কলকাতা: ৩২ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে মামলার শুনানি শেষ হল বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সু্প্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। রায়দান শুক্রবার। বুধবার এজলাস থেকে বেরিয়ে চাকরিহারারা জয় বাংলা স্লোগান দেন।
গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় বেনিয়মের অভিযোগ তুলে ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। তাঁর আরও নির্দেশ, তিন মাসের মধ্যে ওই ৩৬ হাজার পদে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। মঙ্গলবার অবশ্য আদালত জানায়, ৩৬ হাজার নয়, সংখ্যাটা হবে ৩২ হাজারের কাছাকাছি। টাইপের ভুলে তা ৩৬ হাজার হয়ে গিয়েছে। আদালত তা সংশোধন করে নেয়।
আরও পড়ুন: Egra Blast | এগরা কাণ্ডে এফআইআর, নেই বিস্ফোরক ধারায় আইন
২০১৪ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রাথমিকে টেট পরীক্ষা হয় ২০১৫ সালে। নিয়োগ হয় ২০১৬ সালে। তখন ৪২ হাজার ৫০০ চাকরি হয়। তার মধ্যেই বেনিয়ম হওয়ায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, ৩৬ হাজার চাকরি বাতিল হল। তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ৩৬ হাজার চাকরি যাওয়া মানে প্রায় দুই লক্ষ মানুষের বিষয়। যাঁদের চাকরি গেল, তাঁদের বলছি, হতাশা বা অবসাদে ভুগবেন না। সরকার আপনাদের পাশে আছে। সরকার ডিভিশন বেঞ্চে যাবে। তার আগে শুক্রবার আদালতের নির্দেশের দিনই সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল জানান, তাঁরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে। সেইমতোই পর্ষদ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। চাকরিহারাদের একাংশও মামলা করেন। দুটি মামলারই এক সঙ্গে শুনানি চলে বিচারপতি তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে।
মঙ্গলবার বেঞ্চ বলে, একক বেঞ্চ তো শিক্ষকদের নেকড়ের মুখে ফেলে দেয়নি। বেঞ্চ কতগুলি অনিয়ম দেখে ব্যবস্থা নিয়েছে। চাকরিহারাদের কিছু সুবিধাও দিয়েছে। কিন্তু যে অনিয়মের কথা বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে পর্ষদের ব্যাখ্যা কী, তা জানতে চায় আদালত। চাকরিহারাদের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই অভিযুক্তদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হল। পর্ষদ এবং চাকরিহারাদের তরফে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে একক বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছিল। বেঞ্চ কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি।
এদিনও ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দিতে রাজি হয়নি। বেলা তিনটে থেকে সন্ধ্যা পৌনে সাতটী পর্যন্ত দীর্ঘ শুনানি চলে। চাকরিহারাদের একাংশ পর্ষদের দিকেই আঙুল তোলে। শিক্ষকরা একক বেঞ্চের মামলায় যুক্ত ছিলেন না। পর্ষদ কেন তাঁদের বক্তব্য শোনার দাবি জানায়নি, এই প্রশ্ন তোলা হয়। আরও প্রশ্ন ওঠে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্যরা দুর্নীতিতে যুক্ত বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। তাই বলে শিক্ষকরাও দুর্নীতিতে যুক্ত, এই সিদ্ধান্ত কী করে হল।