skip to content
Saturday, February 8, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভব্রাত্য বসুর চাকরি কি তাহলে থাকবে?

ব্রাত্য বসুর চাকরি কি তাহলে থাকবে?

Follow Us :

দেশের সব্বাই জানেন যে আমাদের পরধান সেবক নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদিজির শিক্ষাগত যোগ্যতা এক ন্যাশনাল সিকিউরিটি, জাতীয় সুরক্ষার বিষয় এবং তা নিয়ে বেশি প্রশ্ন করলে জেল ও জরিমানা হতেই পারে তাই সেই প্রশ্ন আমি তুলছি না। কিন্তু একটা কো-রিলেশন, একটা কার্যকারণ সম্পর্ক তো থেকেই যায়। এক অক্ষম মূর্খ মানুষের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর এক জাতক্রোধ থাকেই। ১০টি বার ফেল করা আমাদের পাড়ার ন্যাপাদা আর কোনও আন্দোলনে যান বা না যান, আমাদের পাড়ার স্কুলের সামনে যে কোনও দলের ডাকা যে কোনও আন্দোলনে গিয়ে স্লোগান দেন, হেডস্যারের পদত্যাগ চাই, নইলে আগুন জ্বলবে। অন্য কিচ্ছু নয়, ওই স্কুল বা পড়াশুনোর প্রতিষ্ঠানের উপর তাঁর এবং প্রায় একই কারণে খুব কম কয়েকটা ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেক মূর্খ আর অশিক্ষিত মানুষের রাগ থাকে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর। সুযোগ পেলেই তারা তা ধ্বংস করতে চায়। এরকমই মূর্খ অশিক্ষিত আহাম্মক এক তুর্ক আফগান সৈন্যাধক্ষ বখতিয়ার খিলজি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেছিলেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে আর্যভট্ট শূন্যের আবিষ্কার করেছিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩ মাস ধরে ভাঙা হয়েছিল, পোড়ানো হয়েছিল। সেই সময়ে দুর্ধর্ষ যোদ্ধা কিন্তু যাদের মধ্যে শিক্ষার কণামাত্র আলো ছড়ায়নি, সেই হুনেরা তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেছিল। হঠাৎ সম্রাট হয়ে যাওয়া মূর্খ জুলিয়াস সিজারের নির্দেশেই পোড়ানো হয়েছিল মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি, সেই সময়ে বিশ্বের সবথেকে বড় লাইব্রেরি। হিটলার যিনি উচ্চশিক্ষা বাদই দিলাম সেকেন্ডারি লেভেলের শিক্ষা পার করতে পারেননি, ক্ষমতায় আসার পরে বিজ্ঞান থেকে সাহিত্যের বই পোড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরিখ মারিয়া রেমার্কের অল কোয়ায়েট ইন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট পুড়ছে, নাজিরা চিৎকার করছে হেইল হিটলার।

এমনটা হয়, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে মূর্খ, অশিক্ষিত মানুষজনদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে লাটে তুলে দেওয়ার প্রবণতা থাকে। আবার ঠিক উল্টোটাও আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যে আইআইটি, আইআইএম গড়ে উঠছে, বিভিন্ন রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠছে তার কৃতিত্ব মূলত দুই পণ্ডিতের, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, জওহরলাল নেহরুর। কেবল কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তৈরি করেছিলেন? না সেই সম্বন্ধীয় আইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অটোনমাস, স্বশাসিত করার ব্যবস্থাও করে গিয়েছিলেন। আমাদের সংবিধান প্রণেতারা শিক্ষাকে যুগ্ম তালিকাতে রেখেছিলেন যাতে রাজ্যগুলো তাদের ভাষা সংস্কৃতি অনুযায়ী এক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। সেই জন্যই রাজ্য যে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করবে, করেছে তার প্রতিটির জন্য এক আলাদা আইন করা হয়েছে। ধরুন নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি, তার জন্য আলাদা আইন পাশ করা হয়েছে। সেই আইনে রাজ্যের মানুষের নির্বাচিত সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাথায় চ্যান্সেলারের পদে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপালকে বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ সেই সময়ের প্রেক্ষিতে এই পদ ছিল এক আনুষ্ঠানিক ব্যাপার। আচার্যদের কাছে রাজ্য সরকার ফাইল পাঠাতেন, উপাচার্যের নাম পাঠাতেন, আচার্য বা চ্যান্সেলার তাতে সই করতেন। মাঝেমধ্যে কখনও সখনও এক আধটা ক্ষেত্রে মতবিরোধ যে হয়নি তা নয়, কিন্তু তা ওই এক আধটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। কিন্তু ২০১৪ থেকে এই ছবি এক্কেবারে বদলে গেছে, প্রতিটা ক্ষেত্রে যেখানে বিজেপি বিরোধী দল ক্ষমতায় আছে, সেখানে এই এক ইস্যুতে সংঘাত এখন রোজকার ব্যাপার। রাজ্যপাল তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ করবেন, কারণ তাঁকে আইনত সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে। কারা সেই আইন তৈরি করেছে? রাজ্য সরকার।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ৩ ডিসেম্বর মোদি সাম্রাজ্যের পতনের শুরুয়াত

একই ছবি কেরলে, তামিলনাড়ুতে, আমাদের বাংলায়। তো তিন রাজ্যের সরকার সিদ্ধান্ত নিল তাদের তৈরি করা আইন তারা সংশোধন করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেই আচার্য, চ্যান্সেলার পদে বসাবে, তাহলে আর সংঘাতের প্রশ্ন থাকবে না। তিন রাজ্যই তাদের বিল পাশ করল, সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার বিল পাশ করাতেই পারে। সেই বিল নিয়মরক্ষার জন্য রাজ্যপালের কাছে যায়, তিনি সই করেন। এবার অন্য খেলা, রাজ্যপাল বিলে সই করছেন না, তামিলনাড়ুতে, কেরলে, বাংলায় বছরের পর বছর সেই বিল পড়েই আছে। আমাদের বাংলার রাজ্যপাল আবার এক কাঠি এগিয়ে নিজের ইচ্ছে খুশি মতো উপাচার্য বসিয়ে দিলেন, এদিকে সেই উপাচার্যদের মাইনে কিন্তু রাজ্যপাল দেন না, দেয় রাজ্য সরকার। ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই কিল মারার গোঁসাই। কাজেই জটিলতা আরও বাড়ছে, কিন্তু এই সব আকচা আকচির মধ্যে নিট রেজাল্ট রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টা কেবল উপাচার্য নিয়োগ ইত্যাদির মধ্যে থেমে নেই, মোদি সরকার রাজ্যের আলাদা জয়েন্ট এন্ট্রান্সের বদলে নিট চালু করেছে, করতে চায়। ডাক্তারি পড়তে গেলে এই পরীক্ষা পাশ করতে হবে, এটা সর্বভারতীয় পরীক্ষা। জয়েন্ট এন্ট্রান্স মাতৃভাষাতে দেওয়া যেত, এখানে মাধ্যম ইংরিজি। বিভিন্ন রাজ্য থেকে এর প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। তামিলনাড়ু সরকারের রাজন কমিটি রিপোর্ট এই নিট পরীক্ষার এক ভয়ঙ্কর দিক তুলে ধরেছে। ৯৯ শতাংশ ছাত্রছাত্রী যারা এই নিট পাশ করেছে, তারা প্রাইভেট কোচিং নিয়েছিল। ১৫-২০-৩০ লক্ষ টাকার কোচিং সেন্টারে এই পরীক্ষার কোর্স করানো হয়। তার মানে ডাক্তার কারা হবে? বড়লোকের ছেলেমেয়েরা। তারপর সেই ডাক্তারেরা গ্রামে যাবে? সরকারি হাসপাতালে চাকরি করবে? দেবী শেঠি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো, বিখ্যাত ডাক্তারেরা গরিব পরিবার থেকেই উঠে এসেছে কারণ তাদের ভেতরে প্রমাণ করার এক আগুন থাকে। তারা ডাক্তারির সেই সব বিভাগ বেছে নেয় যেখানে জটিলতা আছে, হার্ট, নিউরো, নেফ্রোলজি ইত্যাদি আর বড়লোকের ছেলেমেয়েরা ডারমাটোলজিস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখে, প্লাস্টিক সার্জন হবার চেষ্টা করে। আর কিছুদিনের মধ্যে আমাদের মেডিক্যাল কলেজগুলো বিত্তবানদের ঘরের সন্তানদের দখলেই চলে যাবে।

এবার আসুন কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে। আইআইটি তাদের নিজেদের এক ব্র্যান্ড তৈরি করেছে, আইআইটি পাস এক ছাত্রকে নিয়ে আলাদা করে দুটো কথা বলা হয়ে থাকে। একই রকমভাবে আইআইএম, সেখানেও আলাদা মানের পড়াশুনো হয় এবং এই দুই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়, এআইসিটিই ইত্যাদি ছিল। এখন সেগুলোকে এক ছাতার তলায় আনা হচ্ছে, তারা আর স্বশাসিত থাকবে না। এবার তাদের মাথায় বসবে মোদি–শাহের পেয়ারের আমলারা, রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এআইসিটিই-ও তুলে দেওয়া হবে। এই বিল তো এসেই গিয়েছে, কদিন পর থেকে লাগু হবে। এবং আরও সাংঘাতিক বিল সম্ভবত এই শীতকালীন অধিবেশনেই আসছে যেখানে একটা সংগঠন থেকেই দেশের প্রত্যেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চালানো হবে। তাদের নির্ধারিত কোর্স, তাদের নির্ধারিত পরীক্ষা ব্যবস্থা, তাদের নির্ধারিত শিক্ষক, পরিচালন সমিতি। এই বিল আনা মানে দেশে এক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হওয়া। এতদিনের স্বশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাহান্নামে পাঠানোর বন্দোবস্ত শুধু নয়, দেশের যাবতীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর ব্যবস্থাকে নিজেদের শাসনে নিয়ে আসতে চান মোদি-শাহ, আরএসএস–বিজেপি। কেন? কারণ একটাই সিস্টেম্যাটিক ভাবেই পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা, আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানকে ভেঙে চুরমার করে এক মধ্যযুগীয় অন্ধকারকে পাকাপাকিভাবে বসানোর চেষ্টা হবে। কারণ দেশের মাথায় বসে থাকা আপাতত সর্বশক্তিমান মানুষটি বিশ্বাস করেন যে গণেশের মাথায় হাতির শুঁড় বসানোটা ছিল আমাদের প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্রের প্লাস্টিক সার্জারির প্রমাণ। যে মানুষ পুরাণ আর ইতিহাসের ফারাক জানেন না, সেই মানুষ যে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মেরি গো রাউন্ড খেলবেন তা তো স্বাভাবিক। এই তো কদিন আগে মেডিক্যাল কাউন্সিল ঠিক করেছে যেখানে যত জনসংখ্যা সেখানে তত মেডিক্যাল কলেজ। মানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ যাঁরা করেছেন, তাঁরা কম মেডিক্যাল কলেজ পাবে। জ্যোতিষ শাস্ত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, রাহু কেতু এখন গ্রহ। তাহলে মোটের ওপর কী দাঁড়াল? রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যপালকে দিয়ে বকলমে চালাবে মোদি-শাহের সরকার। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির পরীক্ষাকে নিটের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হল, যে পরীক্ষা পাশ করতে হলে ১০-১৫-২০-৩০ লক্ষ টাকা ফিজ দিতে হবে।

কাজেই গরিব ঘরের ছেলে মেয়েরা আর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নও দেখবে না। সমস্ত কারিগরি শিক্ষা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মোদি সরকারের এক ছাতার তলায়, সেখান থেকেই কারিগরি শিক্ষার পাঠ্যক্রম নির্ধারিত হবে। আইআইটির আলাদা স্বশাসন আর থাকছে না। এবং এই শীতকালীন অধিবেশনেই দেশের পুরো উচ্চশিক্ষাকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার জন্য বিল রেডি, সেই বডিই ঠিক করবে উচ্চশিক্ষা কী হবে? কীভাবে হবে? কারা সেই শিক্ষার দায়িত্ব নেবে? আচ্ছা বিরোধী দলের তরফে এতবড় সর্বনাশের বিষয়ে কিছু শুনেছেন? কেউ কি কিছু বলছে? আগামী উচ্চশিক্ষা বিলের খসড়া রেডি, পাশ হওয়ার পরে কি বিরোধীরা সরব হবেন? এবং শিরদাঁড়া বিকিয়ে দেওয়া সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে চুপ, একটা কথাও বলছেন না, যাঁরা বলছেন তাঁরা পক্ষেই বলছেন। আমার মাথায় এসব দেখে বুঝে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে, তা হল, এ রাজ্যে উচ্চশিক্ষা দফতরের হাতে তাহলে থাকবেটা কী? একটা পেনসিল থাকার সম্ভাবনাও তো থাকছে না। তাহলে ব্রাত্য বসুর চাকরিটাই বা কী হবে? সেটারও তো কোনও প্রয়োজনীয়তা থাকছে না। অবশ্য একটাই সান্ত্বনা, তিনি আবার নাটকে ফিরে আসবেন, এবং রামকৃষ্ণদেব তো বলেইছেন, নাটকে লোকশিক্ষে হয়। শিক্ষা চুলোর দোরে যাক, আমরা লোকশিক্ষে নিয়েই থাকব।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | বিজেপির দিল্লি দখল কোন চালে?
00:00
Video thumbnail
Atishi Marlena | ভোটে জয়ী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী মারলেনা
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | Delhi Election 2025 | দিল্লি জয়ের পর কী বললেন নরেন্দ্র মোদি? দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
J. P. Nadda | Delhi Election | দিল্লি জয়ের পর জেপি নাড্ডার বিরাট বার্তা, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Priyanka Gandhi | Delhi Election|দিল্লিতে কংগ্রেস শূন্য এই অবস্থা কেন? মুখ খুললেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
00:00
Video thumbnail
Arvind Kejriwal | BJP | Delhi Election 2025 | হারের পর, বিজেপিকে কী বললেন কেজরিওয়াল?
00:00
Video thumbnail
Sheikh Hasina | এই প্রথম সরাসরি বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা, দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
Abhishek Banerjee |লোকসভায় বক্তব্য রাখছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় , দেখুন সরাসরি
27:16
Video thumbnail
সেরা ১০ (Sera 10) | দিল্লির দখলে বিজেপি
08:32
Video thumbnail
Atishi Marlena | ভোটে জয়ী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী মারলেনা
07:22:31