নয়াদিল্লি: আগামী পাঁচ বছরে মধ্যে বৈশ্বিক স্তরে চাকরি ক্ষেত্রে ভূকম্প আসতে চলেছে। চাকরি হারাতে চলেছেন ১৪ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১৪ লক্ষ মানুষ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে সম্প্রতি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক ব্যক্তির চাকরি (Job) হারানোর যে আশঙ্কা (Apprehension) দেখা দিয়েছে, তার কারণ হলো, অর্থনৈতিক দুর্বলতা (Economic Weakness) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence – AI) মতো বিভিন্ন প্রযুক্তিকে বহুজাতিক ও স্থানীয় কোম্পানিগুলির (Multinational and Local Companies) বেছে নেওয়া। জনপ্রিয় এক মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম (World Economic Forum – WEF) এই নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। ৮০০ কোম্পানিকে নিয়ে হওয়া ওই সমীক্ষায় (Survey) চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রায় সব সংস্থাই বলেছে, তারা আগামী দিনে আর্টিফিসিয়ান ইন্টেলিজেন্স নিযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। আর এআই (AI) প্রয়োগ হওয়া মানে তখন কর্মীসংখ্যাও (Employees) কম লাগবে। পাশাপাশি, অর্থনৈতিক মন্দাও (Economic Recession) একটি বড় বিষয়। খরচ কমাতে কর্মী সংখ্যা কমানোর ট্রেন্ড (Trend) চলছে বর্তমানে। বিশেষ করে প্রযুক্তি সংস্থায় (Tech Companies)। চলতি বছরে বিশ্বের প্রায় সব বড় প্রযুক্তি সংস্থাতেই গণছাঁটাই (Mass Layoff) হয়েছে। একধাক্কায় চাকরি গিয়েছে অসংখ্য কর্মচারীর। চিন্তার বিষয় হলো, আগামী দিনে চাকরি ক্ষেত্রে হার ফেরার সম্ভাবনা নেই, বরং পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হতে চলেছে।
আরও পড়ুন: Buddha Purnima | বুদ্ধ পূর্ণিমায় মানুন এই আচার-অনুষ্ঠান, ফিরবে সৌভাগ্য
ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম প্রতি বছরের মতো এবারও সুইজারল্যান্ডের দাভোসে (Davos, Switzerland) বিশ্বের অগ্রণী ব্যক্তিদের নিয়ে সম্মেলন আয়োজন করেছিল। তাতে যোগ দেওয়া বিভিন্ন কোম্পানির নিয়োগকর্তারা (Employers) বলেছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে ৬৯ মিলিয়ন (৬ কোটি ৯০ লক্ষ) নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে এবং ৮৩ মিলিয়ন (৮ কোটি ৩০ লক্ষ) পদ বিলুপ্ত করা হবে। অর্থাৎ সহজ অঙ্কে বললে, ১ কোটি ৪০ লক্ষ কর্মী কর্মহারা হতে চলেছেন আগামী ৫ বছরে। পরিসংখ্যান বিচারে, বর্তমান সময়ের নিরিখে ২ শতাংশ কর্মী সংখ্যার ঘাটতি হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসন্ন সময়পর্বে শ্রম বাজার (Labour Market) অনেক কিছুই প্রভাবিত করবে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবস্থা (Renewable Energy Systems) নতুন চাকরি তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ইঞ্জিনের ভূমিকা পালন করবে। উল্টোদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হতে থাকবে এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মুদ্রাস্ফীতিও (Inflation) উচ্চতর হতে শুরু করবে। ফলে বাধ্য হয়ে সংস্থাগুলিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়োগ করতে হবে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিতে। তা একদিকে যেমন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, তেমনই নেতিবাচক ভূমিকাও নেবে। তবে এটাও মনে রাখার বিষয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বাস্তবায়িত ও পরিচালিত করার জন্য নতুন ধরনের সক্ষম কর্মী লাগবে।
ডেটা বিশ্লেষক এবং বিজ্ঞানী (Data Analysts and Scientists), মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ (Machine Learning Specialists) এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের (Cybersecurity Experts) নিয়োগ ২০২৭ সালের মধ্যে গড়ে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। একই সময়পর্বে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্তার বহু চাকরি ও পদের বিলুপ্তি ঘটাবে এবং কিছু ক্ষেত্রে রোবট মানুষের জায়গা নিয়ে নেবে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে ২৬ মিলিয়ন রেকর্ড-কিপিং এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পদের চাকরি (Record-keeping and Administrative Jobs) কমে যেতে পারে। সম্ভাবনা রয়েছে, ডেটা এন্ট্রি ক্লার্ক এবং এগজিকিউটিভ সেক্রেটারিরা (Data Entry Clerks and Executive Secretaries) সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।