Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে
Fourth Pillar

Fourth Pillar | বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে

আজ নজরুল বেঁচে থাকলে ইডির হাতেই গ্রেফতার হয়ে জেলে থাকতেন

Follow Us :

এমনিতে আমাদের বিচার ব্যবস্থা যে খুব দারুণ কিছু ছিল তা নয়, পুলিশ সমেত দেশের বিভিন্ন এজেন্সি সরকারে বসে থাকা শাসকদলের ইশারাতে চলেছে সে তো আজ নয়, বহুকাল ধরেই। সাধে কি আমাদের সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে সরকারের পোষা তোতাপাখি বলেছিল? কিন্তু সে আক্ষরিক অর্থেই হয়তো ছিলই তোতাপাখি, মানে সরকারের ইশারাতে কাজ করত। কিন্তু চক্ষুলজ্জা বলে একটা বিষয়ও ছিল, সে সরকারের ব্লাড হাউন্ড বা হাতে তরোয়াল কোতওয়াল ছিল না। এক ওই জরুরি অবস্থা বাদ দিলে বিরোধী সমস্ত রাজনীতির মানুষজন, তাঁদের ঘনিষ্ঠ বা তাঁদের অর্থসাহায্য করেন এমন ব্যবসায়ী বা বিরোধী মতামত পোষণ করে, বিরোধিতা করে এমন সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবী, এমনকী সরকারের সমালোচনা করে, কিছু ইস্যুতে ভিন্ন মত পোষণ করে এমন সাংবাদিক, সংবাদপত্র বা সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদক মালিকদের এরকম পাইকারি হারে জেলে পুরে রাখার ঘটনা এর আগে ঘটেনি। এবং একবার জরুরি অবস্থার কথা মনে করুন, প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতাকে রাজনৈতিক কারণেই গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে জোর করে সরকার ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছিল, দেশদ্রোহিতার কথা বলা হয়েছিল, তাঁরা জেলে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবেই ছিলেন। আজ ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা, প্রত্যেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে চোর বলে। হেমন্ত সোরেন কী করেছেন? চুরি করেছেন। কী চুরি? তার তদন্ত তো চলছে আজ বছর দুই ধরে, কোনও তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে? কিচ্ছু পাওয়া যায়নি, কিন্তু তিনি জেলে এবং নতুন আইন অনুযায়ী তাঁকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি চোর নন। আর একজন মুখ্যমন্ত্রী জেলে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে দিল্লি লিকার মামলাতে জেলে পোরা হয়েছে, সেই মামলা চলছে কত বছর ধরে? গত আড়াই বছর ধরে সেই মামলা চলছে, সেই মামলাতেই একজন ধৃতের বয়ানের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হল? সেই ধৃত নির্বাচনী বন্ড কিনে যথাস্থানে পুজো দিয়ে জামিন পেয়েছেন, বিবৃতিও দিয়েছেন। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে একটা প্রমাণও হাজির করতে পারেননি ইডি কর্তারা।

একজন শিল্পপতি বললেন আমি মহুয়া মিত্রকে, একজন সাংসদকে প্রচুর সুযোগ সুবিধে দিয়ে তাঁর সাংসদ আইডি পাসওয়ার্ড নিয়ে সংসদের ওয়েব সাইটে ঢুকেছি। প্রায় ৯০ শতাংশ সাংসদ ওই ওয়েবসাইটে গিয়ে সংসদে বিভিন্ন আলোচনার জন্য প্রশ্ন উত্থাপন করা ছাড়াও তাঁদের বিভিন্ন হিসেব নিকেশের কাজ তো নিজে করেন না, তার জন্য কেউ বা অনেকে থাকে, তাঁরা এই ওয়েবসাইটে ঢোকে, এবং তা যে বেআইনি তা কোথাও বলাও নেই। কিন্তু কেবল ওই শিল্পপতির বয়ানের ভিত্তিতে একন নির্বাচিত সাংসদের সদস্যপদ খারিজ করা হল কেবল তাই নয়, এখন তাঁকে সিবিআই ডাকছে, এরপরে ইডিও লাইনেই আছে। কিন্তু সেই শিল্পপতিকে জেরা করা হয়েছে? না। সেই শিল্পপতির ঘরে ইডি গেছে? না। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে? না। ধরুন গৌরকিশোর ঘোষ বা বরুণ সেনগুপ্তকে ওই জরুরি অবস্থার সময়ে গ্রেফতার করে জেলে পোরা হয়েছিল, কোন আইনে? মিসা, মেইনটেন্যান্স অফ ইন্ডিয়ান সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এ। মানে বলা হয়েছিল, ইন্দিরার ভারতবর্ষ ওনাদের লেখা আর বক্তব্যের ফলে গভীর সংকটে, তাই ওনাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আর আজ নিউজক্লিকের প্রবীর পুরকায়স্থ বা কলকাতা টিভির কৌস্তুভ রায় জেলে কেন? কারণ তাঁরা নাকি বিভিন্নভাবে পয়সা তছরুপ, চালান করা মানি লন্ডারিং ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত। মানে এরা সব চোর চোট্টা চিটিংবাজ অতএব এদেরকে জেলে পোরা হয়েছে। গতকাল মোদিজি এসে বলে গেলেন, এটা নাকি ট্রেলার, এরপরে আসল ছবি শুরু হবে। কৌস্তুভ রায় জেলে কেন?

সেই আষাঢ়ে গল্পের শুরু এক এফআইআর থেকে, ২ নভেম্বর ২০১৭তে রাজস্থানের জয়পুরে এক এফআইআর দায়ের করা হয়, মূলত টাকা তছরুপ, চিটিংবাজি, চিটফান্ডের মাধ্যমে মানুষের টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়া ইত্যাদি ধারায় অভিযোগের ভিত্তিতে ওই জয়পুর থেকেই গ্রেফতার করা হয় পিনকন স্পিরিটস লিমিটেড-এর মালিক মনোরঞ্জন রায়কে। এফআইআর ছিল আমাদের রাজ্যের খেজুরি থেকেও, তার বহু আগেই করা, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭তে দায়ের করা আর এক এফআইআর-এও একই অভিযোগ ছিল, সেটাও এই গ্রেফতারির সঙ্গে জোড়া হল। যথারীতি সার্চ হল, রেড হল বিভিন্ন দফতরে, বিভিন্ন ডকুমেন্টস সিজ করা হল, সেসবের ভিত্তিতে মামলা চলতে লাগল। ২০২০তে ৩ অক্টোবর বিচারকেরা রায় দিলেন, আজীবন কারাবাসের রায় ঘোষণা হল। সে রায়ে কী বলেছিলেন বিচারকেরা, আসব সে কথায়। কিন্তু এতবড় এক মামলায় যেখানে অপরাধীর আজীবন কারাবাসে সাজা শোনানো হচ্ছে যা প্রায় তিন বছর ধরে চলল, সেই মামলাতে কোনও দলিল দস্তাবেজে কি একবারের জন্য কৌস্তুভ রায়ের নাম বা তাঁর অন্য কোনও কোম্পানির নাম এসেছে? না, আসেনি। কোনও এক চিলতে কাগজেও এরকম কোনও তথ্য নেই। সেসব দলিল দস্তাবেজ আদালত দেখেছে, বাদী, বিবাদী পক্ষের উকিলেরা সেসব দস্তাবেজ নিয়ে সওয়াল করেছেন। না, একবারও সেই দলিল দস্তাবেজের কোথাও না ছিল কৌস্তুভ রায়ের নাম, না তাঁর কোনও কোম্পানির নাম। তো সেই দলিল দস্তাবেজ দেখে বিচারকেরা কী বলেছিলেন? এক চিট ফান্ড কোম্পানির কর্তা, মনোরঞ্জন রায়, মানুষের টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগে, ২০২০ অক্টোবরে আদালত তাকে দোষী বলে ঘোষণা করল। এই দীর্ঘ তিন বছরের তদন্ত বা আদালতে বাদী বিবাদীর সওয়ালে একবারের জন্যও কলকাতা টিভির নাম, কৌস্তুভ রায়ের নাম আসেনি, কোনও এক চিলতে কাগজেও সে নাম ছিল না।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | দেশের বেকারত্বই এই নির্বাচনে বিজেপিকে ডোবাবে

এই রায় দেওয়ার সময়ে বিচারকরা ওই মনোরঞ্জন রায় সম্পর্কে বলেছিলেন “Monoranjan Roy has intention to cheat from the very beginning so he did not keep proper legal system because the existence of such systems will be helpful for a clear and clean accounts. He told lies and took loans from the banks. The banks and the authorities had the duty to investigate before giving loans, in that case such irregularities would not be happened. Probably they were purchased by Monoranjan Roy. Monoranjan Roy intentionally created such irregularities so that it cannot be identified easily in case of legal enquiries and legal claim or in investigation. খুব সাফ জানিয়েছিলেন যে এই মনোরঞ্জন রায় একজন ঠগ, প্রতারক, হিসেবের খাতায় যতরকমের গন্ডগোল করা সম্ভব উনি ইচ্ছাকৃতভাবেই করেছেন। বলেছিলেন, the activities of Monoranjan Roy is full of irregularities and he had intention to cheat the public, banks and creditors from the very beginning and his submission and activities are full of contradictions. কেবল সাধারণ মানুষ নয়, ব্যাঙ্ক বিভিন্ন সংস্থাকে সে ঠকিয়েছে, তার কাজকর্ম গোলমেলে, তার বিভিন্ন সময়ে আবেদনে স্ববিরোধিতা আছে এবং সে এগুলো ইচ্ছে করেই করেছে। উচ্চ আদালত একজন মানুষের সম্পর্কে এই কথাগুলো বলেছে, এবং আমরা এইসব বিচারকের উপরে তো আস্থা রাখতেই পারি। এবার মজার ঘটনা হল, সেই মনোরঞ্জন রায় ২০২৩-এ হঠাৎই জানালেন তিনি কৌস্তুভ রায়কে টাকা দিয়েছেন। কীভাবে জানালেন? জেরাতে জানালেন, কেবল জানালেন না তিনি একটা হিসেবের খাতার কিছু পাতাও ইমেল করলেন ইডির কাছে যেখানে দেখা যাচ্ছে কৌস্তুভ রায় ওই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। জেল খাটছে এমন আসামি ইমেল করলেন? কোথা থেকে? জেল থেকে ইমেল করা যায়? কোন আইনে? তাঁর দফতরের সমস্ত কাগজ আগেই সিজ করেছে বিভিন্ন সংস্থা, তিনি এই হিসেবের খাতা পেলেন কোত্থেকে? কে জোগাল তাকে এই বুদ্ধি? সাজা পেয়ে জেল খাটছেন, তারপরেও তিনি এই তথ্য দিয়ে কার হাত শক্ত করছেন? কেন ২০২৩ সালে এই কাগজ উঠে এল?

কৌস্তুভ রায় নিজের সওয়াল নিজেই করার সময়ে বলেছিলেন, এই কথাগুলোই, এবারে বিচারক সেই প্রশ্নটাই ইডি অফিসারকে করলেন, জিজ্ঞেস করলেন যে একজন কনভিকটেড আসামির বয়ানের ভিত্তিতে আর কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই একজনকে কতদিন জেলে পুরে রাখা যায়? প্রশ্ন তো করলেন, উত্তর কে দেবে? সোনার চাঁদ ইডি অফিসার তো বাংলাই জানেন না, তিনি বাংলাতে এসে তদন্ত করছেন, শ’ খানেক লোকজনকে জেরা করছেন, কিন্তু বাংলাই জানেন না। তো বিচারক নিজেই তাঁর বক্তব্য ইংরিজিতেই বললেন, কিন্তু অবাকও হলেন তদন্তের এমন কাক্কেশ্বর কুচকুচে রকম সকম দেখে। এ যেন এক হ য ব র ল, তদন্ত এমন আজগুবি হতে পারে এটা তো জানা ছিল না। জানি না ইদানিং জেলে তাস খেলা যায় কি না, কিন্তু সময় বুঝে আমাদের সম্পাদক তাঁর কৈফিয়ৎ দিয়েছেন, বলেছেন কেহ বলে, মাটি হ’ল হয়ে মোটা জেলে ব’সে শুধু তাস খেলে! ইডি বলে, তুই জেলে ছিলি ভালো ফের যেন তুই যাস জেলে! ওই ইডি শব্দটা অবশ্য ওনার সংযোজন, এবং এটাও সঠিক যে আজ নজরুল বেঁচে থাকলে ইডির হাতেই গ্রেফতার হয়ে জেলে থাকতেন, এ নিয়েও কোনও সন্দেহই নেই।

বোঝা গেল আমাদের সম্পাদকের ছ’ মাসের বেশি জেলবাসের পরেও মস্তিষ্ক এখনও সচল বা বলা যাক একটু বেশিই সচল। মোদ্দা কথায় আসি, আসলে ওই দিল্লি থেকে নির্দেশ এসেছে, বিরোধিতা বন্ধ করার, ওনারা হুকুম তামিল করেছেন মাত্র, তার বেশি আর কীই বা জানেন। সব্বাই জানেন এ মামলা টিকবে না, প্রত্যেকে জানেন যে অরবিন্দ কেজরিওয়াল থেকে হেমন্ত সোরেন বা প্রবীর পুরকায়স্থ থেকে কৌস্তুভ রায়কে ছাড়তেই হবে, যেমন ছাড়া পেলেন দিন দুই আগে অধ্যাপিকা সোমা সেন, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল উনি এবং আরও কয়েকজন মিলে আমাদের উনিজি মানে নরেন্দ্র মোদিজিকে হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তো ছ’ বছর জেলে থাকার পরে একটাও প্রমাণ হাজির না করায় তাঁকে জামিন দিয়েছে আদালত, ছ’ বছর কেটে গেছে। কৌস্তুভ রায়ও জেল থেকে ছাড়া পাবেন, কিন্তু সম্ভবত নির্বাচনের পরে, কারণ ওটাই নির্দেশ, আর আমাদের কাছেও নির্দেশ এসেছে জেল থেকেই এসেছে, নো পাসারন, এতটুকু ছাড় নেই, পেছনে হঠে যাওয়ার প্রশ্নই নেই, আমাদের লড়ে যেতে হবে। কলকাতা টিভির কর্মীরা লড়ে যাচ্ছেন, বিরোধিতার একটা শব্দও বাদ পড়বে না। একটা কাগজে মন্ত্র লিখে পাঠিয়েছেন আমাদের সম্পাদক, জানা গেছে সেই গোপন মন্ত্র লেখা কাগজটা আমাদের হাতে আসার আগেই ধরা পড়ে গেছে ইডির হাতে, তাতে লেখা ছিল “হলদে সবুজ ওরাং ইঁট পাটকেল চিৎপটাং, মুশকিল আসান উড়ে মালি ধর্মতলা কর্ম খালি।” বাংলা না জানা সেই ইডির গোয়েন্দাপ্রবর এর মানে উদ্ধারের জন্য জনে জনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ইট আর পাটকেল শব্দদুটোর মানে সম্ভবত কেউ বুঝিয়েছে তাই আরও উত্তেজিত, ইট আর পাটকেলের কথা তো ইডি সিবিআই এনআইএ জেনেছে। এসব তথ্য গোপন সূত্রে জানা গেছে, দেখা যাক কতদিনে এই অসাধারণ চিরকুটের মানে উদ্ধার করতে পারে ইডি বা সিবিআই।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলার ৪২ | বারাসতে কোন দল এগিয়ে?
05:05
Video thumbnail
চতুর্থ স্তম্ভ | Fourth Pillar | ২৫শে বৈশাখ, হে নূতন
12:55
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | শুভেন্দু বলেছিলেন বোমা ফাটিবে, সে বোমা কোথায় ফাটিল?
10:04
Video thumbnail
Politics | পলিটিক্স (08 May, 2024)
12:46
Video thumbnail
বাংলা বলছে | রাহুলকে নিশানা, মোদির মুখে অম্বানি-আদানি, কত কালো টাকা নিয়েছে কংগ্রেস, প্রশ্ন মোদির
38:28
Video thumbnail
Beyond Politics | সন্দেশখালি, মণিপুর এবং নারীসম্মান
07:58
Video thumbnail
SSC Scam | নিয়োগ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সংক্ষিপ্ত রায়ে স্বস্তিতে রাজ্য সরকার
03:01
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | আবার শুভেন্দুকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান
02:33
Video thumbnail
Narendra Modi | আম্বানি-আদানি নিয়ে রাহুল কেন নীরব, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী মোদির
05:16
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে রণহুঙ্কার | রায় শুনে আমার মনস্নিগ্ধ হয়েছে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
04:19