Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়েছে?

চতুর্থ স্তম্ভ: কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়েছে?

Follow Us :

পাড়ার ছেলে ছোকরারা একে বাওয়াল বলে, চরম মিথ্যে, জলজ্যান্ত মিথ্যেকে বাওয়াল বলে, আমি আর অন্য কোনও শব্দ পাচ্ছি না, মাফ করবেন, আজ মোদিজির বাওয়ালি নিয়েই আলোচনা। কী সেটা? ২০১৬, ২৮ ফেব্রুয়ারি বরেলিতে এক কৃষক জমায়েতে, দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদিজি বলেছিলেন, ২০২২ এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে, দ্বিগুণ। মানে আজ যে কৃষক বছরে ১০০০০ টাকা রোজগার করছেন, তিনি ২০২২ সালে ২ লক্ষ টাকা রোজগার করবেন। কিভাবে? বিভিন্ন স্কিমের কথা উল্লেখ করেছিলেন, এগ্রিকালচারাল ইকুইপমেন্ট ইনফ্রাস্টাকচারাল ইনভেস্টমেন্ট, এগ্রিকালচারাল লোন, সেচের ব্যবস্থা, কৃষকদের ফসলের সঠিক দাম দেওয়ার ব্যবস্থা, কৃষকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি পয়সা দেওয়ার ব্যবস্থা, সার এবং বীজের দাম কমানোর ব্যবস্থা, উন্নত প্রযুক্তি চালু করার ব্যবস্থা, এবং এসবের ফলে নাকি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে, এর আগে স্বাধীনতার পর থেকে নাকি কৃষকদের কথা কেউ ভাবে নি, উনি অনেক ভাবনা চিন্তা করে তিনি এই প্ল্যান করেছেন, এটা ছিল এক মস্ত বড় বাওয়াল।

ওনার সরকারের হিসেব বলছে, ২০১৩ – ২০১৪ তে কৃষকদের আয় ছিল মাসে ৭৩৯২ টাকা, ২০১৪ – ২০১৫ তে ৭৮৫৯ টাকা, ২০১৫ – ১০১৬ তে ৮০৫৮ আর ২০২০ – ২০২১ এ তা দাঁড়িয়েছে ৮৭৯৩ টাকায়, মূল্যবৃদ্ধির দরকে মাথায় রাখলে, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হওয়া তো দুরস্থান, প্রকৃত আয় কমেছে। এবং মজার কথা দেখুন দেশের প্রধানমন্ত্রী আপাতত উত্তরপ্রদেশে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করছেন, প্রত্যেক রাজ্যে নির্বাচনের আগে যা তিনি করে থাকেন, ইতিমধ্যেই অন্তত খান ৪০ জনসভায় তিনি ভাষণ দিয়েছেন, একবারের জন্যও তিনি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবার কথা মুখেও আনেন নি, কারণ তিনি যখন বলছেন, তখনই ভালো করেই জানতেন, এসব হল বিশুদ্ধ বাওয়ালি, ১০০% মিথ্যে, এমনটা হবার কোনও সম্ভাবনাও নেই, উনিও জানতেন, কিন্তু বলেছেন, এরকম বলাটা ওনার অভ্যেস। হঠাৎ সন্ধ্যেবেলায়, মিত্রোঁ ও ও ও, নোটবন্দি হল, কেন? কালাধন বাহর আয়গা, কী হল সব্বাই জানেন, উনি আর তা নিয়ে কোনও কথাই বলছেন না, হঠাৎ করে লকডাউন, লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের অবর্ণনীয় কষ্ট, মৃত্যু, উনি তারপর একবারও বলেছেন? যে এই ঘোষণা ভুল হয়েছে? জিএস টি, এখনও ভুগছে দেশের ছোট ব্যবসায়ীরা। মসনদে বসা ইস্তক দুটো কাজ উনি করেছেন, এক রামমন্দির, দুই দেশের লাভজনক সংস্থা বেচে দেওয়া, বাকি সবটাই বাওয়াল। বলেছিলেন কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করবেন, হয়েছে কি?

যোগী মন্ত্রিসভায় ৫১ জন মন্ত্রী ছিলেন, তারমধ্যে ৪২ জন এবার নির্বাচনের ময়দানে, এরমধ্যে ২৭ জন মন্ত্রী কৃষক, অন্তত খাতায় কলমে তাই লেখা আছে, এই ২৭ জনের গড় সম্পত্তি ৫.৯৪ কোটি টাকা, হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন, ৫.৯৪ কোটি টাকা। আম কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ হয়নি, কৃষক মন্ত্রীদের রোজগার ৭০ গুণ বেড়েছে, সারাদেশের প্রথম ১০টা রাজ্য, পঞ্জাব, হরিয়ানা, কেরল, গুজরাত, হিমাচল, উত্তরাখন্ড, গোয়া, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মেঘালয়ের কৃষকের রোজগার দ্বিগুণ হয়নি, কিন্তু বেড়েছে, উত্তরপ্রদেশে কৃষকের প্রকৃত রোজগার বরং কমেছে। আসুন, উত্তর প্রদেশের সেই কৃষক মন্ত্রীদের সম্পদের বাহার টা দেখে নিই, রমাপতি শাস্ত্রী, এনার আয় কৃষি আর বেতন থেকে, মোট সম্পত্তি, ৪.৪৪ কোটি টাকা। জয়প্রতাপ সিংহ, এনারও আয় কৃষি আর বেতন থেকে, মোট সম্পত্তি, ৭.৯৯ কোটি টাকা। সতীশ মহানা আয় কৃষি, বেতন আর ভাড়া থেকে, মোট সম্পত্তি ২৩.৭৯ কোটি টাকা, সূর্য প্রতাপ শাহী, কৃষি আর বেতন থেকে আয়ে আপাতত সম্পত্তি, ৬.৪৮ কোটি টাকা, লক্ষী নারায়ণ চৌধুরি, গ্যাসের ডিলারশিপ, কৃষি আর বেতন থেকে আয়, সম্পত্তি মোট ১১.৮৯ কোটি টাকা, রাজেন্দ্র প্রতাপ সিংহ, কৃষি বেতন ছাড়া অন্য ব্যবসা আছে, মোট সম্পত্তি ১২.৮২ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: সাইকেল, সাইকেল

মুকুট বিহারি বর্মা, কৃষি থেকে আয়, মোট সম্পত্তি ২.০৫ কোটি টাকা। আশুতোষ ট্যান্ডন, কৃষি, ব্যবসা বেতন থেকে আজকের সম্পত্তি ৮.৬৭ কোটি টাকা। সন্দীপ সিংহ কৃষি আর বেতন থেকে সম্পত্তি ১৪.৪৬ কোটি টাকা। অনিল শর্মা, কৃষি থেকে আয়, সম্পদ ১৬.৪৮ কোটি টাকা। প্রত্যেকে কোটি কোটি টাকার মালিক, যোগিজির জমানায় মন্ত্রী, এবং এরা প্রত্যেকে কৃষক, এঁদের আয় দ্বিগুণ নয়, কারোর কারোর ৭০ গুণ বেড়েছে, সেই উত্তর প্রদেশে, যেখানে কৃষকদের প্রকৃত আয় কমেছে। নীতি আয়োগ ২০১৮ তে স্ট্রাটেজি ফর নিউ ইন্ডিয়া রিপোর্ট দিয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল ১৯৯৩ থেকে ২০১৬, এই ২২ বছরে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়েছে, ২২ বছরে, তখন কৃষির গড় বার্ষিক বৃদ্ধি ৩.৩১ ছিল। ২০২২ – ২০২৩ এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার জন্য এই বৃদ্ধির হার হতে হবে অন্তত ১০.৪ %, হয়েছে ৫% এরও কম, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ও সি ই ডি র রিপোর্ট বলছে, কেবলমাত্র উচিত দাম না পাবার ফলে, ২০০০ থেকে ২০১৭ র মধ্যে কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে ৪৫ লক্ষ কোটি টাকা, কেবল কৃষকরা উচিত দাম পেলেও তাদের আয়ের অনেকটা সুরাহা হবে, বৃদ্ধি হবে।

বদলে প্রধানমন্ত্রী কী করছেন? বছরে ৬০০০ টাকা দিচ্ছেন কৃষকদের অ্যাকাউন্টে, সেও সবাই পাচ্ছে না, সেটা বলাই বাহুল্য। ৩৫০ গুণ, ৪০০ গুণ আয় বাড়ছে আম্বানি আদানিদের, লক্ষ কোটি টাকা মেরে দিয়ে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে কেটে পড়ছেন বিদেশে, তাদের টাকা ফিরিয়ে আনা তো দুরস্থান, রোজ নিত্য নতুন ব্যাঙ্ক ঘোটালার কথা বেরিয়ে আসছে, উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের রোজগার মাসে ৮ হাজার টাকা আর সেই উত্তর প্রদেশের কৃষকমন্ত্রী দের রোজগার গড়ে ৫.৯৪ কোটি টাকা, এটাই হল সত্যি, যে সত্যিটাকে ঢাকার জন্য ৮০ – ২০, কাশী মথুরার কথা আসছে, সাইকেল কে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে, জুড়ছেন কে? যিনি এই বাওয়ালির সূত্রপাত করেছেন, সেই নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী, দেশের প্রধান সেভক। দেশের অন্নদাতাদের নিয়ে এমন তামাশা দেশ আগে কখনও দেখে নি, অবশ্য এখানেই তো থেমে থাকেন নি মোদিজি, কৃষকদের বিরাট উন্নতির জন্য কৃষি বিল এনেছেন, কোনওরকম আলোচনার ধার ধারেননি, পাশ করিয়েছেন, কৃষি আইন তৈরি হয়েছে, কৃষকদের আরও জাঁতাকলে পেশাই করার ব্যবস্থা করেছেন, কৃষকরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, তাদের ওপর পুলিশ আর গুন্ডা লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যাতে রাজধানীতে না ঢুকতে পারেন, তার জন্য রাস্তাতে গজাল পোঁতা হয়েছে, ব্যারিকেড তৈরি হয়েছে, জলকামান দিয়ে, লাঠি আর টিয়ার গ্যাস দিয়ে অভ্যররথনা জানানো হয়েছে, আন্দোলনকারীদের খলিস্থানী, উগ্রপন্থী বলা হয়েছে, ৭০০ জনের বেশী কৃষক মারা গিয়েছেন, ৪ জনকে তো গাড়ির চাকার তলায় পিষে মারা হয়েছে, অভিযুক্ত আবার দেশের স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী।

এতকিছু করার পরে, কঁহি তো মেরে তপস্যা মে কমি থী বলে আইন ফেরত নিয়েছেন, আসলে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে একটু সামলানোর চেষ্টা করছিলেন, সামলানো যায় নি, যদি জিতে যান, তাহলে নিশ্চিত আবার সেই আইন ফিরিয়ে আনবেন, একথা নিজেপির নেতারা প্রকাশ্যেই বলছেন, এত কৃষক দরদি তিনি যে আইন তোলার সময়ে, এমএসপির আইন আনা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেবার পরেও, আজও সেই কমিটি তৈরি হয় নি। দেশের অন্নদাতাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী দেশের প্রধানমন্ত্রী, দেশের কৃষকদের এই দুর্ভাগা হালের জন্য দায়ী এই প্রধানমন্ত্রীই বাওয়াল দিয়েছিলেন, দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবার কথা বলেছিলেন, আজ সেই দলের মন্ত্রীরা কোটিপতি আর কৃষকরা হত দরিদ্র, এমন এক পটভূমিতে তাঁর একমাত্র ভরসা ঐ হত দরিদ্রদের, তাদেরই ট্যাক্সের পয়সায় দেওয়া ৫ কিলো চাল, ডাল, প্রকাশ্য জনসভায় বলছেন, এক ভিডিও দেখিয়ে বলছেন, এক নট সম্প্রদায়ের মহিলা বলেছেন, আমি মোদিজির নমক খেয়েছি, তাকেই ভোট দেবো।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: চৌকিদার চোর হ্যায়

সেই ভিডিওর বাকি অংশে সেই মহিলাই বলছেন, তিনি উজ্জ্বলা যোজনা গ্যাস পান নি, তিনি আয়ুস্মান ভারতের কার্ড পান নি, পাননি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা, সেই অংশের ভিডিওর কথা চেপে গেছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের টাকায়, মানুষের ট্যাক্সের টাকায় যা সামান্য কিছু বিতরণ করছেন তাকে তিনিও তাঁর নিজের দান বলে মনে করেন, মহিলা বলছেন আমি মোদিজীর নমক খেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী তা ফলাও করে জনসভায় বলছেন, বলতে গিয়ে তাঁর গলা কাঁপছে না, বলতে তাঁর লজ্জাও লাগছে না। আমরা কোন দেশে বাস করছি? দেশের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যে বলেন, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেন, সরকারি সাহায্যকে নিজের সাহায্য বলে প্রচার করেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন এক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েই আমাদের অন্তত ২০২৪ পর্যন্ত চলতে হবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Jyotipriya Mallick | হাড়-মাংস-কিডনি-লিভার, জামিনে বালুর হাতিয়ার
00:00
Video thumbnail
Lok Sabha election 2024 | কলকাতা টিভিতে মুখোমুখি সৌমিত্র খাঁ ও সুজাতা মন্ডল, কী বললেন শুনে নেব
00:00
Video thumbnail
Arjun Singh | বিবাহ তিরে বিদ্ধ অর্জুন সিং, অভিরূপ সিং অর্জুনের পুত্র দাবি সোমনাথ শ্যামের
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | '২৩ তারিখ ঘাটালের হিরোকে জিরো করবে', দেবকে নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শুভেন্দুর
00:00
Video thumbnail
Adhir Ranjan Chowdhury | 'হঠাৎ করে সমীকরণ বদলে যায় দিদির', কার্তিক মহারাজ ইস্যুতে অধীরের তোপ
02:39
Video thumbnail
Raj Bhavan | রাজভবনের ৩ কর্মীকে ফের তলব, হেয়ার স্ট্রিট থানায় হাজিরার নির্দেশ
02:02
Video thumbnail
Narendra Modi | 'ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশনকে অপমান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী', পুরুলিয়ায় মমতাকে নিশানা মোদির
11:22
Video thumbnail
Ghatal | ঘাটালে বিজেপির প্রচারে বাধার অভিযোগ, বিজেপি বিধায়ককে ঘিরে বিক্ষোভ তৃণমূল কর্মীদের
00:43
Video thumbnail
Curd | দইয়ের সঙ্গে খাবেন না এই ৫ খাবার!
01:21
Video thumbnail
Ghatal | ঘাটালে বিজেপির প্রচারে বাধার অভিযোগ তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে
00:53