ইস্ট বেঙ্গলের খেলা থাকলেই তাদের সমর্থকদের মনে আশঙ্কার মেঘ জমে। দুশ্চিন্তা হয় , তাদের প্রিয় দল আবার হেরে যাবে না তো। সদ্য শেষ হয়েছে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ। তাতে চারটে ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল একটাতেও জিততে পারেনি। একশো তিন বছরের ক্লাবের পক্ষে যা অত্যন্ত লজ্জার। আই এস এল-এ তাদের অবস্থা একটু ভাল। চার ম্যাচের মধ্যে তিনটেতে হারলেও জিতেছে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে ইস্ট বেঙ্গল মুখোমুখি হচ্ছে চেন্নাইয়ান এফ সি-র। আই এস এল-এ চেন্নাই দু বারের চ্যাম্পিয়ন। তবে ইদানীং তাদের অবস্থা যে খুব ভাল তা বলা যাবে না। এবার তারা প্রথম ম্যাচে কলকাতায় এসে হারিয়ে দিয়ে গিয়েছিল এটিকে মোহনবাগানকে। তার পর নিজেদের মাঠে ড্র করেছে বেঙ্গালুরু এফ সি-র সঙ্গে। কিন্তু তিন নম্বর ম্যাচে হেরে গেছে এফ সি গোয়ার কাছে। তিন ম্যাচে তাদের পয়েন্ট চার। লিগ টেবলে আছে সাত নম্বরে। আর ইস্ট বেঙ্গল আছে নয় নম্বরে। তাদের চার ম্যাচে তিন পয়েন্ট।
ডার্বিতে মোহনবাগানের কাছে হারার পর ইস্ট বেঙ্গল টিমে সহকারী কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন তারকা সম্মুগম ভেঙ্কটেশ। ইস্ট বেঙ্গল যে বার সুভাষ ভৌমিকে কোচিংয়ে পাঁচটি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেই টিমে ছিলেন তিনি। পরে মোহনবাগানেও খেলেছেন। সম্মুগম অতীতে স্টিভন কনস্ট্যানটাইনের আমলে ভারতীয় দলের সহকারী কোচ ছিলেন। তাঁরই আহ্বনে ভেঙ্কটেশ আবার যোগ দিয়েছেন ইস্ট বেঙ্গলে। তাঁর যোগদানে ইস্ট বেঙ্গলের কোনও লাভ হয় কি না তা সময়ই বলবে। আপাতত ইস্ট বেঙ্গলের লক্ষ্য চেন্নাইকে হারানো। গত দুটো আই এস এল-এ দুই দলের চারটি ম্যাচেই কোনও ফল হয়নি। এবার ইস্ট বেঙ্গল জিততে মরিয়া। কিন্তু তাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে নব্বই মিনিটের খেলায় কোনও ধারাবাহিকতা নেই। বিশেষ করে সত্তর মিনিটের পর টিমটা খেই হারিয়ে ফেলছে। ডিফেন্স ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। শুরুর দিকে দুই সেন্টার ব্যাক ইভান গঞ্জালেস কিংবা চুংনুঙ্গা লালের মধ্যে যে সমঝোতা থাকছে শেষ দিকে তা থাকছে না। এটা ইস্ট বেঙ্গলের বড় সমস্যা। গোলকিপার কমলজিৎ সিং-ও যে খুব ভাল খেলছেন তাও নয়। ডার্বিতে তাঁর দোষেই ইস্ট বেঙ্গল প্রথম গোলটা খেয়েছে। চেন্নাইকে হারাতে হলে এই তিনজনকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নির্ভুল খেলতে হবে।
ইস্ট বেঙ্গলের সামনের দিকটা যে খুব ভাল তাও নয়। এক ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার এলিয়ান্দ্রো ইতিমধ্যেই বাতিলের খাতায় নাম লেখাতে চলেছেন। জানুয়ারি উইন্ডোতে তাঁর বদলি খোঁজা শুরু হয়েছে। আরেক ব্রাজিলিয়ান অ্যালেক্স লিমা ভাল শুরু করেছিলেন। কিন্তু চোট পেয়ে প্রথম একাদশের বাইরে। এই পরিস্থিতিতে ভরসা জোগাচ্ছেন দুই মিডফিল্ডার কিরিয়াকু এবং জর্ডন ডোহার্টি। মাঝ মাঠে অনেকটাই ভারসাম্য জোগাতে পেরেছেন তাঁরা। গোল করার জন্য ইস্ট বেঙ্গল তাকিয়ে আছে ক্লেটন ডিসিলভার দিকে। গত বছর বেঙ্গালুরুর হয়ে যে ফুটবল খেলেছেন এই ব্রাজিলিয়ান তার ধারেকাছে যেতে পারেননি এখনও। তবে চেষ্টা করছেন। এই যা ভরসা।
এই অবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ভারতীয়দের পারফরম্যান্স। দুই সাইড ব্যাক সার্থক গোলুই এবং জেরি খারাপ খেলছেন না। ওভারল্যাপেও উঠছেন। বল বাড়াচ্ছেন। কিন্তু ভি পি সুহের, হাওকিপ, নাওরেম মহেশ সিং কিংবা শৌভিক চক্রবর্তীদের খেলায় অনেক ঘাটতি আছে। তাই টিমটার খেলা এখনও দানা বাঁধেনি। প্রতিদিনই কোচ স্টিভন সাফাই গাইছেন, নতুন দল। সময় দিতে হবে। কিন্তু সময় দিতে দিতে লিগটাই না শেষ হয়ে যায়।
চেন্নাই টিমে অনেক বঙ্গসন্তান। গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার, লেফট ব্যাক নারায়ণ দাস, স্ট্রাইকার রহিম আলি, মিডফিল্ডার সৌরভ দাস, সজল বাগরা সবাই বাংলার। কিন্তু তাদের টিমের হৃৎপিন্ড হচ্ছেন অনিরুদ্ধ থাপা। চেন্নাই অধিনায়ক প্রথম আই এস এল থেকেই চেন্নাইয়ের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে মহম্মদ রফিক, জবি জাস্টিনরা আছেন যাঁরা আই এস এল-এর অভিজ্ঞ প্লেয়ার। নতুন কোচ জার্মানির টমাস ব্রাডরিকের বিরাট ভরসা কোয়ানে কারিকারি অবশ্য থাকছেন না এই ম্যাচে। তাঁর চোট আছে। তবে ক্রোয়েশিয়ার পিটার শিশকোভিচ আছেন, যিনি গোলটা চেনেন। কিন্তু চেন্নাই যে খুব শক্তিশালী দল তা বলা যাচ্ছে না। এই সুযোগটা কি ইস্ট বেঙ্গল নিতে পারবে?