২০১৯-এ ক্ষমতায় আসার পরেই মোদি-শাহ ঠিক করেই নিয়েছিলেন রাজনীতি নয়, ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স আর ভিজিলেন্স দিয়েই শাসন চালাবেন। আরও বেশি সক্রিয় হলে এনআইএ আছে, ইউএপিএ আছে, আর্বান নকশাল বলে সোজা জেলে পুরে দাও। এই অঘোষিত জরুরি অবস্থার শাসনে অগাস্ট ২০২২ এর ১ তারিখ থেকেই যদি হিসেব নেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে মহারাষ্ট্রে জুলাইয়ের শেষ দিনে গ্রেফতার সঞ্জয় রাউত, রেড অব্যাহত মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায়। এরপর তৃণমূল মন্ত্রী নেতাদের বাড়িতে রেড চালানো হল, তারপর কলকাতা টিভি, তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের দফতর, যেদিন কলকাতা টিভির রেড উঠে গেল, সেদিনই সকালবেলায় আম আদমি পার্টির মন্ত্রী, নেতা মণীশ সিসোদিয়ার বাড়ি, তারপর বুধবার তেজস্বী যাদব সমেত আরজেডি নেতাদের বাড়ি, একই সঙ্গে ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের ঘনিষ্ঠ মানুষজনের বাড়িতে রেড চললো।
তারপরে শারদ পাওয়ার, তাঁর কন্যা, তামিলনাড়ুতে স্তালিনের বাড়িতে পৌঁছল ইডি। আপ-এর মণীশ সিসোদিয়া অ্যারেস্টেড, সঞ্জয় সিংও। কেজরিওয়ালের কাছে রোজ নোটিস যাচ্ছে, হেমন্ত সোরেনকে শেষমেশ জেলে পাঠিয়েছে, সরকার ভাঙতে পারেনি আর এই বাংলা তো ইডি-সিবিআইয়ের হেড অফিস। কোনওটায় সামনে ইডি, কোনওটায় ইনকাম ট্যাক্স, কোনওটায় সিবিআই, পিছনে কিন্তু দুটি মানুষ মোদি–শাহ। উদ্দেশ্য কী? কালো টাকা উদ্ধার? ফাইট এগেন্সট করাপশন? ঘণ্টা। বি এস ইয়েদুরিয়াপ্পার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা বেআইনি রোজগারের অভিযোগ আছে, বেআইনিভাবে খনি ইজারা দেওয়ার অভিযোগ আছে। কেউ রেড করবে? হিমন্ত বিশ্বশর্মা সারদা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত, ইডি যাবে রেড করতে?
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ২২)
শুভেন্দু অধিকারী, চোখের সামনে টাকা নিয়েছেন, ভিডিও আছে, সিবিআই যাবে জেরা করতে? অজিত পাওয়ার এখন সফেদ, মিস্টার ক্লিন। এই খোজা সিবিআই, ইডি, আইটি আটকেছে গুজরাতের ওই নীরব মোদি, মেহুল চোকসি সমেত ৩৬ জন ব্যবসায়ীকে, যারা লক্ষ কোটি টাকা মেরে চলে গেছে বিদেশে? কেউ গেছে নরেন্দ্রভাই দামোদর দাস মোদির বাড়িতে রেড করতে, কারণ যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে এই ভদ্রলোক ওই নীরব মোদি বা মেহুল চোকসিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন। যদি না যায়, তাহলে কেবল কৌস্তুভ রায়ের চ্যানেলের কর্মচারী বা সাংবাদিককে ডেকে এনে ৩০-৪০-৬০ ঘণ্টা আটকে রেখে জেরা করা হবে কেন? না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গার বাওয়ালি দেওয়ার পরে দেশের ১ লক্ষ ৮৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পগার পার এই ব্যবসায়ীরা, তাহলে এদের কে খাওয়াল? তাকে একটা প্রশ্ন করার ধক আছে ওই ইডি কর্তাদের? আইটি কর্তাদের? নরম মাটি পেলেই আঁচড়াতে ইচ্ছে হয় তাই না? আমাদের দফতরে ইনকাম ট্যাক্স রেড হয়েছিল, তা যে টাকার হিসেব বা হদিশ পেতে হয়নি তা তো সবাই জানে, যেটা জানে না তা হল এই রেড চলাকালীন অমানবিক ব্যবহার, টর্চারের কথা। সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়, তাঁদের বার বার যা জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল তা হল, টাকা কোথায়? ক্যাশ টাকা কোথায়? মালিক কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন? মানে এখন থেকে সাংবাদিকতার চাকরির শর্ত হল মালিকের টাকার হদিশ রাখা? অথচ ওই অসাংবাদিক, যিনি টাকা খাইয়ে টিআরপি বাড়ানোর কাজ করেছেন, দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো বলে ভর সন্ধেবেলা ডাক ছাড়েন, সেই প্রভুভক্তকে ইডি ধরে না, সিবিআই ধরে না।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের উপর এই আঘাত প্রমাণ করে স্বাধীনতা আন্দোলনের এই বিশ্বাসঘাতকদের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে বাঁচিয়ে রাখাটাই ভুল ছিল। গান্ধীহত্যা ষড়যন্ত্রের মূল মাথা ওই সাভারকারকে সেদিন ফাঁসি দিলে আজ দেশকে এই দিন দেখতে হত না। গণতন্ত্রকে, সংবিধানকে ভেঙে মুচড়ে ফেলে এক সামরিক শাসনের আওতায় আনা হচ্ছে। কলকাতা টিভি, চতুর্থ স্তম্ভ অনুষ্ঠান বন্ধ করার প্রচ্ছন্ন হুমকি। আমরা তাকে রুখে দিতে পেরেছি, কতদিন পারা যাবে জানা নেই, কারণ প্রতি পদক্ষেপেই বুঝতে পেরেছি, তারা যে কোনও জিনিস, টাকা, দলিল, কাগজ এমনকী অস্ত্রশস্ত্রও রেখে দিতে পারেন, প্ল্যান্ট করতে পারেন, তারপর তার ছবি হুক্কাহুয়ার দলের কাছে পাঠিয়ে রাখতে পারে, যাদের শিরদাঁড়াই নেই অথচ দাবি করেন চোখে চোখ রেখে কথা বলার। আমরা লড়ছি স্বাধীন দেশের সংবিধানের জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য, ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য, শেষ পর্যন্ত লড়ব। সেই লড়াইয়ে শামিল আমাদের সম্পাদক এক ঘোষিত আসামির অভিযোগের ভিত্তিতে ২৪৩ দিন জেলে। আমরা বিচার চাইছি, জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: