কলকাতা: মোদি (Narendra Modi) আমলে দেশের ব্যাঙ্কগুলো রাইট অফ করার নামে কর্পোরেটকে উপহার দিয়েছে ১২ লক্ষ কোটি টাকা। বিশ্বের নানা দেশের তুলনায় আনাদায়ী ঋণ সর্বোচ্চ ভারতে। কর্পোরেট লুটপাটে মোদি সরকার নীরব কেন, উঠছে প্রশ্ন।
২০০৭ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (Reserve Bank) সার্কুলার অনুসারে কোনও ঋণ নন পারফর্মিং অ্যাসেট বা এনপিএ (NPA)-তে পরিণত হবে যখন টানা ৯০ দিন যাবৎ ঋণগ্রহীতা ঋণ ও সুদের কিস্তি শোধ করবেন না। আবার কয়েক বছর ধরে ঋণ ফেরত না পাওয়ার ব্যাপারটা চললে ওই ঋণ ব্যাঙ্কের চালু খাতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বা রাইট অফ করা হয়। প্রথা হল, রাইট অফ করার পরেও ওই ঋণের যতটা সম্ভব উদ্ধার করার চেষ্টা চলে, কিন্তু বাস্তবে খুব কমই ব্যাঙ্কে ফিরে আসে। অনেকেই অভিযোগ করেন, পছন্দের কর্পোরেটকে সুবিধা করে দেবার জন্যই ঋণ রাইট অফ করা হয়, উদ্ধারের সিরিয়াস প্রচেষ্টা চালান হয় না। এই কারণেই ভারতের এনপিএ বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন: Vande Bharat Express | রাজ্যবাসীর জন্য সুখবর, আরও ২টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
আকাশ ছুঁয়েছে এনপিএ
২০১৪-১৫ থেকে ২০২২-২৩, এই আট বছরে অনাদায়ী ঋণ বা এনপিএ হয়েছে ৬৬.৫ লক্ষ কোটি টাকা। অনাদায়ী ঋণের মধ্যে সাড়ে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা রাইট অফ বা চলতি খাতা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এই তথ্য সংসদে জানিয়েছেন। সাধারণত মুছে দেওয়া ঋণের সামান্য অংশই পুনরুদ্ধার করা যায়। যদি খুব ভালো হয়, তবে ২০ শতাংশ উদ্ধার হতে পারে। সেক্ষেত্রে অনাদায়ী ঋণের ৮০ শতাংশ বা প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা আইনি ভাবেই ব্যাঙ্কগুলো কর্পোরেটদের দিয়ে দিচ্ছে
আইএমএফ (IMF) ২০২১ সালের রিপোর্টে জানাচ্ছে, ব্রিটেন (Britain) ও আমেরিকায় এনপিএ (NPA) মোট ঋণের ১ শতাংশ, কানাডায় ০.৪, দক্ষিণ কোরিয়ায় ০.৩, সুইজারল্যান্ডে ০.৭, ইতালিতে ৩ শতাংশ। রাশিয়ায় এই অনুপাত ৮ শতাংশ। ভারতে অনাদায়ী ঋণের অনুপাত কীরকম?
ভারতে মোট ঋণে অনাদায়ীর অনুপাত। ২০০৯ থেকে ২০১৪, ইউপিএ আমলে এনপিএ ছিল ১.৯৩ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে অনাদায়ী ঋণ বেড়ে হয়েছিল প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকা, ২০১৮-তে তা দাঁড়ায় ৯.৬৩ লক্ষ কোটি টাকায়। মোদি জমানার ৮ বছরে মোট এনপিএ সাড়ে ৬৬ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মোট ঋণে অনাদায়ীর অনুপাত ছিল ৪.১ শতাংশ, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর হয়েছে ১২.১৭ শতাংশ
বিপুল অনাদায়ী ঋণ রাইট অফ করায় কমছে ব্যাঙ্কগুলির লাভ।
দেশে কোটি কোটি কৃষক ঋণগ্রস্ত। ১৯৯০ সালে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ প্রথম কৃষি ঋণ আংশিক মকুব করেন। খরচ পড়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। ২০০৮ সালে প্রথম ইউপিএ সরকার (UPA Government) কৃষি ঋণ মকুব করে। খরচ হয় প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে বিপুল সংখ্যক কৃষিজীবী ঋণভারে ভীষণ চাপে, উঠছে কৃষিঋণ মকুবের দাবি। সে দাবিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে বন্ধু কর্পোরেটদের ১২ লক্ষ কোটি টাকার বড় অংশ উপহার দেওয়াটা দেশের অর্থনীতিকেই দুর্বল করছে, মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞরাই।