২০২২ সালে দাঁড়িয়েও আদালতে এমন সওয়াল শুনতে হবে, ভাবতে পারেনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড়। শুক্রবার একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এক আইনজীবীকে বলতে শোনা যায়, মেয়েরা সমাজের বোঝা। শুনে অবাক বিচারপতি চন্দ্রচুড়। ওই আইনজীবীকে তিনি বলেন, মেয়েরা কখনওই বোঝা নয়। দয়া করে সংবিধানে চোদ্দো ধারার দিকে একটু চোখ বোলালেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি এস বোপান্নার ডিভিসন বেঞ্চে একটি ভরণপোষণ মামলার শুনানি চলছিল। মামলাকারী এক তরুণী তাঁর বিচ্ছিন্ন বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণের দাবি করেছেন। ওই তরুণীর মা মারা গিয়েছেন। সেই মামলাতে তরুণীর বাবার আইনজীবী শুনানিতে মেয়েরা বোঝা বলে মন্তব্য করে বসেন।
ওই তরুণী নিজেও একজন আইনজীবী। বিচারপতি চন্দ্রচূড় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে বলেন, অনুগ্রহ করে তরুণীটিকে আইন পরীক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। তারপরই তিনি স্বাবলম্বী হবেন। বাবার ওপর নির্ভর করতে হবে না। তিনি কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন, তার পরামর্শ দেওয়ার জন্য আইনজীবীকে অনুরোধ করেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তরুণীর আইনজীবী অবশ্য আদালতে জানান তিনি ইতিমধ্যেই পরীক্ষা দিয়েছেন।
বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানতে চান, তিনি কি বিচারক? জবাবে আইনজীবী জানান তিনি প্রিলিম দিয়েছেন ফল প্রকাশ হতে বাকি আছে। বিচারপতি তরুণীকে বলেন পড়াশোনা ভাল করে করুন। এমন বাবার ওপর ভরসা করার দরকার নেই। ভাল করে পড়াশোনা করলে ফলও ভাল হবে। তরুণী বাবার উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, এমন মেয়ের জন্য আপনার গর্ব করা উচিত। আপনি কেবল অভিযোগ করছেন, মেয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলে না, এই করে না, সেই করে না ইত্যাদি।
এরপর বিচারপতি ওই তরুণীকে বলেন আপনি কি বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন? না বললে এখনই কথা বলুন। তিনি এজলাসেই বাবাকে মেয়ের দিকে এগিয়ে আসতে বলেন। পরে কথা হয় দুজনের। গত তেত্রিশ বছরে এই প্রথম বাবা ও মেয়ের কথা হল। এমনটাই আদালতে জানান ওই ব্যক্তির আইনজীবী। আদালত এরপর দু’পক্ষকেই ক্যান্টিনে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন দুই আইনজীবীকে।
২০০০ সালের ৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট ওই তরুণী এবং তাঁর মাকে আড়াই লাখ করে টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন ব্যক্তিটিকে। ২০২১ ৬ সেপ্টেম্বর তরুণীর মায়ের মৃত্যু হয়। আদালতে অভিযোগ করা হয়, দু’জনের কেউই ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। সেই মামলারই শুনানি চলছিল শীর্ষ আদালতে।