নয়াদিল্লি: আজ দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের প্রথম মেগা বৈঠক। মূলত তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই এই বৈঠক হতে চলেছে। প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে সিপিএমও এই বৈঠকে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে। যোগ দেবে সিপিআইও। তবে বামফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত বাকি দুই দল আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক কী করবে, তা স্পষ্ট নয়। কংগ্রেস দলের তিন শীর্ষ নেতাকে বৈঠকে পাঠাবে। তাঁরা হলেন মল্লিকার্জুন খড়্গে, জয়রাম রমেশ এবং রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা।
সূত্রের খবর, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীর নির্দেশেই মল্লিকার্জুনরা বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। মমতা যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি বিরোধী একটা জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, তখন তাতে চিড় ধরানোর চেষ্টা করছে কংগ্রেস, এমন কোনও বার্তা যাতে না যায়, তার জন্যই সোনিয়া, রাহুল নেতাদের যেতে বলেছেন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, বিরোধী জোটের নেতৃত্বের রাশ যাতে কংগ্রেসের হাতে না থাকে, তার জন্যই মমতা এই বৈঠকের ব্যাপারে এত তৎপর। দিক কয়েক আগেই তিনি বিরোধী ২২ জন নেতা, নেত্রীকে চিঠি দিয়ে বুধবারের বৈঠকের কথা জানিয়েছেন। আগে থেকে কথা না বলে এককভাবে মমতা হঠাৎ এই চিঠি পাঠানোয় অনেকে ক্ষুব্ধ। তবু বিরোধী ঐক্যের ক্ষেত্রে তাঁরা যেন অন্তরায় না হয়ে ওঠেন, তা মাথায় রেখে তীব্র তৃণমূল বিরোধী দলগুলিও আজকের বৈঠকে শামিল হতে চলেছে।
বৈঠকের আগের দিনও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগরতলায় বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়ে কংগ্রেসকে তেড়ে সমালোচনা করেছেন। দলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, কাউকে না কাউকে তো বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধতে হত। তৃণমূল নেত্রী সেটাই করেছেন।
আরও পড়ুন: Murder: বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন দাদাকে, থানায় আত্মসমর্পণ ভাইয়ের
অনেক আগে থেকেই মমতা এবং তৃণমূলের তাবড় নেতারা বলে আসছেন, বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে কংগ্রেস আন্তরিক নয়, তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও আমরা তো চুপ থাকতে পারি না। এমনকী তাঁরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে আতাঁতেরও অভিযোগ করেছেন। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী নেতাদের হেনস্তা করা হচ্ছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসকে বিজেপি ছেড়ে দিচ্ছে বলেও তাদের অভিযোগ।
যদিও ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় ইডি তিনদিন ধরে রাহুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আজ যখন দিল্লি শহরের এক প্রান্তে বিরোধীদের বৈঠক চলবে, তখনও রাহুলকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবেন ইডি আধিকারিকরা। কংগ্রেসের এক রাজ্য নেতা বলেন, এরপরেও কি তৃণমূল আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে? তিনি বলেন, এত কিছুর পরেও মান অভিমান ভুলে আমরা বৈঠকে যাচ্ছি। প্রসঙ্গত, গত দুদিন ধরে রাহুলকে ইডির তলব নিয়েও তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলায় কংগ্রেসকে করা আক্রমণ করা হয়েছে।
আজকের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন অভিষেকও। তিনি মঙ্গলবার রাতেই আগরতলা থেকে দিল্লি উড়ে গিয়েছেন। বৈঠকে তাঁর উপস্থিতিও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মঙ্গলবার সিবিআই অফিসাররা তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে কয়েক ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। রাহুলকেও হেনস্তা করা হচ্ছে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। বৈঠকে কথায় কথায় কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে দিয়ে বিরোধীদের চাপে রাখার প্রসঙ্গ উঠতে পারে।
আরও পড়ুন: India-BanglaDesh: ফেসবুক আলাপ থেকে বিয়ে, মেলবন্ধন দুইদেশের
এদিকে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হতে চান না। মঙ্গলবার দিল্লিতে পা দিয়েই মমতা পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক সারেন। তিনি তাঁকে রাজি করাতে পারেননি। আসলে পাওয়ার বুঝতে পারছেন, নির্বাচনে জেতাটা কুকুরের লেজ সোজা করার মতো কঠিন কাজ। তাই তিনি প্রার্থী হওয়া থেকে দূরে থাকতে চাইছেন। তবে বিরোধী জোটের ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ রয়েছে। তাঁর নিজের দলের অনেক নেতাকেও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি জেরবার করছে। রাহুলকে নিয়ে যখন টানাহেঁচড়া চলছে, তখন ইডি, সিবিআই যে তাঁকে নিয়েও টানাটানি করবে না, এমনটাও নয়। সেটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে এই প্রবীণ পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদকে।
আজকের বৈঠকেই বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে যাবে, বিষয়টা সেরকম নয়। আজকের বৈঠক থেকে হয়ত একটা কমিটি হবে। সেই কমিটি নাম চূড়ান্ত করবে। তবে মমতা রাজনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই সফল। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে তিনি আজ কনস্টিটিউশন ক্লাবে তাবড় বিরোধী নেতাদের হাজির করাতে পারছেন, এটাই বা কম কী? তিনি বোঝাতে চাইছেন, জাতীয় স্তরে বিরোধী জোট তৈরির ব্যাটন এখন তাঁর হাতেই। যদিও তিনি সব সময়ই বলেন, আমি নেতা হতে চাই না। কে নেতা হবেন, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেই দৌড়ে আমি নেই। আমি চাই বিজেপি বিরোধী একটা শক্তিশালী জোট। আজকের বৈঠকে সেই জোটের সলতে পাকানোর কাজ শুরু হতে চলেছে কি? রাজনৈতিক মহল অন্তত সেরকমই মনে করছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন একটা উপলক্ষ মাত্র। মমতার পাখির চোখ কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট।
আরও পড়ুন: Mid-Day-Meal: গরমের ছুটিতেও মিড-ডে মিল পাবে পড়ুয়ারা, জানাল শিক্ষা দফতর