Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeScrollচার দফা দাবি সামনে রেখে অনশনে বাস্তবের ‘ব়্যাঞ্চো’
Sonam Wangchuk

চার দফা দাবি সামনে রেখে অনশনে বাস্তবের ‘ব়্যাঞ্চো’

লাদাখের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের আচরণ ‘গণতন্ত্রের বিমাতাসুলভ’

Follow Us :

লাদাখ: লাদাখের মানুষের সুযোগ সুবিধার জন্য কাজ করে যাওয়া মানুষটি হঠাৎই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বসেছেন ভারত সরকারের দিকে। চার দফা দাবি সামনে রেখে বাস্তবের ‘র‌্যাঞ্চো’ জানিয়ে দিয়েছেন, যত দিন না তাঁর সেই দাবি কেন্দ্র মানছে, তাঁর অনশন চলবে। তাতে যদি তাঁর মৃত্যু হয়, হবে। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদ, আন্দোলন থামবেন না। সিনেমার ‘র‌্যাঞ্চো’র মতোই জেদি বাস্তবের ‘র‌্যাঞ্চো’ সোনম ওয়াংচুক (Sonam Wangchuk)। ফলে প্রশাসন তাঁর প্রতিবাদে পাত্তা না দিলেও ইঞ্জিনিয়ার তথা শিক্ষাবিদ তথা সমাজকর্মী সোনমের অনশন (Sonam Wangchuk Hunger Strike) জারি রয়েছে। যা বুধবার ১৫ দিন পার করল। তাঁর চার দফা দাবির পুরোটাই তাঁর প্রিয় লাদাখের জন্য। কী এই চার দফা দাবি? সোনমের চার দফা দাবির প্রথমটি হল লাদাখকে রাজ্যের সম্মান দিতে হবে। এ ছাড়া লে এবং কার্গিল জেলার জন্য আলাদা আলাদা লোকসভা আসনেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

হিমাঙ্কের কাছাকাছি তাপমাত্রায় টানা ১৫ দিন ধরে অভুক্ত সোনম এখন কেমন আছেন? সেই খবর সিনেমার ‘র‌্যাঞ্চো’র স্টাইলেই দিয়েছেন সোনম। টুইটারে সোনম লিখেছেন, ‘‘এখনও রক্তচাপ ১২০/৭০, নাড়ির স্পন্দন ৭২, রক্তে অক্সিজেন ৯৪শতাংশ, রক্তে শর্করার মাত্রা ৭৫, কিটোন: ৩+, বুঝতেই পারছেন সুগার কমেছে, তার কারণ গত ১৪ দিন ধরে পেটে একটি দানাও যায়নি। আর কিটোন বেড়েছে তার কারণ শরীর নিয়মিত খাবার না পেয়ে এখন দেহে জমা মেদ থেকে প্রয়োজনীয় খাবার নিতে শুরু করেছে।’’ সোনম লিখেছেন, ‘‘আপনারা অনেকেই আমার সুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। অনেকে জানতেও চেয়েছেন আমি কেমন আছি। তাঁদের বলি, আমি স্রেফ বেঁচে থাকার চেয়ে বোধ হয় এখনও একটু বেশি ভাল আছি। আর দারুণ ভাল থাকার চেয়ে একটু কম।’’ সোনম তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে হালকাচালে কথা বললেও, তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের বক্তব্য, এখনও সোনম ঠিক আছেন বটে, কিন্তু অচিরেই চর্বি থেকে পাওয়া শরীরের খাবারের জোগান শেষ হবে। হিমাঙ্কের কাছাকাছি তাপমাত্রায় খুব শীঘ্রই অসুস্থ হয়ে পড়বেন তিনি। তার মধ্যে যদি সরকার সোনমের দাবিতে সাড়া না দেন তবে বিপদ বাড়বে সোনমের। যদিও শিক্ষাবিদের তাতে হুঁশ নেই।

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে ক্ষমা চাইল রামদেবের পতঞ্জলি

তাঁর দাবি, লাদাখের জন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং তাতে চাকরি দেওয়ার আলাদা প্রক্রিয়া বলবত করারও দাবি জানিয়েছেন সোনম। সোনমের তৃতীয় দাবি হল লাদাখের পরিবেশ রক্ষা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘লাদাখের দক্ষিণ দিকের পরিবেশ নষ্ট করছে খনি ব্যবসায়ীরা এবং বিভিন্ন শিল্প সংস্থা। আর উত্তরের সীমান্তে থাবা বসাচ্ছে চিন।’’ এই পরিস্থিতিতে তাদের আরও দুর্বল করে রাখছে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি। সোনমের অভিযোগ, লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে রেখেই আর দুর্বল করে দিয়েছে কেন্দ্র। হিমালয়ের কোলঘেঁষা এই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র এমনিতেই ভঙ্গুর। তার উপর এখানকার মানুষকে রক্ষা করার জন্য কোনও সরকার না থাকায় তা আরও বেশি বিপন্ন হয়ে পড়ছে। জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। তার জের টেনেই সোনম বলেছেন, পাশের রাজ্যে যখন গণতন্ত্র ফিরবে তখনও লে আর লাদাখে দিল্লি নিয়ন্ত্রিত আমলাতন্ত্রই চলতে থাকবে।

সোনমের চতুর্থ দাবি, লাদাখে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল নিশ্চয়তার নিরাপত্তা বলবৎ করতে হবে। সংবিধানের এই নিয়ম বলবৎ হলে দেশের আদিবাসী এলাকাগুলিকে ন্যূনতম স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়। এই এলাকাভুক্ত জমিগুলির জন্যও থাকে বাড়তি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। সোনম তাঁর অনশন মঞ্চে বলেছেন, দীর্ঘ চার বছরের টালবাহানার পর গত ৪ মার্চ কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, তারা লাদাখের মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারবে না। সোনমের অনশন শুরু হয়েছে তার ঠিক দু’দিন পর অর্থাৎ ৬ মার্চ থেকেই। সেই অনশন মঞ্চ থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও আক্রমণ করেছেন ওয়াংচুক।

লাদাখের শিক্ষাবিদ বলেছেন, ‘‘শুনতে পাই আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার আশা করেন। কিন্তু আমি যতদূর জানি এই পুরস্কারের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় প্রাপকের চারিত্রিক সততা এবং ন্যায়পরায়ণ মনোভাবকে।’’ সোনম এ-ও বলেছেন যে, ‘‘ভারত নিজেকে ‘গণতন্ত্রের মাতা’ বলে দাবি করে ঠিকই। কিন্তু লাদাখের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের আচরণ ‘গণতন্ত্রের বিমাতাসুলভ’। আপাতত কেন্দ্রের উদাসীনতার সামনে সোনমের সদিচ্ছার উপরেই ভরসা রাখছেন লাদাখের মানুষ। আর মনে মনে নিশ্চয়ই ভরসা দিচ্ছেন, ‘‘আল ইজ় ওয়েল’’ বলে।

অন্য খবর দেখুন

RELATED ARTICLES

Most Popular