Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: নতুন দেশ, হিন্দু রাষ্ট্র, কৈলাস রাষ্ট্রের গল্প 

Fourth Pillar: নতুন দেশ, হিন্দু রাষ্ট্র, কৈলাস রাষ্ট্রের গল্প 

Follow Us :

আমাদের অনুষ্ঠানের দর্শকরা, কলকাতা টিভির দর্শকরা মাঝেমধ্যেই কিছু প্রশ্ন করেন, আলাদা আলাদা করে উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় না। আজ অনুষ্ঠান শুরু করার আগেই কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিই। সেদিন নির্বাচনের ফল বের হবার পরে তাড়াহুড়ো করে চতুর্থ স্তম্ভ লেখা হয়েছে, একটা বড় ভুল থেকে গেছে, সাগরদিঘিতে কংগ্রেস প্রার্থী ২২ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছেন, কিছু আগের তথ্য ধরে লেখার ফলে বলার সময় আমি ওটা ১২ হাজার ভোট বলেছি। কেউ কেউ বলেছেন, এটা কি ইচ্ছাকৃত? যে ঘটনা সবার সামনেই ঘটছে তার বিপরীত তথ্য দিতে যাব কেন? আমি তো দেশের প্রধানমন্ত্রী নেই। আর তৃণমূলের হারকেই বা ছোট করে দেখাব কেন? এ হার ১২ হাজারের হলেও বিরাট হার, লজ্জাজনক হার। এর পিছনের অনেক কারণের মধ্যে সেদিনই আমরা দুটো কারণ জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম ৬৪ শতাংশ মুসলমান ভোটার থাকা সত্ত্বেও এই হার নিশ্চিতভাবেই বলে দেয় যে মুসলমান ভোট যে ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে ছিল, সেখানে বিরাট সমস্যা আছে, ফাটল ধরছে। নিদান হাঁকার মতো না হলেও এই ফাটল বড় হতেই পারে। আর বলেছিলাম, রাজ্যজুড়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠছে, দলের বড় ছোট মেজো সেজো নেতারা যে ভাবে গ্রেফতার হচ্ছে তা মানুষের মনে দাগ কাটছে বই কী। 

কিছু দর্শক প্রায়ই বলেন, এত কথা বিজেপির বিরুদ্ধে কেন? কারণ খুব সোজা, দেশের শাসনকর্তা মোদি-শাহ, আরএসএস-বিজেপি। আমরা দেশের কথা বলছি। দেশে ৫৪২টা লোকসভা সদস্যের মাত্র ২৩ জন তৃণমূলের, ৩০৩ জন বিজেপির, তাহলে প্রশ্ন করব কাকে? ক্ষমতাকে প্রশ্ন না করে, আসল ক্ষমতাকে তেল দিয়ে চুনোপুঁটিদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার মধ্যে গৌরব তো কিছু নেই। রাজ্যের ক্ষমতাকে প্রশ্ন? করছি, করব। কেন দুর্নীতির এই কাঁড়ি কাঁড়ি অভিযোগ উঠছে, প্রশ্ন করব না? মুসলমান ভোট, বিজেপি বিরোধী ভোট সরে যাচ্ছে কেন? প্রশ্ন করব না? করছি তো। কিন্তু খবরটা তো বাংলার নয়, কেবল বাংলার নয়, গোটা দেশের। ২০২১-এ গ্যাসের দাম ছিল ৮৩৫ টাকা, এখন দাম ১০৭৩ টাকা, কাকে প্রশ্ন করব? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে? চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করল এক শিরদাঁড়াহীন সাংবাদিক, শিক্ষা ব্যবস্থা বেহাল কেন? যেদিন এই ইস্যু তোলা হল, সেদিনই ওই সাংবাদিকের আপাতত পালকপিতা মোদি সরকার জানাল, বাংলা প্রাথমিক শিক্ষায় দেশে প্রথম, বেমালুম ভুলে গেলেন সে তথ্য? বরং আমরা প্রশ্ন করেছি এই রাজ্য সরকারকে, বেশ তো, প্রাথমিক শিক্ষায় এগিয়ে বাংলা, কিন্তু তারপরেও হাজার খানেক স্কুল বন্ধ হচ্ছে কেন? আমরা প্রশ্ন করছি করতে থাকব। কেন্দ্রের দিকে পিঠ ফিরিয়ে রাজ্যের চোখে চোখ রেখে ভাঁড়ামি করব না, আর সেটা করি না বলেই সিবিআই আসে, ইডি প্রেমপত্র দেয়, ইনকাম ট্যাক্স রেড হয়। তারপরেও আমাদের হাত মেলানোর সুযোগ ছিল না? ছিল, এখনও অফার আছে, কিন্তু ওই যে শিরদাঁড়া টিকাউ এবং বিকাউ নয়। তো অনেক কথা হল, প্রশ্ন আপনারাও করুন, আইটি সেল থেকে ২ টাকা প্রতি ট্রোল যারা পান, তাঁরা ট্রোল করতে থাকুন। আমরা প্রশ্ন করতে থাকি। কারণ সাংবাদিকতার মূলে আছে পাঁচটা শব্দ, হোয়াট? হোয়েন? হাউ? হোয়ার? হোয়াই? 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: সুপ্রিম আদালতের সুপ্রিম রায়  

এবার আজকের বিষয়ে আসা যাক। সামনে দোল, রং, হাসি, আড্ডা গানের সময়, গরম পড়লেও কোকিল ডাকছে, ফুটছে পলাশ। তাই একটু হেসে নেওয়া যাক, হেসে নাও দুদিন বই তো নয়। একটা লোক, অরুণাচলম রাজশেখরন, তিরুভান্নামালাই, তামিলনাড়ুতে জন্ম। উনি বলেন, ১ জানুয়ারি ১৯৭৮-এ তাঁর জন্ম, আমেরিকার ভিসাতে আছে ১৯৭৭-এর ১৩ মার্চ। সে হতেই পারে, কারণ তিনি আপাতত ত্রিকালজ্ঞ নিত্যানন্দ স্বামী। যিনি দেরিতে উঠলে সূর্য দেরিতে ওঠে বলে তিনি এবং তাঁর ভক্তরা দাবি করেন, তিনি স্বয়ং মহাদেব, তিনিই ভগবান। এই নিত্যানন্দ স্বামী দেশের যতগুলো ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ধারা আছে, প্রায় সবকটাতেই অভিযুক্ত। খুন, হত্যা, ধর্ষণ, কিডন্যাপ, মানি লন্ডারিং, জাল দলিল বানানো, জমি দখল করা, প্রত্যেকটি অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত। বেঙ্গালুরুর বিডাডিতে তিনি বিরাট আশ্রম তৈরি করেছেন। মানুষকে স্বর্গের ভিসা বিক্রি করতেন, আমেরিকার ফ্লোরিডাতে হিন্দু ইউনিভার্সিটি অফ আমেরিকার চেয়ারম্যান ছিলেন, বিখ্যাত ওয়াটকিন্স মাইন্ড বডি স্পিরিট ম্যাগাজিনে পৃথিবীর ১০০ জন আধ্যাত্মিক গুরুদের তালিকায় তিনি আছেন, তিনি নাকি তৃতীয় নয়নের অধিকারী। তো সেই তিনি উধাও। কে জানাল? গুজরাত পুলিশ জানাল, তিনি মামলায় হাজিরা দেননি, তিনি উধাও। 

পুলিশ ধরার আগেই যেমন ভাবে বিজয় মালিয়া, মেহুল ভাই, নীরব মোদি সমেত ৩১ জন ব্যবসায়ী উবে গিয়েছিলেন, ঠিক তেমনভাবেই তিনি উবে গেলেন। তারপর থেকে তাঁকে ঘিরে গুজব আর গুজব। কেউ বলছেন তিনি ত্রিনিদাদে মানে ওয়েস্ট ইন্ডিজে, কেউ বলছেন জার্মানিতে, কেউ বলছেন কোত্থাও না, এই ভারতেই ঘাপটি মেরে পড়ে রয়েছেন। তাঁকে নিয়ে বিবিসি নয়, ডিসকভারি চ্যানেল একটা বিরাট ওয়েব সিরিজও বানিয়ে ফেলেছে, মাই ডটার জয়েন্ড আ কাল্ট, পারলে দেখে নেবেন। এমনিতে আমাদের দেশে বাবাজি মাতাজি কি কম আছে? মন রাসপুটিন প্রচুর আছে। আমরা যাকে অটলবিহারী বাজপেয়ী, আদবানি, মোদিজির সঙ্গে দেখেছি ধেই ধেই করে নাচতে, সেই আশারাম বাপু এখন জেলে। তারও বহু আগে ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারীকে আমরা ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখেছি, তিনিই নাকি বহু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতেন, জরুরি অবস্থা জারির পেছনেও নাকি তিনি ছিলেন। তিনি ওই ৭৭-এর হারের পরে উবে গিয়েছেন, তাঁর পরিণতির খবর কেউ রাখেনি। আমরা সাঁইবাবার কথা জানি, শূন্য থেকে ছাই নামিয়ে আনতেন, সোনার চেনও, পি সি সরকার যাঁকে এক অদক্ষ জাদুকর বলেছিলেন। আমরা যোগব্যায়ামে সব রোগ সারিয়ে দেবার দাবি করা, আমলা থেকে অ্যালোভেরা রস বিক্রি করা, আপাতত চার সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়ের মালিক পতঞ্জলির বাবা রামদেবকে জানি। যিনি নিজের চোখ পিটপিট, যা নাকি এক নিউরোলজিক্যাল ডিজিজ, এখনও সারিয়ে উঠতে পারেননি, অসুখ হলেই হাসপাতালে ভর্তি হন, তাঁকেও দেখেছি। দেখেছি গুরু রাম রহিম ইনসানকে, যিনি খুন এবং ধর্ষণের দায়ে জেলে, যখন চান তখনই প্যারোল পেয়ে যান, প্যারোলে জেল থেকে বের হলেই ওনাকে জেড ক্যাটাগরির সুরক্ষা দেওয়া হয়। কেন প্যারোল পান? হরিয়ানা সরকার জানাচ্ছে, The Haryana government has made it clear that Dera Sacha Sauda chief Gurmeet Ram Rahim Singh is not a hardcore prisoner and his conviction in two different murder cases cannot be termed as serial killing. According to the state government, Gurmeet was not an assailant and had not executed the actual killings in both the cases. He has been held guilty for hatching criminal conspiracies with the co-accused for these killings. He has been punished under Section 302 of the IPC only with the aid of Section 120-B. Section 120-B is an independent offence.  

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: তিন রাজ্যের নির্বাচন আর চার রাজ্যের উপনির্বাচন কী জানাল?  

বাংলায় বুঝিয়ে বলি? হরিয়ানা সরকার বলছে, আসলে উনি তো আর হাতে ছুরি নিয়ে কাউকে খুন করেননি, কেবল খুনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাই তাঁকে হার্ডকোর খুনি বলা যাবে না, তাই তাঁকে প্যারোলে ছাড়া হয়। এই যুক্তি মেনে নিলে দাউদও তেমন হার্ডকোর অপরাধী নয়, কারণ সে তো আর নিজে খুন করে না, খুন করায়। এবং মজার ব্যাপার হল সেই প্যারোলে ছাড়া পাবার পরে এই লোকটি আমার আপনার ট্যাক্সের পয়সায় জেড ক্যাটাগরির সুরক্ষা পান। কারণ? কারণ ওনার অনেক শিষ্য সমর্থক আছে, যাদের ভোট সরকার বাঁচাতে দরকার। তাই এক ধর্ষণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত নয়, দণ্ডিত একজন জেড ক্যাটাগরির সুরক্ষা পায়। তো আবার চলুন নিত্যানন্দ স্বামীর গল্পে। তিনি তো উধাও হলেন ২০১৯-এ, তাহলে আজ আবার তাঁর প্রসঙ্গ এল কেন? এল, কারণ তিনি অজ্ঞাতবাস থেকেই জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর দেশ খুঁজে পেয়েছেন, বিশ্বের আপাতত একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র কৈলাস। আমরা পাত্তা দিইনি, এক ফোর-টোয়েন্টি কী বলল তাতে পাত্তা না দেওয়ারই কথা। কিন্তু মাত্র গতকাল এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ইউনাইটেড নেশনস-এর এক আলোচনা সভায় ওই কৈলাস রাষ্ট্রের নাকি অ্যাম্বাসাডর ভাষণ দিচ্ছেন, বলছেন, হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, জানাচ্ছেন যে তাঁদের রাষ্ট্র কৈলাস হিন্দুদের স্বার্থ দেখার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। (https://youtu.be/RFSn-yWnDL8) ভাবা যায়? ইউনাইটেড নেশনস? না উন্মাদের আখড়া। তো ভারতের সরকার বিরাট করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে, যারা এখনও বিশ্বে নাকি বিরাট প্রতিপত্তিওলা মোদিজি থাকার পরেও এই ফোর-টোয়েন্টিকে গ্রেফতার করে দেশে ফেরাতে পারেনি। এবং আরও মজার কথা হল, খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, এই প্রথম নয়, একবছর আগেও এরকমই এক ইউএন বৈঠকে হাজির ছিলেন স্বামী নিত্যানন্দের প্রতিনিধি, কৈলাস রাষ্ট্রের অ্যাম্বাসাডর। (https://youtu.be/TeTUTA-Cjrk) 

যে দেশের প্রধানমন্ত্রী গণেশের মাথায় হাতির মাথা বসানোকে প্লাস্টিক সার্জারি বলে মনে করেন, যে দেশে আপাতত বৈদিক শিক্ষাদান হচ্ছে উচ্চশিক্ষায়, যে দেশে পুরাণ কাহিনির চরিত্র রামের জন্মঠিকুজি বের করে জন্মস্থানও নির্ধারণ করা হয়, সে দেশের এক ফ্রড ফোর-টোয়েন্টি ইউনাটেড নেশনসকেও বোকা বানাবে, তাতে আর অবাক হবার কী আছে? বরং দোল আসছে, রং খেলুন, খাওয়া-দাওয়া করুন আর হেসে নিন। আগামী দু’দিন ছুটি, চতুর্থ স্তম্ভ নিয়ে ফিরব আবার বৃহস্পতিবার।     

 

RELATED ARTICLES

Most Popular