কলকাতা: হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে রায়নার নিখোঁজ নাবালিকার (Rayna Missing Girl) তদন্তে নামল সিবিআই (CBI)। টিউশন পড়তে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল অষ্টম শ্রেণির নাবালিকা। তারপর থেকে নিখোঁজ রায়নার (Rayna) অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও নিখোঁজ নাবালিকার হদিস পায়নি পরিবার। এবার সেই ঘটনার তদন্তে নামল সিবিআই। বুধবার সিবিআইয়ের তিন সদস্যের তদন্তকারী দল পূর্ব বর্ধমানের রায়নায় নাবালিকার বাড়িতে পৌছায়। সেখানে গিয়ে সিবিআইয়ের অফিসাররা প্রথমে নাবালিকার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে
ঘটনার কথা জানেন।পরে তারা এলাকা ঘুরে দেখতে দখতে স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গেও কথা বলেন। সিবিআই অফিসাররা তদন্তে নামায় মেয়েকে খুঁজে পাওয়ার আশা তৈরি হয়েছে পরিবারের।
আদিবাসী পরিবারের নাবালিকা নিখোঁজ হওয়ার পর পেরিয়ে গিয়েছে সাত মাস। দীর্ঘদিন তদন্ত চালিয়েও পুলিশ বা সিআইডি কেউই পূর্ব বর্ধমানের রায়নার আদিবাসী পরিবারের ওই নাবালিকা ছাত্রীর হদিশ পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত নাবালিকা নিখোঁজ কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইকে দেন। আগামী ১৩ মার্চ নাবালিকা নিখোঁজ সংক্রান্ত মামলার পরিবর্তী শুনানি।ওইদিন সিবিআইকে ছাত্রী নিখোঁজ কাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ বিচারপতির। পুলিশ ও পরিবার সৃত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩
সালের ৯ অগাস্ট সন্ধ্যায় রায়না থানা এলাকায় ওই নাবালিকা ছাত্রী টিউশন পড়তে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। সে স্থানীয় হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীতে পড়ত। ওইদিন থেকে ছাত্রী নিখোঁজ। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করেও ছাত্রীর খোঁজ না পেয়ে তার মা ১৭ আগষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে রায়না থানা । ছাত্রীকে অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ সফিকুল ও শেখ জসীমউদ্দিন সেখ নামে দুই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। জেলার খণ্ডঘোষ থানার লতিফপুর ও বাদুলিয়ায় তাদের বাড়ি। দু’দফায় ৭ দিন তাদের হেফাজতে নিয়েও পুলিশ ওই ছাত্রীর হদিশ উদ্ধার করতে পারেনি। দ্বিতীয় দফার ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ধৃতদের ফের আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তের প্রয়োজনে ধৃতদের আরও ৭ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানান রায়না থানার তদন্তকারী অফিসার। সেই আবেদনও মঞ্জুর করেন সিজেএম।কিন্তু তার পরেও পুলিশ নাবালিকাকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয় ।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব-১২)
মেয়েকে খুঁজে পেতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ছাত্রীর পরিবার। পুলিশের তদন্তে উদাসীন মনোভাব দেখে গত ১৫ জানুয়ারি সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পুলিশের হাতে মামলা থাকাকালীন দু’জন গ্রেপ্তার হলেও ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশ চার্জসিট না দেওয়ায় জামিন পেয়ে যায় অভিযুক্ত সফিকুল সেখ ও জসিমউদ্দিন সেখ। আর সিআইডি তদন্তে নেমে কয়েকজনকে শুধু জেরা করে মাত্র । তারই মধ্যে পরিবার জানতে পারে, তাদের মেয়েকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে অন্যত্র নিয়ে গিয়েছে খণ্ডঘোষের লতিফপুর এলাকার সফিকুল সেখ ও বাদুলিয়া এলাকার জসিম সেখ। পরিবারের দাবি জসিম সকলের সামনে স্বীকার করেছিল সে মেয়েটিকে বাইকে চাপিয়ে স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল সফিকুলের কাছে। পরিবারের আরও দাবি, তারা অভিযুক্তদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল।। নাবালিকা অপহরণকারীদের কঠিন শাস্তি ও নাবালিকাকে উদ্ধাররের দাবিতে গত ১২ অক্টোবর ভারত জাকাত মাঝি পরগনা নামে আদিবাসী সংগঠন রায়নার শ্যামসুন্দর বাজার মোড়ে পথ অবরোধ করে। শেষ পর্যন্থ ছাত্রী নিখোঁজ কাণ্ডের তদন্তভার হাইকোর্ট সিবিআইকে দেওয়ায় খুশী হন নাবালিকার মা জয়ন্তী সরেন।
এদিন নিখোঁজ ছাত্রীর মা জয়ন্তী বলেন, বহু খোঁজাখুজি করার পর আমার মেয়ের কোন হদিস আজ অবধি পাই নি।মেয়ে বেঁচে আছে কি নেই তাও জানিনা। তবুও আশ করছি সিবিআই অফিসাররা গোটা দেশ জুড়ে খোঁজ চালিয়ে আমার মেয়ের হদিশ উদ্ধার করতে পারবে”। নাবালিকার দিদিমা মালতি মুর্মু বলেন,’পুলিশ ও সিআইডি কিছুই করতে পারেনি। এখন সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে। আমরা আমাদের মেয়েকে ফিরে পেতে চাই“।
অন্য খবর দেখুন