কলকাতা: রেড রোড থেকে লাল কেল্লায় যাওয়ার ডাক৷ নেতাজির জন্মদিনে দিল্লি চলোর ডাক৷ সম্ভবত এই ভাবেই রবিবার নেতাজির জন্মদিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিকে ব্যাখ্যা করা যায়৷ নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতির যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে তাতে পূর্ণতা দিলেন মমতা৷ সরাসরি দিল্লি চলোর ডাক দিলেন তিনি৷ দিল্লির বিজেপি সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানালেন৷ রবি ঠাকুরের গানকে হাতিয়ার করেই ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’ বলে বুঝিয়ে দিলেন প্রয়োজনে কংগ্রেসকে ছাড়াই বিজেপি বিরোধী অভিযান চলবে৷
নেতাজির জন্মজয়ন্তী এবং নেতাজি ট্যাবলো ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরেই মোদি-মমতা সরকারের চাপানউতর চলছে৷ কেন্দ্র বাংলার নেতাজিকে নিয়ে ট্যাবলো বাদ দিয়েছে৷ তারপরেই মমতা সরকারের অভিযোগ, নেতাজিকে অপমান করেছে মোদি সরকার৷ কেন্দ্রের চাপ বেড়েছে সম্প্রতি আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েও৷ স্থানান্তর ঘটানো হয়েছে অমর জওয়ান জ্যোতির৷ কেন্দ্রীয় সরকার ইতিহাস মুছে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল-সহ বিরোধীরা৷ এরই মধ্যে ইন্ডিয়া গেটে নেতাজি মূর্তি বসানোর কথা ঘোষণা করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী৷ এই সিদ্ধান্ত যেন রাজনৈতিক আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে৷ তৃণমূল সরব হয়েছে এই অভিযোগ তুলে যে নেতাজির আবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি৷
রবিবার রেড রোডে নেতাজি জন্মজয়ন্তী পালনের মঞ্চ থেকে সেই আক্রমণকেই সপ্তমে তুললেন মমতা৷ কেন ট্যাবলো বাতিল করা হয়েছে তার কারণ জানতে চাইলেন৷ তাঁর কথায়, ‘মূর্তি স্থাপন করে বা আগুন নিভিয়ে দেশের ঐতিহ্যকে ভোলানো যাবে না৷ নেতাজির ট্যাবলো বাতিল করে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাবে না৷ মাতঙ্গিনী থেকে বিবেকানন্দ, নেতাজি থেকে গান্ধীজি স্বাধীনতা আন্দোলনে সবার ভূমিকা প্রতক্ষ্য করেছে এই বাংলা৷’ এরপরই নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কটাক্ষের সুরে মমতা বলেন, ‘বিজেপি সরকার বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসকে মুছে দিতে চাইছে৷ মানুষকে ভুল বোঝাতে চাইছে৷ এই জনবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবেই৷’
আরও পড়ুন: Mamata pays tribute to Netaji: বঙ্গে নেতাজির মস্তিষ্কপ্রসূত ‘প্ল্যানিং কমিশন’ চালু হবে, ঘোষণা মমতার
নেতাজির জন্মজয়ন্তীকে শুধু কেন্দ্র বিরোধী সুর চড়ানোই নয়, কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও বার্তা দিয়ে রাখলেন মমতা৷ হাতিয়ার করলেন বিশ্বকবির গানকে৷ তার ‘একলা চলো’ গেয়ে বুঝিয়ে দিলেন কোনও আন্দোলনে তাঁর পাশে কেউ না থাকলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি লড়েছেন এবং লড়বেন৷ মমতার কথায়, গণতান্ত্রিক দেশে যে কোনও প্রতিবাদে সবাইকে প্রথমে আহ্বান জানানো হয়৷ যদি কেউ সেই আহ্বানে সাড়া না দেন তখন প্রয়োজনে একলাই এগিয়ে যেতে হবে৷ দিন কয়েক আগে অনেকটা এভাবেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়ায় অভিযোগ করেছিলেন, কংগ্রেসের কাছে বার্তা পাঠানোর পরেও তারা ইতিবাচক পদক্ষেপ করেনি৷ তারও আগে শরদ পাওয়ারকে পাশে নিয়ে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, বিজেপি বিরোধী আন্দোলনে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে৷ আর আজ যেন নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে ‘একলা চলোর’ কথা বলে সেই কংগ্রেস বিরোধিতাকে মান্যতা দিলেন আরেকবার৷