কলকাতা: আজ থেকে ৯৬ বছর আগে আজকের দিনেই, ১৯ ডিসেম্বর কাকরি ট্রেন ডাকাতির (Kakori Train Robbery) মামলায় অভিযুক্ত আসফাকউল্লা খান, রাম প্রসাদ বিসমিল এবং ঠাকুর রোশন সিংয়ের ফাঁসি হয়েছিল। তার দুদিন আগে একই মামলায় ফাঁসি হয় রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ি নামে আরও এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর। ১৯২৫ সালে কাঁকরির এই ট্রেন ডাকাতিই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের (Hindustan Socialist Republican Association) (এইচআরএ) প্রথম বড় ধরনের হামলা। অভিযুক্ত ওই পাঁচ বিপ্লবী একটি ট্রেন লুঠ করেছিল। সেই ট্রেনে ব্রিটিশ ট্রেজারির জন্য টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য অর্থ সংগ্রহের তাগিদেই এইচআরএ ওই পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছিল। তার পরিণতিতে পাঁচ বিপ্লবীর ফাঁসি হয়। ব্রিটিশ শাসক ঘটনার পর ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালিয়ে এইচআরএ-র অনেক সদস্যকে গ্রেফতার করে। সাজা হয় পাঁচ স্বাধীনতা সংগ্রামীর।
১৯২০ সালে মহাত্মা গান্ধী অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, এই আন্দোলন হবে একেবারে অহিংস। সেখানে হিংসার কোনও স্থান থাকবে না। সত্যাগ্রহের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। চাপে ফেলতে হবে তাদের। কিন্তু দুই বছরের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে গেল উত্তরপ্রদেশের চৌরিচৌরার একটি ঘটনার ফলে। উন্মত্ত জনতা থানা আক্রমণ করে। থানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাতে ২২ জন পুলিশকর্মী মারা যান। তার আগেই পুলিশের গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর মুখ খাড়্গে, জোট বৈঠকে মমতার চমক
এই ঘটনার পরই জওহরলাল নেহরু বলেন, এরপর আর অহিংস আন্দোলন কী করে হবে। সেখান থেকেই গান্ধীজির সঙ্গে কংগ্রেস নেতাদের বিরোধের শুরু। তিনি অহিংস আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেন। এই আবহেই কিছু তরুণ গান্ধীজির বিপক্ষে গিয়ে তৈরি করলেন হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন বা এইচআরএ। মহাত্মার প্রতি হতাশা থেকেই কার্যত প্রতিষ্ঠা হয় এইচআরএ-র। রাম প্রসাদ বিসমিল এবং আসফাকউল্লা ছিলেন মূলত এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়াও এতে শামিল হন শচীন্দ্রনাথ বক্সি, যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগত সিং প্রমুখ। পরবর্তীকালে তাঁদের মধ্যে অনেকে অনুশীলন সমিতি গড়ে তোলেন। ১৯২৫ সালের ১ জানুয়ারি এইচআরএ এক ইস্তাহার প্রকাশ করে। তাতে বলা হয় সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে রিপাবলিক স্টেটস অফ ইন্ডিয়া গঠন করতে হবে। তারা সন্ত্রাসের জন্য সন্ত্রাস চায় না। তবে প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে হবে।
১৯২৫ সালের ৯ অগাস্ট লখনউ থেকে কাঁকরি যাওয়ার পথে একটি ট্রেনের উপর হামলা হয়। এই ট্রেনে ব্রিটিশ ট্রেজারির জন্য টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ট্রেন ডাকাতির ছক অনেক আগেই করা হয়েছিল। পূর্বপরিকল্পনা মাফিক রাজেন্দ্রনাথ আগে থেকেই ট্রেনে বসেছিলেন। তিনি আচমকাই ট্রেনের চেন টানেন। ট্রেন থেমে যায়। বিসমিল এবং আসফাক ট্রেনে উঠে পড়েন। তাঁরা ট্রেনের গার্ডকে মারধর করেন। তারপর ৪৬০০ টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালান। সরকার চিরুনি তল্লাশি চালায়। বিসমিল অক্টোবর মাসে ধরা পড়ে যান। এইচআরএ-র দুই সদস্যের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য আরও চারজন ধরা পড়েন।
১৯২৮ সালের সেই বিখ্যাত কাকরি ষড়যন্ত্র মামলায় পাঁচজনের ফাঁসি হয়। আজকের প্রজন্মের অনেকেই হয়ত রাম প্রসাদ, রাজেন্দ্রনাথদের মতো বিপ্লবীদের নামই শোনেননি। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁদের অবদান কম কিছু নয়। আজ সেই ১৯ ডিসেম্বর।
আরও অন্য খবর দেখুন