Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeলাইফস্টাইলWorld Alzheimer's Day2022: বাড়ির বয়স্ক সদস্যের ডিমেনশিয়ার সমস্যায় তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে না...

World Alzheimer’s Day2022: বাড়ির বয়স্ক সদস্যের ডিমেনশিয়ার সমস্যায় তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে না পাঠিয়ে সুস্থ রাখতে বরং নিত্যদিনের ছোট ছোট কাজের দায়িত্ব দিন

Follow Us :

হয়তো বাজার করতে গিয়ে টাকাপয়সার হিসেব ভুল করছেন৷ কিংবা রান্না করতে গিয়ে দিয়ে ফেলছেন ভুল মশলা। বাড়ির লোকও আপনার মন রাখতে বিষয়টিকে তেমন আমল দিচ্ছেন না। কিন্তু সাবধান৷ আপনি হয়তো অজান্তেই এক কঠিন রোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন৷

প্রি-ডিমেনশিয়ার লক্ষণ নিয়ে সতর্ক থাকুন

যদি আপনার বাড়ির বয়স্করা ষাটের কোঠায় বা তার ধারে কাছে থাকেন এবং এই ধরনের ভুল প্রায়শই হতে থাকে তা হ   লে সতর্ক হতে হবে। কারণ, থাকতে পারে প্রি-ডিমেনশিয়ার (pre -dementia) ঝুঁকি।  কীভাবে বুঝবেন, এই নিয়ে বিশদে জানাচ্ছেন বিশিষ্ট মনোবিদ  দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় (Dr Debanjan Banerjee)।

ডিমেনশিয়ায় মস্তিষ্কের পরিবর্তন ঘটে অন্যভাবে

আমাদের জীবনচক্রের বিভিন্ন অবস্থায় শরীর ও মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে বা পরিবর্তন আসে। সেই মতোই বৃদ্ধাবস্থায় শারীরিক পরিবর্তনের কারণে কার্যক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়। একইভাবে প্রভাবিত হয় মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা। তবে সেটা স্বাভাবিক ভাবে হলে অর্থাৎ, বায়োলজিক্যাল এজিংয়ের ক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন এতটাই গুরুতর হয়ে পড়ে যে, ব্যক্তির নিত্য জীবনযাপনেও তা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

বৃদ্ধাবস্থায় প্রভাবিত হয় মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা (ছবি সৌজন্য: Unsplash)

ডিমেনশিয়া(dementia) বা স্মৃতিভ্রংশ ঠিক কী

বয়সের সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কের কিছু পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু ডিমেনশিয়ার ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন দ্রুত হয় এবং অনিয়মিত হয়। মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।  এর ফলে মস্তিষ্কের অন্যান্য কোষের মধ্যে যোগযোগ ব্যাহত হয়। আর এর প্রভাবে চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা ও নিত্যদিনের কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। মস্তিষ্কের কোষে কিছু বাড়তি প্রোটিন জমা হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। এবং এটি এক প্রকারের বার্ধক্যজনিত সমস্যা। তবে রোগীকে রোগমুক্ত করা না-গেলেও অনেকটাই সারিয়ে তোলা সম্ভব। ডিমেনশিয়া ঠিক সময় ধরা পড়লে ওষুধ, কাউন্সেলিং, সঠিক খাদ্যাভাস ও দৈনন্দিন জীবনযাপনে কিছু বদল এনে এই রোগের গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। এবং স্লথ করা যায়। এর ফলে প্রি-ডিমেনশিয়ার রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই প্রি-ডিমেনশিয়া বা মাইলড  কগনেটিভ  ইমপেয়ারমেন্ট পরিস্থিতি সহজে বোঝা যায় না।  কারণ, সুস্থ মানুষের ভুলে যাওয়া ও প্রি-ডিমেনশিয়ায় ভুলে যাওয়ার মধ্যে খুবই সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।


ডিমেনশিয়ায় চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা ও নিত্যদিনের কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয় (ছবি সৌজন্য: Unsplash)

ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমার

আর এই সূক্ষ্ম পার্থক্য আমাদের অনভিজ্ঞ চোখে সহজে ধরা পড়ে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগী এবং তাঁর বাড়ির লোকেদের বিষয়টা বুঝতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। তাই বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের ছোটখাট ভুলে যাওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হলে সতর্ক হতে হবে। মেজাজ না-হারিয়ে তাঁদের পাশে দাড়াতে হবে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং মনোবিদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে বাড়তি সচেতন হয়ে তাঁদের বিশ্রামে পাঠানো কিন্তু ঠিক নয়। তাঁরা যতটুকু কাজ স্বাধীন ভাবে করতে সক্ষম করতে দিন।পুরোপুরি আপনার উপর নির্ভরশীল করে তুলবেন না। তা হলে সমস্যা আরও বাড়বে। প্রি-ডিমেনশিয়া অবস্থায় রোগ ধরা না-পড়লে, পরবর্তী ক্ষেত্রে সেটা আরও বড় আকার ধারণ করে। প্রথমে  ডিমেনশিয়া ও পরে অ্যালঝাইমারে পরিণত হয়৷ এই ডিমেনশিয়ার অনেক প্রকার হয়। অ্যালঝাইমারও এক প্রকারের ডিমেনশিয়া। বিশ্বজুড়ে ডিমেনশিয়ার সমস্যার প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই অ্যালঝাইমারে আক্রান্ত।


বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের ছোটখাট ভুলে যাওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হলে সতর্ক হতে হবে (ছবি সৌজন্য: Unsplash)

ডিমেনশিয়ার লক্ষণগুলি

ব্যবহারিক জীবনে  ডিমেনশিয়া কতটা প্রভাব ফেলছে সেই অনুযায়ী এই রোগকে আরলি, মিডল ও ল্যাটার, এই তিনটি স্টেজে বা ধাপে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে ছোটখাট ভুলে যাওয়ার সমস্যা কিংবা সময়ের খেয়াল রাখতে না-পারা থেকে শুরু করে পরিচিতদের নাম ভুলে যাওয়া, একই প্রশ্ন বারবার করা এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে সময় ও জায়গা গুলিয়ে ফেলা। চলাফেরায় সমস্যা, রেগে যাওয়া এমনকি নিত্যদিনের জীবনযাপনের জন্য পুরোপুরি অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।

বর্তমান পরিস্থিতি কেন উদ্বেগজনক?

মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম সপ্তম স্থানে৷ আর এর অন্যতম প্রধান কারণ বয়স্কদের অন্যের উপর নির্ভরতা এবং নিজের অক্ষমতা ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ ডিমেনশিয়ার শিকার। এবং প্রতি বছর প্রায় এক কোটি নতুন করে ডিমেনশিয়ার শিকার হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে আরও জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে ডিমেনশিয়া আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ রোগী উন্নয়নশীল দেশগুলিতে রয়েছেন। পুরুষদের তুলনায় ডিমেনশিয়ায় বেশি প্রভাবিত হচ্ছেন মহিলারা। পুরুষদের তুলনায় অন্তত ৬০ শতাংশের বেশি মহিলার ডিমেনশিয়ায় মৃত্যু হয়েছে। ভারতের মতো উন্নয়ণশীল দেশে ক্রমশই বেড়ে চলেছে ডিমেনশিয়া। গত 2017 সালে  ভারতে  ডিমেনশিয়ার শিকার হয়েছেন প্রায় ৩৪ লক্ষ মানুষ। বিজ্ঞানীদের মতে ২০৫০ এর মধ্যে  প্রায় ৪৬ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে এই সংখ্যা।

রোগ সারিয়ে তুলতে রোগী ও কেয়ার গিভারের বোঝাপড়া অত্যন্ত আবশ্যক (ছবি সৌজন্য: Unsplash)

২১ সেপ্টেম্বর, ওয়ার্ল্ড অ্যালঝাইমারস ডে

প্রতি বছরের মতো, এ বছরও অ্যালঝাইমার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে তৎপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অ্যালঝাইমার নিয়ে কাজ করছেন  সোসাইটি। সচেতনতা বাড়াতে, ২০১৭ সালে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে এসেছে হু(WHO)। এই প্ল্যানিং সেলের অন্তর্গত ডিমেনশিয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা রকম কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এই রোগ সারিয়ে তুলতে রোগী ও কেয়ার গিভারের বোঝাপড়া অত্যন্ত আবশ্যক। তাই বাড়ির বয়স্ক সদস্যের ডিমেনশিয়ার সমস্যায় তাঁদের বিশ্রামে পাঠানোর বদলে রান্না, শারীরিক কসরত, গান শোনা ও এই ধরনের মন ভাল করা কাজে ব্যস্ত রাখুন। সব সময় পাশে থাকুন কিন্তু প্রত্যেক কাজের জন্য আপনার ওপর নির্ভরশীল হতে দেবেন না।

 (ডাঃ দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, কনসালটেন্ট জেরিয়াট্রিক সাইকিয়াট্রিস্ট, কলকাতা অ্যান্ড মেম্বার, ইন্টারন্যাশনাল সাইকোজেরিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন)

RELATED ARTICLES

Most Popular