প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে-র Manna Dey)একটি জনপ্রিয় গানের কলি মনে পড়ে গেল। গানটির শুরুটা এরকম, সবাই তো সুখী (Happiness) হতে চায়, কেউ সুখী হয়, কেউ হয় না। গীতিকার জহর মজুমদার একেবারে খাটি কথাটিই লিখে গিয়েছেন। সত্যিই তো, পৃথিবীতে সুখী হতে চায় সবাই। কিন্তু সকলের ভাগ্যে সুখ নাও সহ্য হতে পারে। কারও হয়তো অনেক ধনসম্পত্তি আছে। কিন্তু দেখা গেল তাঁর জীবনে সুখই (Happiness) নেই। আবার তার উল্টোটাও হতে পারে। যাঁর কিছুই নেই, অথচ তিনি হয়তো সবচেয়ে সুখী।
আসলে সুখ বা খুশির বিষয়টি আপেক্ষিক। কেউ চাইলেই সুখী বা খুশি হতে পারেন না আবার কেউ না চাইতেই সুখী বা খুশি হন। কেউ কোনও ভালো খাবার পেয়ে খুশি হন, কেউ পছন্দের উপহার পেলে খুশি হন, কেউ প্রিয়জনকে কাছে পেলে খুশি হন, কেউ বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হলে খুশি হন। আবার কেউ সামান্য কিছু পেলেও খুশি হন। শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, পৃথিবীর সব দেশেই সাহিত্য সংস্কৃতিতে সুখ এবং খুশির কথা নানাভাবে এসেছে। রবীন্দ্রনাথের ভাবনা সুখ এবং খুশি বহুবার এসেছে। আবার কবির ভাবনায় কোথাও কোথাও সুখ-দুঃখ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:Duet Clasical Music | শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের যুগলবন্দিতে ভাসবে কলকাতা
এত কথা বলার কারণ একটাই। সোমবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক খুশি দিবস বা সুখ দিবস(International Day of Happiness)। ২০১৩ সাল থেকে ২০ মার্চ দিনটিকে খুশি দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে। ভুটানের দাবি মেনেই রাষ্ট্রপুঞ্জ (United Nation ) এই খুশি দিবস নির্ধারণ করেছে। ২০১২ সালের ১৮ জুন রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের এক অধিবেশনে এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। অধিবেশনে রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৯৩টি দেশের প্রতিনিধি এই দিবসটিকে স্বীকৃতি দেন। এরপর থেকেই প্রতি বছর বিশ্বের একাধিক দেশ এই দিনটি পালন করে থাকে।
এবছরের খুশি বা সুখ দিবসের থিম হল, 'মননশীল হও, কৃতজ্ঞ হও, দয়ালু হও। দেশ বিদেশের মনিষী এবং দার্শনিকরা মানুষকে বারবার খুশি বা সুখী থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, কখনও অন্যের প্রতি হিংসা করতে নেই, নিজের যা কিছু আছে, তা নিয়েই সুখী বা খুশি থাকা উচিত। পরশ্রীকাতরতা মানুষকে কখনও সুখ দেয় না। বরং মানুষকে সঙ্কীর্ণমনা করে তোলে। তার জন্যই যুগে যুগে দার্শনিকরা মানুষকে উদার হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে আব্রাহাম লিঙ্কন। অ্যালবার্ট কামু, দলাই লামার মতো বিশিষ্টরা তাঁদের সৃষ্টিতে, বক্তৃতায় বারবার মানুষকে সুখী এবং খুশি থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। আর এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের তো জুড়ি মেলাই ভার। তাঁর গানে, কবিতায়, উপন্যাসে নানাভাবে সুখ এবং খুশির কথা এসেছে নানা আঙ্গিকে। বিশ্বজুড়ে যখন নানা সংকটে মানুষ জর্জরিত তখন আন্তর্জাতিক সুখ দিবস কোনও ভালো বার্তা বয়ে আনুক, এটাই সকলের কামনা।
শেয়ার করুন