সাংবাদিকদের জানিয়েছে, স্থানীয় আরএসএসের শাখা তাদের হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে যেতে বলেছিল।
আরও পড়ুন: Nadia Businessman Missing: আট লক্ষ টাকা-সহ নিখোঁজ চাকদহের পাট ব্যবসায়ী
জাহাঙ্গিরপুরীর গোষ্ঠী সংঘর্ষে এ পর্যন্ত যে ২৫ জনকে দিল্লি পুলিস গ্রেফতার করেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সুখেন সরকার। সুখেনের ভাই সুরেশ হিন্দুবাহিনী এবং বজরং দলের সক্রিয় সদস্য। সুরেশই বাড়ির ছোটদের হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে যেতে বলেছিল। সুরেশ বলে, আমরা বহুদিন ধরে অত্যাচারিত এবং নিপীড়িত। মুসলমানদের সায়েস্তা করার জন্য হনুমান জয়ন্তীর মিছিল করা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। নিজেদের হিন্দু বলতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা ধরা পড়েনি সুরেশের গলায়। তার আরও সাহসী মন্তব্য, ওইদিন জাহাঙ্গিরপুরীতে সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলে হিন্দুরা জেগে উঠত না। সুরেশকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লি পুলিস আটক করেছিল। পরে অবশ্য তাকে ছেড়েও দেয়। সুরেশ খোলাখুলি জানিয়ে দেয়, পরবর্তী প্রজন্মকে যুদ্ধ করার জন্য এখন থেকেই সে তৈরি করছে। দরকার হলে তারা এই ধর্মযুদ্ধে প্রাণ দিতেও পিছপা হবে না।
স্থানীয় সূত্রের খবর, জাহাঙ্গিরপুরীর জি ব্লকের এর আগে কখনও হনুমান জয়ন্তী পালন হয়নি। বরং এখানকার বাঙালিরা দুর্গাপুজো নিয়েই বেঁচে থাকে। এবারই প্রথম সরকার ভাইয়েরা কাছের একটা ছোট মন্দিরে হনুমানের মূর্তি নিয়ে আসে এবং হনুমান জয়ন্তীর মিছিলের আয়োজন করে। তাতে স্থানীয় সবাইকে যোগ দিতেও বলা হয়। সরকার পরিবারেরই এক সদস্য, দশম শ্রেণির ছাত্র জানায়, এবার তার বোর্ডের পরীক্ষা। কিন্তু জাহাঙ্গিরপুরীর সংঘর্ষের পর থেকে সে স্কুলেই যাচ্ছে না। হিন্দুত্বের জন্য পরীক্ষার মতো ক্ষুদ্র স্বার্থকে সে ত্যাগ করতে প্রস্তুত। তার হাতেও সংঘর্ষের দিন ধারালো অস্ত্র দেখা গিয়েছিল। ওর যুক্তি, মুসলিমরা যদি মহরমের সময় অস্ত্র নিয়ে মিছিল করতে পারে, তাহলে হনুমান জয়ন্তীতে আমরা কেন অস্ত্র হাতে নিতে পারব না।
আরও পড়ুন: Jhalda Murder: ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনে বিডিওকে জিজ্ঞাসাবাদ সিবিআইয়ের