হাওড়া: ঢাকে কাঠি পরে গিয়েছে, রাজ্য জুড়েই শুরু হয়েছে পুজোর আমেজ (Durga Pujo)। তবে থিমের চাকচিক্য আসুক, বনেদী বাড়ির (Bonedi Barir Durga Pujo) ঐতিহ্যবাহী পুজোর খোঁজে আজও ঘুরে বেড়ায় বাঙালি। সেই টানেই পুজোয় শহর থেকে বহু মানুষ ছুটে আসেন আমতার প্রত্যন্ত গ্রাম অমরাগড়ীতে। অমরাগড়ীর রায় পরিবারের ঐতিহ্যবাহী পুজো দেখতে ভিড় করেন বহু মানুষ। জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এই পুজো এবার ৩০৪ বছরে পা রাখল।
কথিত আছে, ১১২৬ সালে বর্ধমান রাজপরিবারের বংশধর শান্তিমোহন রায় বাণিজ্য করতে যাচ্ছিলেন রূপনারায়ণ নদী দিয়ে। বাণিজ্য করতে যাওয়ার পথে তিনি আমতার জয়পুরের অমরাগড়িতে নোঙর করেন রাত্রিযাপনের জন্য।সেদিন নদীতীরে রাত্রিবাসের সময়ে শান্তিমোহন স্বপ্নাদেশ পান এই এলাকায় গজলক্ষী পুজো করতে হবে। এর পরই গজমাতা দেবীর মন্দির তৈরি করে সেখানে লক্ষ্মীপুজোর সূচনা করেন শান্তিমোহন। কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ হয় না। শান্তিমোহন আবারও এক স্বপ্নাদেশ পান।সেই স্বপ্নে দেবী তাঁকে বলেন– ‘ওই একই জায়গায় আমারও আরাধনা করো।’ অর্থাৎ, দুর্গার আরাধনা করার নির্দেশ আসে। শুরু হয় সেই পুজোও।
আরও পড়ুন: হাওড়ার আমতার রসপুরের রায় পরিবারের পুজোর সঙ্গে মিশে রয়েছে ইতিহাস
দেবীর আরাধনার পাশাপাশি ওই এলাকায় জনবসতি গড়ে তুলতে ও এলাকার সার্বিক উন্নয়নে শান্তিপ্রসাদ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মাঝে অনেক গুলো বছর কেটে গিয়েছে। কালের অমোঘ নিয়মে টেরাকোটার তৈরি গজমাতা মন্দিরের আজ জীর্ণ দশা। পাশেই গড়ে উঠেছে দুর্গা দালান। সেই ঠাকুর দালানেই মা’য়ের পুজো হয়। সেখানেই একচালা প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে। তবে রীতিনীতিতে আজও অটুট রায় পরিবারের তিনশ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই দুর্গাপুজো। পুজোর জন্য তৈরি হয় হাজার হাজার নাড়ু। থাকে নানা উপাচার। তবে সময়ের সাথে সাথে বলিপ্রথা বন্ধ হয়েছে। কর্মসূত্রে বাড়ির অনেকেই বাইরে থাকেন তবে সকলেই পুজোর ক’টা দিন গ্রামের বাড়িতে এসে একসাথে মিলিত হন। বাইরে থেকেও অজস্র মানুষ এই পুজো দেখার টানে ছুটে আসেন। তবে সময়ের সাথে সাথে ঐতিহ্যকে ধরে রাখলেও মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুজোর বিপুল খরচ। রায় পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আর্থিক সমস্যার কারণে পুজোর জাঁকজমক অনেকটাই কমলেও ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও আন্তরিকতায় অটুট অমরাগড়ী রায় পরিবারের দুর্গাপুজো।
দেখুন আরও খবর: