রবিবারই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, বিচারপতি পদে ইস্তফা দেবেন মঙ্গলবার। ঘোষণা করেছিলেন, রাজনীতির মতো বৃহত্তর পরিসরেও আসতে পারেন। সবটাই মঙ্গলবার খোলসা করবেন বলেও সেদিন জানিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও ততক্ষণে মিডিয়া মহলে ছড়িয়ে গিয়েছিল যে, তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। রবিবারের ঘোষণামতোই মঙ্গলবার গঙ্গোপাধ্যায় মশাই বিচারপতি পদে ইস্তফা দিলেন। পরে সল্টলেকের বাড়িতে ফিরে সাংবাদিক বৈঠকে বুক বাজিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন, বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন সম্ভবত ৭ মার্চ। লোকসভার ভোটেও দাঁড়াতে পারেন। কোন কেন্দ্র থেকে দাঁড়াবেন, সেটা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করবেন।
যে কোনও মানুষেরই রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার অধিকার রয়েছে। যে কোনও পেশার লোকই পেশা ছেড়ে রাজনীতিতে আসতে পারেন। তাতে কোনও অপরাধ বা অন্যায় নেই। কিন্তু তাই বলে বিচারপতি বা বিচারকের আসনে বসে যদি কেউ রাজনীতির কথা বলেন, কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে কিংবা সেই দলের নেতাদের সম্পর্কে নানান মন্তব্য করেন, সেটাকে কি মেনে নেওয়া যায়? আর তিনি যখন সেই সব কথা বলেন, তখনই তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে নানা সংশয় জাগা স্বাভাবিক। এমনকী ন্যায়ালয়ের আসনে বসে তিনি যে সব রায় দেন, সেগুলিকে পক্ষপাতদু্ষ্ট বলাটা কি অন্যায়? সেই সব নিয়েই বিষয় আজকে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি পদে ইস্তফা দিয়েই অভিজিতবাবু যেভাবে পেশাদার রাজনীতিকের মতো রাজ্যের শাসকদলকে ঝাঁঝালো আক্রমণ শানালেন, তাতে তৃণমূল তাঁর অতীতের রায় নিয়ে যেসব প্রশ্ন তুলত, তাই যেন মান্যতা পেয়ে গেল। যে দলে তিনি বৃহস্পতিবারের বারবেলায় যোগ দিতে চলেছেন, সেই বিজেপির নেতারা এতদিন তৃণমূল সম্পর্কে যে কথা বলেননি, সেই কথাই শোনা গেল সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া বিচারপতির মুখে। তিনি বলে বসলেন, তৃণমূল কংগ্রেসকে আমি কোনও রাজনৈতিক দল বলেই মনে করি না। এটা একটা যাত্রা পার্টি। নাম মা মাটি মানুষ। শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে তাঁকে তালপাতার সেপাই বলেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি।
আরও পড়ুন: Aajke | অভিজিৎ গাঙ্গুলির পদত্যাগ, পিছনের কারণ আর রহস্য
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক মামলায় ওই প্রাক্তন বিচারপতির রায়ে সিবিআই তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্তের ভিত্তিতে শাসকদলের কিছু নেতা-মন্ত্রী জেলে গিয়েছেন। আবার কিছু কিছু রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কখনও ডিভিশন বে়ঞ্চে, কখনও সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। রায় দিতে গিয়েই অনেক সময় তিনি রাজনীতিকে টেনে এনেছেন। অনাবশ্যকভাবে শাসকদলের নেতাদের সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেছেন। সেই কারণেই তাঁর রায় এবং ওই সব মন্তব্য নিয়ে শাসকদল প্রকাশ্যে কড়া কথা বলতে ছাড়েনি।
শাসকদলের নেতারা আগে যা বলেছিলেন, আজ গঙ্গোপাধ্যায় মশাই বিচারপতির পদে ইস্তফা দেওয়ার পর সে সব কথাই উচ্চকিত হয়ে বলছেন। তাঁরা আজকে খোলাখুলিই বলছেন, ওই সদ্য প্রাক্তন বিচারপতির অধিরকাংশ রায়ই ছিল পক্ষপাতদুষ্ট। আজ তাঁর উদ্দেশ্য একেবারে উদোম হয়ে গিয়েছে। আমজনতার একাংশের মনেও সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিচারপতির পদ ছেড়ে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে। তাঁর দেওয়া অতীতের রায়গুলি কি তবে পক্ষপাতমূলক ছিল?
শাসকদলের নেতারা বলছেন, গঙ্গোপাধ্যায় মশাই কাউকে খুশি করতে এবং কাউকে অপদস্থ করতেই বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। বিচারপতি হিসেবে দেওয়া তাঁর রায়গুলিতেও তাঁর উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল। আজ গোটা বিষয়টাই খুল্লমখুল্লা হয়ে গিয়েছে। নিজের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে অভিজতবাবু তৃণমূলকে আক্রমণ করতে কোনও শব্দই বাকি রাখেননি। আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেও দ্বিধা করেননি।
অভিজিত নিজেই জানিয়েছেন, তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। বিজেপির নেতারাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। এর অর্থ হল তলে তলে বিষয়টা নিয়ে অনেকদিন ধরেই চর্চায় ছিল। তিনি অবশ্য একটা দুর্বল ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। গঙ্গোপাধ্যায় মশাই দাবি করেছেন, তিনি গত সাতদিন ধরে কোনও বিচার প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন না। কিন্তু এই ব্যাখ্যায় চিঁড়ে ভিজছে না। ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে।