খবরে প্রকাশ ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের নওসাদ সিদ্দিকি ডায়ন্ড হারবার আসনে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে লড়বেন, কেবল তাই নয়, উনি এবং ওনার দল রাজ্যের ১৭ টা আসনে লড়তে চান, এসব দলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের নামের আগায় হিটলারও সমাজতান্ত্রিক ঝোলাতেন, নওয়াজ সিদ্দিকিও সেকুলার ঝুলিয়েছেন কিন্তু আমরা জানি, সব্বাই জানে ওনার সেকুলারিজমের চেহারা। উনি নামবেন, সঙ্গে পাবেন আব্বাস সিদ্দিকি কে যিনি রোজ জলসাতে হাজির থেকে প্রতিদিন এক নির্দিষ্ট জমিতে জল দিচ্ছেন, সার দিচ্ছেন, এ রাজ্যের মুসলমানরা নিপিড়িত, এ রাজ্যের মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলছে, এ রাজ্যে মুসলমানদের লড়াই মুসলমানদেরই লড়তে হবে ইত্যাদি বকওয়াস প্রতিদিন শোনাচ্ছেন। সি পি এম এর তৈরি করার আরেক ফ্রাঙ্কেস্টাইন ধীরে ধীরে তার খোলস ছাড়ছে। ফুরফুরা শরিফ ঘেঁসা চন্ডিতলায় যে নেতা সিপিএম এর সেলিমকেই জেতাতে পারেন নি শুধু নয়, তিন নম্বর থেকে দু নম্বরেও তুলতে পারেন নি, তিনি এবং তাঁর ভাই সাব্বাস আব্বাস এবারে নতুন কায়দায় বিজেপির বি টিম হয়ে নামার পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেছেন। আর কিছুদিনের মধ্যেই সিপিএম, কমরেড সেলিমকে এই ফ্রাঙ্কেস্টাইনের জন্ম দেবার জন্য হাত কামড়াতে হবে মিলিয়ে নেবেন। তো সেই নওসাদ সিদ্দিকি লড়বেন কোথা থেকে? ডায়মন্ড হারবারে প্রায় ৩৪/৩৫% মুসলমান মানুষজন আছেন, আর বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল এই বাইনারির ফলে তৃণমূল সেই মুসলমান আনুষজনের ৮০% এর বেশী ভোট পেয়ে আসছেন, সেই ভোটে চিড় ধরালে আর হিন্দু ভোটের এক বিরাট অংশ কে যদি নিজেদের ধারে নিয়ে আসা যায় তাহলেই বিজেপির কেল্লা ফতে। এই অংক আথায় রেখেই তারা দেশের অন্যান্য প্রান্তে তেলেঙ্গানায় আসাউদ্দিন ওয়েইসিকে কাজে লাগাচ্ছে, বাংলাতেও ওনার বিরাটভাবে আসার কথা, কিন্তু খবর গেছে বাঙালি উসলমানেরা ওনার কথাই বুঝতে পারেন না অতএব এক স্থানীয় কুইসিলিং চাই, মিলে গেছে, ফুরফুরা শরিফের নওসাদ সিদ্দিকি তৃণমূলের মুসলমান ভোট ভাঙার দায়িত্ব নিয়েছেন, সেটাই বিষয় আজকে, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের নওসাদ সিদ্দিকি এ রাজ্যে বিজেপির এজেন্ট হয়ে উঠছেন।
আরও পড়ুন: রিলস বানাতে গিয়ে গঙ্গায় তলিয়ে গেল ২ পড়ুয়া
এ রাজ্যের অন্তত ১৪/১৫ টা লোকসভার আসন রয়েছে যেখানে ৩২% ৬০% এর মত মুসলমান জনসংখা আছে। সেই কারণেই এই বাংলায়, আমাদের রাজ্যে মুসলমান ভোটের গুরুত্ব অনেক বেশি। এই মুসলমানদের আবার ৭৫/৮০% মানুষজন বড্ড গরীব। মানেটা দাঁড়ালো অত্যন্ত গরীব মুসলমান মানুষজন আমাদের রাজ্যের অন্তত ১৫/১৬ টা আসনে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকাতে আছে। এঁরা যখন বামেদের সঙ্গে ছিল, তখন বামেরা জিতে আসতো, আপাতত এই মানুষজনের সিংহভাগ তৃণমূলের সঙ্গে, কাজেই তাঁরা জিতছেন। ধরুন ডায়ামন্ড হারবার, বিরাট শতাংশ মানুষজন মুস্লমান হবার পরেও কিন্তু এই আসন থেকে কখনই কোনও মুসলমান প্রার্থী জিতে আসতে পারে নি, কিন্তু যে দলই জিতেছে তাদের ঐ সংখ্যালঘু ভোট জরুরি ছিল, যারা পেয়েছে, সেই দলই জিতেছে। আর তৃণমূল থেকে সি পি এম মাঝে মধ্যেই ঐ সংখ্যালঘু ভোট নিজেদের দিকে আনার জন্য মুসলমান প্রার্থী দিয়েছেন বটে কিন্তু একজন মুসলমান প্রার্থীও কখনও জেতেন নি। নওসাদ সিদ্দিকি বা আব্বাস সিদ্দিকিকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের মুসলমান জনসমর্থনের অনেকটা নিজেদের দিকে নিয়ে আসলে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার হবে এমনটা ভেবেছিলেন কমরেড সেলিম, অন্তত নিজে যে বিধানসভায় যাবেন তা নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল বলে দিয়েছে বাংলার সংখ্যালঘু সমাজ অতটাও বোকা নয়। এবারে সেই খেলাটাকে একটু অন্যভাবে সাজানোর চেষ্টা করছে বিজেপি, তাদের কুনকি হাতি হল নওয়াজ সিদ্দিকি, যিনি আপাতত সংখ্যালঘু মানুষদের মসীহা বনে যাব্র জন্য যা যা করার করে চলেছেন, রিসোর্স পেয়েও যাচ্ছেন, সবথেকে বেশি কভারেজ চিল্লানেসরাস অর্ণব গোস্বামীর রিপাব্লিক টিভি দিচ্ছে, ছকটা পরিস্কার, আরও রিসোর্সও নিশ্চই যাচ্ছে, এবং চাহিদা একটাই তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে ফাটল ধরাও। হ্যাঁ মিরজাফরকে সিরাজের বিরুদ্ধে লড়তে হয় নি, কেবল কামান গুলোকে নিশ্চুপ রাখতে হয়েছিল। নওয়াজ সিদ্দিকির ওপর দায়িত্ব মুসলমান ভোটের ৩৫/৪০% ভাঙিয়ে নিয়ে এসো। তিনি সেই কাজে নেমেছেন। সাফ জানিয়েই দিয়েছেন সি পি এম ইন্ডিয়া জোট থেকে না বের হলে কোনও জোট নয়, কেন? এরকম শর্ত কেন? কারণ আর যাই হোক প্রকাশ্যে সিপিএম এই কাজটা করতে পারবে না তাই। এবং নওসাদ সিদ্দিকি জানিয়েছেন যে তিনি ১৭টার মত আসনে লড়বেন, এখানেও ছক খুব পরিস্কার, তাঁর চোখ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আসন গুলোর দিকে, সে ভোট যত টানতে পারবেন, ততটাই সুবিধে বিজেপির, নিজে দাঁড়াবেন তৃণঊলের দু নম্বরের বিরুদ্ধে, রাজ্যের মানুষের কাছে এক মুসলমান আইকন হয়ে ওঠার চেষ্টা, উনিও জানেন, সব্বাই জানেন উনি জিতবেন না, আই এস এফ এর একজনও লোকসভায় যাবেন না, কিন্তু সেটা তো হোমটাস্ক নয়, হোম টাস্ক হল সংখ্যালঘু ভোটের বিভাজন, সেটা উনি করবেন, অন্তত করার চেষ্টা করছেন। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, এ রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাঙার জন্য নওসাদ সিদ্দিকির চেষ্টার পেছনে কি বিজেপির হাত আছে? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনিতি নতুন কিছু নয়, বিশেষ করে সেই দরিদ্র, নিরক্ষর সংখ্যালঘু যাদের ওপর ধর্মের পান্ডা মোল্লা, পুরুতদের প্রভাব বেশী তাদের নিয়ে রাজনীতি সেই কবে থেকেই চলে আসছে। সংখ্যালঘুরা না দেশের মূল চালিকা শক্তি, মেইন স্ট্রিম পলিটিক্স এ আসতে পারছে, না তাদের মধ্যে থেকেই তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে এমন কেউ জন্ম নিচ্ছে। সবটাই কেবল তাদের ভোট আদায়ের ছকবাজি চলছে। কিন্তু বিজেপির উদয়, বিজেপির ক্ষমতায় আসা সব হিসেব কে আরও জটিল করেছে, তারা সংখ্যালঘুদের ভোট চায় না, তারা সংখ্যাগুরু হিন্দুদের ৮০/৯০% ভোট নিয়ে দেশে এক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চায়। সমস্যা হল সংলখ্যাগুরু হিন্দুদের ৫০% এর বেশি সমর্থন এখনও তাদের নেই। তাই বিজেপি চায় সংখ্যালঘু ভোটের বিভাজন বা অন্তত মূল প্রতিদন্দ্বির কাছ থেকে যাতে সংখ্যা লঘু ভোট সরে যায়। সেই জন্যেই তাদের প্রয়োজন আসাউদ্দিন ওয়েইসির মত এক ভোট কাটুয়াকে, ঠিক তারই মতন আরেকজনকে তারা খুঁজে পেয়েছে এই বাংলায়, তিনি হলেন ফুরফুরা শরিফের এক পিরজাদা নওসাদ সিদ্দিকি।