কোহিমা: ৬০ বছরের প্রতীক্ষার অবসান। ভোটগণনার মাঝপর্বেই নাগাল্যান্ড বিধানসভা পেল একজোড়া মহিলা বিধায়ক (Women MLA)। এনডিপিপির (NDPP) প্রার্থী এস ক্রুসে এবং হেকানি জাখালু ইতিহাস রচনা করলেন ছোট্ট এই উত্তর-পূর্ব পার্বত্য রাজ্যে। ডিমাপুর ৩ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জাখালু ১৫৩৬ ভোটে জিতে রাজ্যের প্রথম বিধায়ক নির্বাচিত হন। এ বছর মোট চারজন মহিলা প্রার্থী বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, নাগাল্যান্ড (Nagaland) রাজ্য গঠনের (Statehood) ৬০ বছর পেরিয়ে গেলেও, কেউ কথা রাখেনি। এই ভোটের আগে পর্যন্ত একজনও মহিলা বিধায়ক (Woman Legislature) পায়নি উত্তর-পূর্বের এই পার্বত্য রাজ্য (North-Eastern State)। এবারের বিধানসভা ভোটে (Nagaland Assembly Election 2023) ১৮৩ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৪ জন মহিলা প্রার্থী শেষপর্যন্ত ময়দানে ছিলেন।
আরও পড়ুন: Naosad Siddiqui: ৪০ দিন পর জামিন পেলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি
আরও পড়ুন: Supreme Court On CEC: মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনার পদে নিয়োগে কমিটি গঠন সুপ্রিম কোর্টের
সেটা ছিল ১৯৭৭ সাল। লোকসভা নির্বাচনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হোকিসে সেমাতোকে হারিয়ে দিয়েছিলেন রানো এম শাইজা। সেটাই ছিল জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রথম কোনও মহিলার সংসদে পা দেওয়া। তার ৪৫ বছর পর গতবছর বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী এস ফাঙ্গং কোনায়ক শাসক জোট এনডিএ-র সর্বসম্মত প্রার্থী হিসেবে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন।
শুরু থেকেই ভোটে নাগা মহিলাদের পিছনে ফেলে রাখা হলেও পড়াশোনায় তাঁরা কিন্তু অনেক এগিয়ে। সাক্ষরতায় জাতীয় স্তরের পরিসংখ্যান যেখানে ৬৪.৬৩ শতাংশ। সেখানে নাগা মহিলাদের ৭৬.১১ শতাংশ সাক্ষর। এমনকী সরকারি ও বেসরকারি চাকরি ক্ষেত্রেও মহিলারাই এই রাজ্যে এগিয়ে রয়েছেন।
শুধু তাই নয়, নাগা নাগরিক সমাজেও মহিলাদের যথেষ্ট প্রতিপত্তি আছে। কিন্তু, নির্বাচনী অঙ্গনে তাঁরা এতদিন ব্রাত্য ছিলেন। পরম্পরাগতভাবে নাগা মহিলাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও ক্ষেত্রে রাখা হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে মহিলাদের পর্দানসীন করে রাখাই রীতি ছিল। ঘরকন্না করা, বাচ্চা দেখভাল করা ইত্যাদির বাইরে তেমন কোনও অধিকার ছিল না।
পুরুষরা ছিল মুক্ত। তাদের কাজ ছিল উপার্জন ও গ্রামের রক্ষা করা। পুরুষরা নারী-বিদ্বেষী না হলেও মহিলাদের আর কোনও গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এমনটাই জানান, রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রথম সভানেত্রী সানো ভামুজো। তিনি বলেন, তবে সময়ের পরিবর্তন এবং শিক্ষার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাপনের ধরন ও মানসিকতারও বদল ঘটেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারি অফিসে মহিলাদের অধিক সংখ্যায় চাকরি করতে। যা সেখানকার মানুষের পক্ষে মঙ্গল হয়েছে। পুরুষশাসিত যে সমাজ ছিল, তার থেকে অনেকটাই আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি। শুধু জনপ্রতিনিধিত্বের জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন নাগা মহিলারা, বলেন তিনি।
প্রথম নাগা সাংসদ রানো শাইজার বোন সানো ভামুজো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভামুজো ফেসাওয়ের স্ত্রী। সেই হিসেবে নাগাল্যান্ডের রাজনীতিতে তিনি কোনও নতুন মুখ নন। তিনি বলেন, মহিলাদেরই উঠে দাঁড়াতে হবে এবং ভোটে লড়াই করতে হবে। যতক্ষণ না আমরা ভোটে দাঁড়াব, তাহলে কী করে বিধানসভার চৌকাঠে পা রাখব, প্রশ্ন তোলেন তিনি। এবারের ভোটে যে চারজন ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের জয় কামনা করেছিলেন তিনি। তা তাঁরা যে দলেরই হন না কেন। এবারের নির্বাচনে শাসকদল এনডিপিপি (NDPP) ২ জন মহিলা প্রার্থী দিয়েছিল। দুটিতেই জয় হাসিল করেছে তারা। অন্যদিকে, তাদের জোট বিজেপি (BJP) একটিতে এবং কংগ্রেস (Congress) একটিতে মহিলা প্রার্থী দিয়েছে।