কাটোয়া: যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাঠের তৈরি ঢাকের দিন শেষ। এখন লোহার তৈরি ঢাকে বোল তুলছে ঢাকীরা। এই ঢাক প্রথম তৈরি হয় কাটোয়া শহরের মাধবী তলায়। যা আজ সারা বাংলা ও বাংলার বাইরে খ্যাতি লাভ করেছে। হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরই বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। নাওয়া, খাওয়া ভুলে ঢাক তৈরিতে ব্যস্ত কাটোয়ার ঢাক তৈরির কারিগরেরা। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া শহরের মাধবী তলায় কান পাতলেই শুধু ঠুকঠাক আওয়াজ শোনা যায়। কারণ পুজো যে এগিয়ে আসছে, হাতে আর সময় নেই। ডেলিভারি দিতে হবে ক্রেতা দের লোহার তৈরি ঢাক।
বছর দশেক আগেএই এলাকার লোহার সামগ্রী প্রস্তুত কারবারি উত্তম দাসের বাড়িতে বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে এক বয়স্ক ঢাকি ঢাক বাজাতে আসেন। কিন্তু সে কাঠের ঢাকের ওজনে তাঁর সমস্যা হতে থাকে। সেই সমস্যার কথা উত্তমকে সেই ঢাকি জানান। তখন উত্তম ঠিক করেন হালকা ওজনের কীভাবে ঢাক প্রস্তুত করা যায়। এরপর তিনি চেষ্টা করেন ঢাকের আকারে প্রস্তুত করেন লোহার ঢাক। উত্তমের প্রথম প্রস্তুতে লোহার ঢাক সারা ফেলে দেয় কাটোয়ায়। তাঁর তৈরি এই লোহার ঢাকে নজর পরে কাটোয়ার বাকি লোহার সামগ্রী প্রস্তুতকারি ব্যবসায়াদের। এরপর থেকেই কাটোয়া শহর জুড়ে এলাকার কুড়ি থেকে ২৫টি লোহার সামগ্রী প্রস্তুতকারি ব্যবসায়ীরা তৈরি করতে থাকেন লোহার তৈরি ঢাক।
আরও পড়ুন:এখনই থামছে না বৃষ্টি, কী বলছে হাওয়া অফিস, পড়ুন
এই ঢাক দামে ও ওজনেও অনেক কম। ঢাকের আওয়াজ কাঠের ঢাকের আওয়াজের থেকে অনেক গুণ বেশি ভালো। সুতরাং কাঠের ঢাকের বদলে বাজারে এল লোহার ঢাক। কাঠের একটি ঢাক তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় এক মাসের কাছাকাছি। একটি গাছের আস্ত গুড়িকে কুরে কুরে তৈরি হয় কাঠের ঢাক। যার ফলে তার দাম হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। লোহার ঢাক তৈরি করতে সময় লাগে একটি কারিগর দিনে তিন থেকে চারটি ঢাক তৈরি করে। লোহার ঢাক বাজারে বিকচ্ছে মাত্র ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। সুতরাং কাঠের ঢাক বাদ, এখন লোহার ঢাকের উপরেই আস্থা ঢাকিদের। কাটোয়ার লোহার ঢাক জেলা থেকে বেরিয়ে রাজ্য এমনকী ভিন রাজ্যেও বাইরে পাড়ি দিয়েছে।
১২ মাস এই ঢাক তৈরি হলেও বাঙালীর দুর্গাপুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কাটোয়ার মাধবী তলার এই দোকানগুলোতে বেড়ে যায় কাজের চাপ। কাঠের তৈরি ঢাকের ওজনের ভার এখন লোহার তৈরি ঢাকে কমে যাওয়ায় ঢাকিরা একটানা অনেকক্ষণ ধরে বাজাতে পারেন। পাশাপাশি দাম কম হওয়ায় চাহিদা এখন লোহার ঢাকের অনেক বেশি।