ঢাকা: ভারতকে চাপে ফেলতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে প্রো-পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত৷ এমনটাই দাবি দুই দেশের বিশিষ্টদের৷ তাঁরা বলেছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দু’দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমানকে পাকিস্তানের এজেন্ট ও খুনিদের উত্তরাধিকারী অ্যাখ্যা দিয়ে তাঁকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিষিদ্ধের দাবিও তুলেছেন তাঁরা।
দণ্ডিত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর দণ্ডিত পুত্র তারেক রহমানকে স্রেফ সন্ত্রাসবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করে দুই দেশের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, উগ্র জঙ্গিবাদী তালিবান নেতা হক্কানি বা বরাদরের সঙ্গে ওঁদের কোনও তফাত নেই।
ভয়াল ২১ অগস্ট উপলক্ষ্যে শনিবার রাতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কেন্দ্র (সিবিআইআর) আয়োজিত ‘ষড়যন্ত্রের উত্তরাধিকার’শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েনিবারে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।
২০০৪ সালের ২১ অগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছোড়া পাকিস্তানের তৈরি গ্রেনেডে নিহত হন ২৪ জন আওয়ামী লিগ নেতা-কর্মী, আহত হন কমপক্ষে ৪০০ জন।
১৯৭১, ১৯৭৫ ও ২০০৪ সালের একুশে অগস্ট একইসূত্রে গাঁথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, নারকীয় এসব হত্যাযজ্ঞ বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ এসব হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র এক বা একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা ছিল না৷ একটি আদর্শকে ধ্বংস করাই ছিল তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।
ওয়েবিনারে ভারতের বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)’র প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডেন্ট দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘মানুষের প্রাণ নিয়ে যারা খেলে তাদের রাজনৈতিক দল বলে গৌরবান্বিত করা হয়ে যায়। তারা তো সন্ত্রাসবাদী। যদিও আমার বলা উচিত নয়, তারপরও যা শুনছি তাতে তারেক রহমান বা খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক নেতা আমি বলতে পারব না। তারা তো সন্ত্রাসবাদী। আমার চোখে তালিবান হক্কানি আর বরাদরের সঙ্গে তাদের (খালেদা ও তারেক) কোনও তফাত নেই।’
এই অগস্ট মাসটা বাংলাদেশের জন্য শোকের মাস হওয়া উচিত নয়, শোক করার আর সময় নেই। এখন এটা প্রতিরোধের মাস। মোল্লা ওমর, লাদেন কিংবা তারেক রহমান বা খালেদা জিয়া৷ এরা কতগুলো নাম৷ এরা কতগুলো মশাল নিয়ে বেরোচ্ছে। সেই মশালটার নাম সন্ত্রাসবাদ-উল্লেখ করেন এ অঞ্চলে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আসা প্রাক্তন এই সামরিক কর্তা।
ভয়াল একুশে অগস্ট হামলায় আহত বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পঙ্কজ দেবনাথ এমপি সেদিনের ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতি তুলে ধরেন৷ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যেভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের রক্ষা করেছেন, পুরষ্কৃত করেছেন তেমনি তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে একুশে অগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের নিরাপদে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছেন, বিচারের পথ রুদ্ধ করে জজমিয়া নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। তাই তারা অতীতেও ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছেন, বর্তমানেও করে যাচ্ছেন।’
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবঃ) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার তাঁর বক্তব্যে বলেন, তারেক রহমান ও তার মা খালেদা জিয়া খুনি জিয়াউর রহমানের উত্তরাধিকারি। তাই তাদের হাত বারবার মানুষের হাতে রঞ্জিত হয়।
শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড ছুড়ে হত্যার চেষ্টা করে বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিস্তান বানানোর পরিকল্পনা চলছে৷ এমনই দাবি করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ৭১-এর পরাজিত শক্তি, ৭৫-এ জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যা এবং শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টা একই ষড়যন্ত্রের অংশ। জিয়া ও তার দোসররা ষড়যন্ত্রের যে বীজ বপন করেছিলেন খালেদা ও তাঁর পুত্র তারই উত্তরাধিকার। এদেরকে রাজনীতি থেকে বিতারিত না করলে বারবার ২১ অগস্টের মত ঘটনা ঘটবে।
ভারতের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল বলেন, ভারতকে শায়েস্তা করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে প্রো-পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের প্রধান বাধা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাই বারবার শেখ হাসিনার উপর এই হামলা।
২০০১ থেকে ২০০৬ এর বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চিত্র তুলে ধরে প্রবীণ এই সাংবাদিক বলেন, এই সময়টাতে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র গঠনের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। যা ভারত-বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই ছিল চরম হুমকির।
সাবেক সংসদ সদস্য ও যুব মহিলা লিগ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের গুপ্তচর দাবি করে বলেন, জিয়ার স্ত্রী-সন্তান ষড়যন্ত্রকারীদের সেই উত্তরাধিকার। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় জিয়া বাংলাদেশকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসেবে খালেদা-তারেক তা বাস্তবায়নের হাল ধরেন।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল তাঁর বক্তব্যে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখতে নতুন প্রজন্মকে ঐক্যবন্ধ প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
ভারতের ইনস্টিটিউট অব সোশাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ এর পরিচালক অরিন্দম মুখোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের বাইরে বসে কিছু মানুষ বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। তারা চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্তরাধিকার। এই ভার্চুয়াল ষড়যন্ত্রকারীদের রুখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।