আমেদাবাদ: মায়ের শেষকৃত্যের কিছুক্ষণ পরেই সরকারি কাজে নেমে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। শোকের চেয়েও কর্তব্যকেই অগ্রাধিকার দেওয়া মায়ের কাছেই শেখা। মাকে শুধু ভালোবাসা নয়, ভগবানের চোখে দেখতেন প্রধানমন্ত্রী। মা বলতে পাগল ছেলেই নানান সময়ে বলেছেন নানান কথা। দেশের মাটিতে তো বটেই, বিদেশেও তাঁর গুণবন্দনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মুখেই জানা গিয়েছে, হীরাবেন মোদি (Hiraben Modi) ছিলেন বিরাট হৃদয়ের নারী। তাঁর কাছে ধর্মের অর্থ ছিল মনুষ্যত্ব। মোদির এক বাল্যবন্ধু আব্বাসের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে বড় হয়েছে হীরাবেনের কাছেই।
মোদি বলেছিলেন, মায়ের কাছেই আব্বাসের ছেলে আমাদের মতো করেই থাকত। নিজে লেখাপড়া না শিখলেও মা ওকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। ইদে ও যা পছন্দ করত তাই রেঁধে দিতেন। দেশি টোটকা বানাতে পারদর্শী হীরাবেনকে গ্রামের ছেলেমেয়েরা দোস্সি মা বলে ডাকত। কারণ সাধারণ রোগব্যাধিতে জরিবুটি বানিয়ে দিতেন আনপড় হীরাবেনই। ছেলে প্রহ্লাদ মোদি বলেন, কোনওদিন স্কুলের চৌকাঠে পা না দিলেও মা ছিলেন আমাদের গ্রামের ডাক্তার।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: আপনার মা আমাদেরও মা, হাওড়ায় প্রধানমন্ত্রীকে সান্ত্বনা মুখ্যমন্ত্রীর
অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মায়ের কাছেই স্বচ্ছ ভারত অভিযানের প্রথম পাঠ পেয়েছিলেন মোদি। সেকথা স্বীকার করতে কার্পণ্যও করেননি তিনি। মোদি একবার বলেছিলেন, যখনই বাড়ি যেতাম, মা নিজের হাতে মিষ্টি খাইয়ে দিতেন। মায়ের আঁচলে সবসময় একটি রুমাল বা ছোট তোয়ালে বাঁধা থাকত। এই বয়সেও খাওয়ার শেষে মা সেই কাপড় দিয়ে আমার মুখ মুছিয়ে দিতেন। নাবালিকা বয়সে বিয়ে হওয়া হীরাবেনের ছোট থেকে প্রিয় খাবার ছিল আইসক্রিম। আইসক্রিম দেখলে নিজেকে ঠেকাতে পারতেন না। প্রহ্লাদ বলেন, খুব ভালোবাসতেন আইসক্রিম খেতে।
কিন্তু, যে বয়সে আইসক্রিম খাওয়ার শখ ছিল, সেই সময়টাই কেটেছে কঠিন দারিদ্রের মধ্য দিয়ে। ১৯২৩ সালে গুজরাতের মেহসানা জেলায় বিসনগর গ্রামে জন্ম হীরাবেনের। সাবালিকা হওয়ার আগেই তাঁর বিয়ে হয় দামোদরদাস মূলচাঁদ মোদির সঙ্গে। চলে আসেন শ্বশুরবাড়িতে। গ্রাম থেকে কয়েক কিমি দূরে বদনগরে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে না ছিল একটা জানালা, না ছিল বাথরুম। সন্তানদের বড় করতে পরের বাড়ির বাসন মাজতেন হীরাবেন। থালা ধুতেন, জল ভরতেন, দিনমজুরের মতো কাজ করতেন।
এতটাই সহজ-সরল ছিল তাঁর জীবনযাপন, যে প্রধানমন্ত্রীর মা হওয়ার পরেও এতটুকু টোল খায়নি তাঁর আগের আচরণে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেও যখন একটু একটু করে বিখ্যাত হয়ে উঠছিলেন মোদি, তখনও কোনওদিন প্রচারের আলোয় আসতে চাননি হীরাবেন। ২০১৪ সালে মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনও দেখা যায়নি হীরাবেনকে।