Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভমোদি রাজত্বের দশ বছর, হিসেব নিকেশ

মোদি রাজত্বের দশ বছর, হিসেব নিকেশ

আসুন এই দশ বছরের ভুল শুধরিয়ে আমরা...

Follow Us :

দশটা বছর পার হতে চলল বা বলা ভালো পার হয়েই গেল। ২০১৪ থেকে ২০২৪। ভারতবর্ষের রাজনীতি ১৮০ ডিগ্রি টার্ন। পরিবর্তন এবং পরিবর্তন। কংগ্রেসের মিলিজুলি সরকার থেকে বিজেপির ৩০৩, থ্রি নট থ্রি। বিরোধীরা ছত্রভঙ্গ। বাম সংসদীয় ধারার সব থেকে বড় ভরসা সিপিএম হেরে গেল বাংলায়, ত্রিপুরায়। কেবল হার নয় জনভিত্তি খোয়াল। ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা সোজা হয়েও দাঁড়াতে পারছে না। দশ বছর আগে অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটিয়েছিল বিজেপি অমিত শাহ নরেন্দ্র মোদি। সেই অশ্বমেধের ঘোড়ায় টান, রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির পিছু হঠা, আবার এগিয়ে যাওয়া, এমনটাই চলছে। কেন্দ্রের সরকার বিজেপির, আরএসএস-এর নেতৃত্বে তারা হিন্দুরাষ্ট্রের পথে চলেছে, দেশকে ঠেলে দিচ্ছে আরও আরও বেশি মেরুকরণের দিকে। ৭০-এর মাঝখান থেকে যে নেতাদের উত্থান তারা অস্তমিত। মুলায়ম, লালু রাজনীতির উঠোনের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে, নেই করুনানিধি, জয়ললিতা, ফার্নান্ডেজ, চন্দ্রশেখর, ভিপি সিং। শরদ পাওয়ার এখনও রাজনীতিতে কিন্তু তাঁর পাওয়ার নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ মহারাষ্ট্রেই, দল ভেঙে গেছে। বিজেপির একদা সহযোগীরা অনেকেই বিজেপির সঙ্গে নেই বা দূরত্ব রাখার চেষ্টা করছে। এরকম একটা অবস্থায় নিশ্চিতভাবেই উঠে আসবে নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতা। বামেদের বাদ দেওয়াই ভালো। কারণ তলার সারিতে সাকুল্যে মীনাক্ষী, শতরূপ কলতান ইত্যাদি ছাড়া সেখানেও নতুন মুখ নেই। এ দশ বছরে জাতীয় রাজনীতিতে বামেদের বৃদ্ধ পক্ককেশ ছাড়া অন্য মুখ তো চোখে পড়েনি। ছিল কানহাইয়া কুমার, সেও এখন কংগ্রেসে। অন্য দিকে যেখানে তাকাবেন সেখানেই এই নেতার ছেলে ওই নেতার মেয়ে, সেই নেতার ভাইপো বা কোনও নেতার জামাই। দেশটা প্রাচীন মোড়লদের রাজনীতিতে চলে গেছে ধীরে ধীরে বা তেমনটাই বানানো হয়েছে। ফারুক আবদুল্লার ছেলে ওমর আবদুল্লা, মুফতি মহম্মদ সইদের মেয়ে মেহবুবা মুফতি, বিজয়া রাজে সিন্ধিয়ার মেয়ে বসুন্ধরা রাজে, যশোধরা রাজে, সঞ্জয় গান্ধীর ছেলে বরুণ গান্ধি, বসুন্ধরা রাজের ছেলে দুষ্মন্ত সিং, প্রমোদ মহাজনের মেয়ে পুনম মহাজন, গোপীনাথ মুন্ডের মেয়ে পঙ্কজা মুন্ডে, রাজনাথ সিংয়ের ছেলে পঙ্কজ সিং, ডঃ করণ সিংয়ের ছেলে অজাতশত্রু সিং, যশবন্ত সিনহার ছেলে জয়ন্ত সিনহা, প্রকাশ সিং বাদলের ছেলে সুখবীর সিং বাদল, হরসিমরত কৌর, বিজু পট্টনায়কের ছেলে নবীন পট্টনায়ক। এর পরে কে? জানা নেই, মায়াবতীর জায়গায় এক ভাইপো আকাশ আনন্দ, ধূমল সিংয়ের ছেলে অনুরাগ ঠাকুর, চন্দ্রশেখরের ছেলে নীরজশেখর, কে সি রাওয়ের ছেলে কে টি রামা রাও, মেয়ে কে কবিতা, ভাইপো হরিশ রাও, চন্দ্রবাবু নাইডুর ছেলে লোকেশ নারা, ওয়াই এস আর রেড্ডির ছেলে জগনমোহন রেড্ডি, মেয়ে শর্মিলা, সালাউদ্দিন ওয়েসির দুই ছেলে আসাদুদ্দিন, আকবরাউদ্দিন ওয়েসি।

রাজীব গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধি, মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি, তরুণ গগৈয়ের ছেলে গৌরব গগৈ, রাজেশ পাইলটের ছেলে শচীন পাইলট, মাধব রাও সিন্ধিয়ার ছেলে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, মুরলী দেওরার ছেলে মিলিন্দ দেওরা, সুনীল দত্তের মেয়ে প্রিয়া দত্ত, মাধব সিং শোলাঙ্কির ছেলে ভরত সিং শোলাঙ্কি, শামসের সিং সুরজেওয়ালার ছেলে রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, সন্তোষ মোহন দেবের মেয়ে সুস্মিতা দেব, প্রণব মুখার্জির মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি, ওমেন চন্ডির ছেলে চন্ডি ওমেন, এ কে আন্টনির ছেলে অনিল কে আন্টনি, শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ দীক্ষিত, জিতেন্দ্র প্রসাদের ছেলে জিতেন প্রসাদ, সইফুদ্দিন সোজের ছেলে সলমান সোজ, শঙ্কর রাও চ্যবনের ছেলে অশোক চব্যন, মুলায়ম সিং যাদবের ছেলে অখিলেশ যাদব, বউমা ডিম্পল যাদব, লালু যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব, রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ পাসোয়ান, করুণানিধির ছেলে এম কে স্টালিন, মেয়ে কানিমোঝি, শরদ পাওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া শুলে, ভাইপো অজিত পাওয়ার, শিবু সোরেনের ছেলে হেমন্ত সোরেন, বাল ঠাকরের ছেলে উদ্ধব ঠাকরে, নাতি আদিত্য ঠাকরে, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী দশকে এনারা আমাদের দেশের নেতা, সম্ভবত আগামী ২০ বছর পরে এদেরই নাতিপুতিরাই হবেন আমাদের নেতা। অর্থাৎ রাজনীতি এক প্রফেশন যা বাপকেলে সম্পত্তির মতো বাবা ছেলেকে দেবে, ছেলে তার ছেলেকে। ভারতবর্ষ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ, সারে জঁহা সে অচ্ছা। জয়হিন্দ। বন্দেমাতরম।

আরও পড়ুন: শীতকাল এসে গেছে সুপর্ণা, নির্বাচনও আসছে

ভারতের অর্থনীতি এই দশকে দেখল চরম উত্থান আবার চরম পতনও। দশকের শুরু- বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ – ১০ শতাংশ চরম সফলতা. দশকের শেষ- বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৪.৫ শতাংশ, এখন একটু উঠে ৬ শতাংশের এপাশ, ওপাশ। প্রাক্তন অর্থনৈতিক সহায়ক কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যম বলছেন, আসলে ৫ শতাংশ, বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলছেন ৪.৫ শতাংশ। চরম ব্যর্থতা। বেকারত্বের হার দশকের শুরু- ৩.৫ শতাংশ, দশকের শেষে বেকারত্বের হার- ৬.১ শতাংশ, এই সংখ্যাটা গত ছয় দশকের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ। এই মুহূর্তে ভারতের অর্থনীতি পরিকাঠামোগত মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

দশ বছরের শাসনকাল সাক্ষী থাকল নোটবন্দির, ৯৯.৩ শতাংশ বাতিল নোট (৫০০ ও ১০০০) ফিরে এল ব্যাঙ্কের কাছে। অর্থনীতির ভাষায় ব্যাপক ক্ষতি, এবং দেশের বার্ষিক বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করল। অর্থনৈতিক বর্ষ ২০১৫-১৬ বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ৭.১ শতাংশ। নোটবন্দির পরে ২০১৬-১৭ অর্থনৈতিক বর্ষে বার্ষিক বৃদ্ধির হার নেমে দাঁড়ায় ৬.৭ শতাংশ। নোটবন্দির কারণে মোট ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা ও চাকরি চলে যায় অগণিত মানুষের।

দেশের অর্থনীতি সাক্ষী থাকল বহু প্রতীক্ষিত জিএসটি কার্যকর হওয়ার। শঙ্খ বাজিয়ে মাঝরাতে জিএসটি এল। কিন্তু জিএসটি চালু হওয়ার আগে যে সমস্ত পূর্ব পরিকল্পিত সাবধানতা অবলম্বনের কথা জিএসটি কাউন্সিলে উল্লেখ ছিল সেই সাবধানতার একটিও কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ না করায় ও আচমকা জিএসটি চালু করে দেওয়ার জন্য ভারতের অর্থনীতিতে ধ্বস নেমে আসে। নতুন করে কর্মহারা হয় অগণিত মানুষ।

কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রক প্রথম একটা অর্থনৈতিক বছরের (১.৪.২০১৭- ৩১.৩.২০১৮) জন্য জিএসটি অ্যাক্ট সেকশন ৯ (৪) অর্থাৎ রিভার্স চার্জ মেকানিজম (যে প্রক্রিয়াতে জিএসটি পরোক্ষ কর হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যক্ষ করের মতো ব্যবহার করে, সাপ্লায়ার জিএসটি নথিভুক্ত নয়, ক্রেতা জিএসটি নথিভুক্ত) স্থগিত রাখলেও পরের অর্থনৈতিক বছর ১.৪.২০১৮ থেকে পুনরায় রিভার্স চার্জ মেকানিজম চালু করা হয় ও অর্থনৈতিক মন্দার গভীরে প্রবেশ করতে শুরু করে ভারত। এই জিএসটি আচমকা ও পূর্ব নির্ধারিত সাবধানতাগুলোকে মাথাতেই রাখেনি, না দিয়ে চালু রাখার জন্যই বার্ষিক বৃদ্ধির হারকে ১ পয়েন্ট কমিয়ে দিয়েছে। ভারতের সামগ্রিক ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত। NPA, Non Performing Assets মোট valuation আজ এখন, এই মুহূর্তে ₹9.2 lakh crores, অর্থাৎ $135 billion, অর্থাৎ 9.5 % of bank Assets. The highest ratio of any major economy in the world, by far। এই দশ বছরেই আমরা বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি মেহুল চোকসি সমেত গুচ্ছ ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্কের টাকা মেরে পালিয়ে যেতে দেখেছি। এই দশ বছরেই বিশ্বের অন্যতম ধনীদের তালিকায় ভারতের ৭ জন ব্যবসায়ীদের নাম উঠেছে, তালিকার প্রায় শীর্ষে গৌতম আদানি, মুকেশ আম্বানির নাম। গৌতম আদানির রাইজ তো রকেট গতিতে, চোখধাঁধানো ম্যাজিকের মতো।

এই দশ বছরেই বিশ্বের সবথেকে দামি বাড়ি তৈরি শেষ হল, মুকেশ আম্বানির এই বাড়ি কমবেশি ১৭০ কোটি টাকায় তৈরি। এই দশ বছরেই ম্যাল নিউট্রিশনে মানে সোজা বাংলায় না খেতে পেয়ে ভারতবর্ষে মৃত শিশু বিশ্বের তালিকার শীর্ষে। এই দশ বছরেই বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রায় সবক’টাই আমাদের সামনে। তিন তালাক নিষিদ্ধ আইন তারা পাশ করেছে, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদ ভাঙা বেআইনি বলার পরেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মন্দির ওহি বনেগা। এই দশ বছরেই এল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন যা নিয়ে দেশ উত্তাল। স্বাধীনতার পর সম্ভবত এই প্রথম মানুষ রাস্তায় নেমে সংবিধানের ভূমিকা পাঠ করল, সংবিধান রক্ষার শপথ নিল। এতদিন অনালোচিত সংবিধান নেড়েচেড়ে দেখছেন আম আদমি। এতদিন পর এই প্রথম মানুষ রাস্তায় তেরঙ্গা ঝান্ডা নিয়ে দল মতের তোয়াক্কা না করেই, মানুষ রাস্তায় জলের খাদ্যের চাকরির দাবিতে নয়, সংবিধান রক্ষার দাবিতে নামলেন।

এবার আসুন অন্য কথায়, যা হয়েছে তা তো হয়েই গেছে এবার সামনের দশ বছরে আমরা কী চাইব? চাইব সেটাই যা চেয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ হাতে করে লড়েছিলেন যাঁরা। ব্রিটিশ আমলে চাল ডাল ছিল না এমন তো নয়। মানুষ চেয়েছিল স্বাধীনতা। মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা। আজকে ভারতের দিকে তাকিয়ে দেখুন, কাশ্মীর এখনও অবরুদ্ধ, নতুন করে যোগ হয়েছে মণিপুর। উত্তরপূর্ব জ্বলছে। সরকারি কর্মচারীরা আইন অমান্য করছেন অসমে। ইন্টারনেট বন্ধ এখনও কাশ্মীরে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে গণমাধ্যমকে। তাই প্রথমেই চাইব মত প্রকাশের স্বাধীনতা। ৭৫টা বছর কেটে গেল ৪৫ শতাংশ মানুষ দু’ বেলা খেতে পায় না। কাজেই আমাদের দ্বিতীয় চাহিদা প্রত্যেকের পেটে ভাত। কেউ খাবে আর কেউ খাবে না তা হবে না তা হবে না। একটা রীতির কথা বলি। আফ্রিকার জুলু উপজাতির কিছু বাচ্চাদের দাঁড় করানো হল। তারপর কিছুটা দূরে ভালো খাবার রাখা হল। তারপর তাদের বলা হয়েছিল, দৌড়ে যাও যে আগে যাবে সে বেশি খাবার পাবে। বাচ্চারা বলল ‘উবুন্তু’। তারপর হাত ধরে সবাই খাবারের কাছে এসে খাবার ভাগ করে খেল। উবুন্তু তাদের এক প্রথা, জুলু ভাষায় উবুন্তু কথাটার মানে হল I am because we are, আমি আছি কারণ আমরা আছি। আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার দেশের বিরাট বিরাট পাবলিক মানিতে ব্যবসা চালানো ব্যবসায়ী উবুন্তু জানেন না, জানেন না যে আমরা আছি বলেই আমি আছি। কেবল খাবারের কথা যদি বলি তাহলে আমার দেশের খাদ্য বিতরণ এবং গ্রহণ মানে distribution and consumption এর ৮০ শতাংশ কেবল ১১ শতাংশ মানুষের কাছে। আরও সোজা করে বললে দেশের ১০০টা কমলালেবু হলে ৮০টা খায় ১১ জনে আর বাকি ২০টা খায় ৮৯ জন মিলে। ৪৭ থেকে এই distribution consumption of food এর ফারাক আরও বেড়েছে। আসুন রোজগারের কথায়। সবচেয়ে বেশি রোজগার আর সবথেকে কম রোজগারের ফারাক ৩৪০০ শতাংশ। মানে সবচেয়ে বেশি যে রোজগার করে সে যদি ৩৪০০ টাকা পায় তাহলে সব চেয়ে কম যে পায় সে পাবে ৩৪ টাকা প্রতিদিন। এবং এই রোজগার ও গ্রামীণ এলাকায় যারা চাষবাস করেন তাঁদের জন্য নয়, তাঁরা আরও কম পান। তাঁদের থেকেও কম পান আদিবাসী মানুষেরা।

এটাকেই কি স্বাধীনতা বলে? এর জন্যই কি প্রাণ দিয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা? শিক্ষা স্বাস্থ্যের কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। গত দশ বছরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কোনও সুযোগ না পাওয়া মানুষের সংখ্যা ২৯ শতাংশ। শিক্ষা এখনও বহু শিশুর কাছে অধরা। এখনও স্কুল ড্রপ আউট ২৭ শতাংশ ছাত্র। তারা খেতে কাজ করে, দোকানে কাজ করে। বাড়ি। মাথার ওপর ছাদ। এখনও কাঁচা ঘর বা ফুটপাথে খোলা আকাশের নীচে থাকে ৩৯ শতাংশ মানুষ। যাদের বাড়ির ছাদ আসবেস্টস বা খাপরির তাঁদের এই তালিকায় বাদ দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত যোজনা ইত্যাদির ঢাক বাজানোর পরও ২৯ শতাংশ মানুষের বাড়িতে টয়লেট নেই। মুকেশ আম্বানির বাড়িতে অবশ্য তাঁর পোষা কুকুরদের আলাদা আলাদা টয়লেট আছে।

কিন্তু ইতিহাস কি এই গতিপথেই চলে? চলতে থাকে? বিশ্ব ইতিহাস বলে, না, এভাবে চলে না। খেতে না পাওয়া মানুষগুলোকে ধর্ম জাত ভাষা আর সম্প্রদায়ে ভাগ করে কিছু মানুষ চিরটাকাল রাজ করে যাবে তা হবে না। নেতার ছেলে নেতা হবে, চাষির ছেলে চাষি রবে তা হয় না। কোনও এক অমোঘ মুহূর্তে এক টানে সব কিছু ছেড়ে মানুষ হাতে তুলে নেয় মহাকালের রশি, তারপরের ইতিহাস তো জানা।

এই বার্তা তৃপ্তি দেয় আমাদের,
যাদের, মন রাঙিয়েছে আগামী যুগের রাঙা আলোয়,
আগত যুগের ‘কামারাদেরিতে’ যারা মুখর,
আমরা তো জানি স্থির বিশ্বাস করি সবে —
ইতিহাসই দেয় আগুনের রঙে সে স্বাক্ষর |
শোনো শোনো তাই,
হে নবীন, হে প্রবীন, মজদুর, ওহে কৃষাণ,
ওহে মোটা সোটা বেঁটে খেটে খাওয়া কেরানীদল,
হে কাব্যে পাওয়া পালাতক ক্ষীণ কবির দল,
শিল্পীর দল, হে ধনিক, আর্য, অনার্য
করো শিরোধার্য— বৃদ্ধযুগের গলিত শবের পাশে
প্রাণকল্লোলে ঐ নবযুগ আসে |
প্রস্তুত করো তোমাদের সেই সব দিনগুলির জন্য
যখন প্রত্যেক সূর্যোদয়ে পাবে নবজীবনের স্তোত্র,
প্রখর প্রাণরৌদ্রের পানীয় তোমাদের আনন্দিত করবে,
(দুর্বলদের নয়|)
শতধা সভ্যতার পাশে,
লক্ষ কোটি ভগ্নস্তুপের পাশে,
বিদীর্ণ আকাশের নিচে,
উপদ্রুত ঘুমের শিয়রে,
ছিন্নভিন্ন পৃথিবীর বসন্তের পাশে,
লক্ষ লক্ষ নির্জন নিষ্পত্র কৃষ্ণচূড়ার পাশে,
দ্বিধাদীর্ণ জনগনমনে
মহা-আবির্ভাব |
স্বপ্ন জেগে উঠেছে, উঠেছে

মহা আশ্বাসের প্রবল নিঃশ্বাসে
দুর্দমনীয় ঝড় উঠেছে সৃষ্টির ঈশান কোণে |
উড়িয়ে দেবে দিগ্বিদিকে
শুকনো ধুলো
শুকনো পাতা
ঝরিয়ে দেবে |
অন্ধকারের দুর্গের সিংহতোরণ
গুড়িয়ে দেবে |
ইতিমধ্যে প্রস্তুত থাকো সবাই
যখন অত্যাচারীদের পতন—
চরম পতন হবে |
প্রাসাদে, বন্দরে,
বাহিরে, অন্দরে,
প্রতি গ্রামে, নগরে,
লক্ষ লক্ষ মনে, দেশে দেশান্তরে,
নীরন্ধ্র নির্মম পতন |

আসুন এই দশ বছরের ভুল শুধরিয়ে আমরা নিজেদেরকে সেই অত্যাচারীদের নির্মম পতনের জন্য তৈরি করে ফেলি।

RELATED ARTICLES

Most Popular