মুর্শিদাবাদ: রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়েও কাটমানির খেলা চলছে বলে অভিযোগ তুলল বিজেপি। মঙ্গলবার দলের রাজ্য সভাপতি ধনিয়াখালীতে সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, হাসপাতালগুলিতে অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের মধ্যে একটা চক্র কাজ করে। সেই চক্রের ঠিক করে দেওয়া রেটেই রোগীর পরিজনকে টাকা দিতে হয়। তাদের মর্জিমতো টাকা না দিলে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা মেলে না।
সুকান্ত আরও বলেন, এখানেও কাটমানির খেলা চলছে। এই কাটমানির টাকা শাসকদলের নেতাদের কাছে পৌঁছয়। তৃণমূলের মদতেই সরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্সের সিন্ডিকেট চলছে। প্রসঙ্গত, এদিন মুর্শিদাবাদের সালারে দুই অ্যাম্বুল্যান্স চালকের বিবাদের জেরে মৃত্যু হয় রোগীর। রবিবারই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স না মেলায় এক ব্যক্তি তাঁর ৫ মাসের ম্রত শিশু সন্তানের দেহ ব্যাগে পুরে কালিয়াগঞ্জে রওনা দেন বাসে চেপে। তা নিয়ে তোলপাড় চলছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে সুকান্ত বলেন, দু’দিন আগেই কালিয়াগঞ্জের অমানবিক ঘটনা দেখেছি আমরা। তারপর আজ ঘটল সালারের এই ঘটনা।
মঙ্গলবার দলের প্রবাস বৈঠকে যোগ দিতে ধনেখালিতে আসেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। অ্যাম্বুল্যান্স কাণ্ড নিয়ে- তাঁর মন্তব্য, রাজ্যের প্রশাসনই যখন অমানবিক, তখন অমানবিক ছবি তো ধরা পড়বেই।
এদিন তিনি ববিতা সরকারের চাকরি বাতিল প্রসঙ্গে বলেন, এই ঘটনা প্রমাণ করছে যে পর্ষদ দুর্নীতিগ্রস্ত এবং পর্ষদের অপদার্থতার জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। গোটা বিষয়টাই ভুলে ভরা। সুকান্ত বলেন, যাদের চাকরি গিয়েছে সবাই দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছেন এমনটা তো নয়। এদের মধ্যে অনেকের চাকরি গিয়েছে পর্ষদের অপদার্থতার জন্য, পর্ষদ সঠিক সময়ে পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য। যে পদ্ধতিতে রিক্রুটমেন্ট হয়েছে সেটা ঠিক হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজনকে চিনি যাদের অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয়েছিল কিন্তু পর্ষদের ভুলের জন্য তাদের চাকরি গিয়েছে। আমি আশা করব আদালত থেকে তারা সুবিচার পাবেন।
তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যে কথা বলছেন। অন্যের ঘাড়ে কীভাবে বন্দুক রেখে চালাতে হয় সেটা মুখ্যমন্ত্রী থেকে শিখতে হবে। অলিম্পিকে যদি এরকম কোন ইভেন্ট থাকতো তাহলে ভারতবর্ষ প্রতি বছর গোল্ড পেত। কুড়মি সমাজ নিয়ে দিলীপ ঘোষের মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, আমার মনে হয় কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে কর্মীদের সঙ্গে। আমরা কুড়মি ব্যাপারে সহানুভূতিশীল। কুড়মিদের যদি কোন আঘাত লেগে থাকে। আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলব। আমরা কুড়মি সমাজের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুড়মি সমাজও আমাদের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে।
উল্লেখ, মঙ্গলবার আবারও অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে দুর্ভোগ। সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের দাদাগিরির ফলে অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরেই মৃত্যু হল এক মহিলার। সোমবার রাতে মুর্শিদাবাদ জেলার সালারের বাসিন্দা শাকিব আলি তাঁর অসুস্থ মাকে নিয়ে হাসপাতালে (Hospital) চিকিৎসা করাতে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা (Doctors) কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন। তখন হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স না নিয়ে রোগীর পরিবার হাসপাতালের বাইরে থেকে পরিচিত অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে কলকাতা যেতে চাইলেই প্রথমে রোগী পরিবারের সঙ্গে হাসপাতালের থাকা অ্যাম্বুল্যন্স (Ambulance) চালকদের তুমুল বচসা শুরু হয়। রোগী (Patient) পরিবারকে চাপ দেওয়া হয় হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করার জন্য। রোগীর পরিবার রাজি না হওয়ায় তাঁদের মারধর করা হয় এবং বাইরে থেকে নেওয়া অ্যাম্বুল্যান্সটি আটকে রেখে ভাঙচুর করা হয়। সেই সময়েই অ্যাম্বুল্যান্স এর ভিতরেই চিকিৎসা না পেয়ে ওই মহিলার মৃত্যু হয়।