Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeআজকেগৌতম আদানি বাদ পড়লেন? বাদ দেওয়া হল? সরে গেলেন?

গৌতম আদানি বাদ পড়লেন? বাদ দেওয়া হল? সরে গেলেন?

Follow Us :

ম্যাজিশিয়ান শিল্পপতি গৌতম আদানি তাজপুর ডিপসি পোর্ট প্রকল্পে নেই, এটা পরিষ্কার। বছরখানেকও হয়নি, তাজপুরের এই গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে খবর এসেছিল, জানা গিয়েছিল গৌতম আদানিই নাকি এই প্রকল্পের দায়িত্ব নিচ্ছেন। তো তিনি যেভাবে দেশের সর্বত্রই জাহাজ বন্দর, উড়োজাহাজ বন্দর দখল করছেন, নিয়ে নিচ্ছেন, সেই প্রেক্ষিতে এই ঘোষণা খুব নতুন তো কিছু নয়। নতুন যা তা হল শিল্প সামিটের প্রথম দিনেই ঝোলা থেকে বেড়াল বার করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দিয়েছেন ইটস এনিবডিজ গেম, যে কেউ এই ২০ হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের জন্য গ্লোবাল টেন্ডারে পার্টিসিপেট করতে পারেন। ফেলো কড়ি মাখো তেল, আমি কি তোমার পর? মোদিজির পেয়ারের আদানি গোষ্ঠী এ রাজ্যে তাজপুর বন্দর হাতে পাচ্ছে জেনে যাবতীয় বঙ্গ বিপ্লবীরা আঙুল তুলেছিলেন, যেন আদানি আর আম্বানিতে ভারি ফারাক আছে। এমনকী সিপিএম, যাদের কেরলের দফতরে গিয়ে আদানি মিটিং করে এসেছেন, যারা কোভালমের কাছে ভিঝিঞ্জাম বন্দর কেবল আদানির হাতে তুলেই দেননি, তাঁরা এই বন্দর তৈরির বিরুদ্ধে মৎস্যজীবীদের আন্দোলনের মোকাবিলায় বিজেপি কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ ফ্রন্টও করেছেন। তো সেই বিপ্লবী সিপিএম এবং তার চেয়েও বিপ্লবী নেতা অগ্নিপুত্র সুজন চক্রবর্তী আদানিকে তাজপুর বন্দর দেওয়ার মানেই যে দিদি-মোদি জোট তা দলের কর্মী ও বাংলার মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। এটা অন্য কথা যে অন্য আরও দশটা কথার মতো এটাও মানুষ বুঝে উঠতে পারেনি। তো যাই হোক, আপাতত জানা গেল যে তাজপুর বন্দর প্রকল্পে আদানি নেই। সেটাই বিষয় আজকে, গৌতম আদানি বাদ পড়লেন? বাদ দেওয়া হল? সরে গেলেন?

আজ শুরুতেই, অনেকেই খেয়াল করেছেন, আমি ম্যাজিসিয়ান শিল্পপতি গৌতম আদানি বলেছি। ম্যাজিসিয়ান কেন? কারণ উনি শূন্য থেকে উপার্জনের রাস্তা জানেন, কিছুই হাতে না নিয়েও কিনে নেন হাজার লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ। কেমনভাবে? খুব সোজা কথায় বলতে গেলে তিনি প্রথমে একটা প্রকল্পকে টার্গেট করেন, তা নিয়ে দামাদামি করেন, তারপর সেই প্রকল্পের জন্য আরেক শাঁসালো মক্কেলকে ধরেন। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি প্রকল্পটি দখলে নেন। ধামরা পোর্টের ব্যাপারে ঠিক এটাই তিনি করেছিলেন। প্রথমে যা খরচ তার ৪০-৫০ গুণ দামে তিনি টার্মিনাল তৈরির বরাত নেন, মোদিজির কৃপায় পেয়েও যান, তারপর এই দেশেরই দুটো বড় পাবলিক সেক্টর আন্ডার টেকিং-এর কাছ থেকে আগামী ২০ বছর লাগাতার ব্যবসার লিখিত প্রতিশ্রুতি নেন। এরপর তিনি সেই প্রতিশ্রুতি পত্র দেখিয়েই ফ্রান্সের এক কোম্পানিকে বিনিয়োগ করতে বলেন।

আরও পড়ুন: Aajke | শিল্প এলেই চাকরি হবে?

ম্যাজিশিয়ান শিল্পপতি। ওনার দরকার সরকারের একটা লেটার অফ ইনটেন্ট, মানে সরকার তাঁকে কাজটা দিতে আগ্রহী, কোন শর্তে দিতে আগ্রহী সেসব লেখা এক চিঠি। ব্যস, তারপর তিনি ব্যবসায় নেমে পড়বেন। তো এক্ষেত্রেও তাজপুর বন্দরের জন্য লেটার অফ ইনটেন্ট তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অ্যাকসেপটেন্স মানে সেই আগ্রহপত্রের বদলে তাঁর তরফ থেকে ঠিক আছে আমি এই কাজটা করব, সেটা আসার আগেই নাম কাটা গেল। এতবড় শিল্প সামিটে যেখানে দেশের প্রায় সব বড় হাউসের মালিক বা তাদের প্রতিনিধি এসে হাজির, সেই শিল্প সম্মেলনে গৌতম আদানি, তাঁর পুত্র বা তাঁর কোম্পানির কোনও বড় মেজ সেজ কর্তারা হাজির নেই। এবং প্রথম দিনেই মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিলেন, তাজপুরের জন্য গ্লোবাল টেন্ডার দেওয়া হচ্ছে। ভেতরের খবর যা উঠে আসছে তা হল গৌতম আদানির ডেট ইকুইটি রেশিও নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং অমিত মিত্র। সেটা কী? সেটা হল কোনও প্রকল্প মূল্যের কত টাকা নিজের আর কত টাকা ধারের, তাকে ডেট ইকুইটি, ঋণ ও লগ্নির মাপ বলা হয়। আপনি একটা গাড়ি কিনবেন, ১০ টাকা আপনি দিলেন, ৯০ টাকা ধার নিলেন। কিন্তু ব্যবসায়ে এতটা ঋণ ওই ডেট ইকুইটি রেশিওকে দুর্বল করে। আদানিদের ব্যবসার সাধারণ ডেট ইকুইটি রেশিও ২০:১, মানে ২১ টাকার বিনিয়োগে ১ টাকা ওনার, ২০ টাকা ধার। এটা মেনে নিয়ে ওনাকে কাজ দিলে কিছুদিনের মধ্যেই প্রশ্ন উঠবে, তাই রাজ্য সরকার পিছিয়ে এলেন? হতেই পারে। দু’ নম্বর যা শোনা যাচ্ছে তা হল মহুয়া মৈত্র আর গৌতম আদানির হেড অন কলিশন। আদানি গোষ্ঠী সম্ভবত এই ব্যাপারে মহুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়েছিল, মমতা সেটা মেনে নেননি। অর্থাৎ যেদিন মহুয়া মৈত্রকে নদিয়া জেলার সভাপতি করা হয়, সেদিনই আদানির নাম কাটা পড়েছিল এই প্রকল্পের থেকে। তিন নম্বর কারণ হল ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে আদানির অহি-নকুল সম্পর্ক আর মোদিজির সঙ্গে সখ্য, সেই কারণেই কি রাজ্য সরকার পিছিয়ে এল? নাকি এই তিনটে কারণ যোগ করেই এক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলেই নাম কাটা গেল গৌতম আদানির? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম তাজপুর প্রকল্প থেকে গৌতম আদানি সরে গেলেন? নাকি তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল? আপনাদের কী মনে হয়? মানুষজন কী বলেছেন শুনুন।

ঠিক এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির দখল নিচ্ছে কিছু ফড়ে, বদমাইস কর্পোরেট হাউস, নিচ্ছে মোদি–শাহের প্রত্যক্ষ সাহায্য নিয়েই। আদানি তাদের মধ্যে অন্যতম, উল্কার মতো তাদের উত্থানের ইতিহাসই বলে দেয় এই কথা। কিন্তু এই উত্থানের পরে পতনও তো আছে, যাঁকে ধরে এই উত্থান, তিনি পড়ে গেলে পতন স্বাভাবিক। এ রাজ্যে আদানির আগমন তো কেবল সমুদ্র বন্দর দিয়ে হয়নি। এই রাজ্যে এক্সপ্রেসওয়ে আর সেখানকার টোল কালেকশনের দায়িত্বেও আছে আদানি। ডিপ সি পোর্ট তো হাত থেকে গেছে এরপর ওই হাইওয়ে নিয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। টোল কলেকশনের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যে রাস্তায় ৬০-৭০ শতাংশ অংশে রাস্তা বাড়ানোর কাজ চলছে, আইনত সেখানে এক পয়সাও টোল ট্যাক্স নেওয়া যায় না, আদানিরা ১০০ শতাংশ টোল ট্যাক্স নিচ্ছেন। সম্ভবত এরপরেই সেদিকে চোখ আর ঘাড় ফেরাবেন রাজ্য সরকার।

RELATED ARTICLES

Most Popular