এক চিটিংবাজ কনভিক্টেড আসামি মনোরঞ্জন রায় ২০২৩-এ হঠাৎই জানালেন, তিনি কৌস্তুভ রায়কে টাকা দিয়েছেন। কীভাবে জানালেন? চার বছরের মামলা চলাকালীন জেরাতে সব জানালেন, কেবল জানালেন না তিনি একটা হিসেবের খাতার হদিশ, একবারও নিলেন না কৌস্তুভ রায়ের নাম। জেলে বসেই সেই হিসেবের কিছু পাতাও ইমেল করলেন ইডির কাছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে কৌস্তুভ রায় ওই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। জেল খাটছে এমন আসামি ইমেল করলেন? কোথা থেকে? জেল থেকে ইমেল করা যায়? কোন আইনে? তাঁর দফতরে সমস্ত কাগজ আগেই সিজ করেছে বিভিন্ন সংস্থা, তিনি এই হিসেবের খাতা পেলেন কোত্থেকে? কে জোগাল তাঁকে এই বুদ্ধি? সাজা পেয়ে জেল খাটছেন, তারপরেও তিনি এই তথ্য দিয়ে কার হাত শক্ত করছেন? কেন ২০২৩ সালে এই কাগজ উঠে এল?
কৌস্তুভ রায় নিজের সওয়াল নিজেই করার সময়ে বলেছিলেন এই কথাগুলোই, এবারে বিচারক সেই প্রশ্নটাই ইডি অফিসারকে করলেন। জিজ্ঞেস করলেন যে একজন কনভিক্টেড আসামির বয়ানের ভিত্তিতে আর কোনও তথ্য প্রমাণ ছাড়াই একজনকে কতদিন জেলে পুরে রাখা যায়? প্রশ্ন তো করলেন, উত্তর কে দেবে? সোনার চাঁদ ইডি অফিসার তো বাংলাই জানেন না, তিনি বাংলাতে এসে তদন্ত করছেন, শ’ খানেক লোকজনকে জেরা করছেন, কিন্তু বাংলাই জানেন না। তো বিচারক নিজেই তাঁর বক্তব্য ইংরিজিতেই বললেন, কিন্তু অবাকও হলেন তদন্তের এমন কাক্কেশ্বর কুচকুচে রকম সকম দেখে, এ যেন এক হ য ব র ল, তদন্ত এমন আজগুবি হতে পারে এটা তো জানা ছিল না। জানি না ইদানিং জেলে তাস খেলা যায় কি না, কিন্তু সময় বুঝে আমাদের সম্পাদক তাঁর কৈফিয়ৎ দিয়েছেন। বলেছেন, কেহ বলে, মাটি হ’ল হয়ে মোটা জেলে ব’সে শুধু তাস খেলে! ইডি বলে, তুই জেলে ছিলি ভালো ফের যেন তুই যাস জেলে! ওই ইডি শব্দটা অবশ্য ওনার সংযোজন, এবং এটাও সঠিক যে আজ নজরুল বেঁচে থাকলে ইডির হাতেই গ্রেফতার হয়ে জেলে থাকতেন, এ নিয়েও কোনও সন্দেহই নেই। বোঝা গেল, আমাদের সম্পাদকের, ছ’ মাসের বেশি জেলবাসের পরেও মস্তিষ্ক এখনও সচল বা বলা যাক একটু বেশিই সচল। মোদ্দা কথায় আসি, আসলে ওই দিল্লি থেকে নির্দেশ এসেছে, বিরোধিতা বন্ধ করার, ওনারা হুকুম তামিল করেছেন মাত্র, তার বেশি আর কীই বা জানেন। সব্বাই জানেন এ মামলা টিকবে না।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ৩৭)
প্রত্যেকে জানেন যে অরবিন্দ কেজরিওয়াল থেকে হেমন্ত সোরেন বা প্রবীর পুরকায়স্থ থেকে কৌস্তুভ রায়কে ছাড়তেই হবে। যেমন ছাড়া পেলেন দিন দুই আগে অধ্যাপিকা সোমা সেন, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল উনি এবং আরও কয়েকজন মিলে আমাদের উনিজি মানে নরেন্দ্র মোদিজিকে হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তো ছ’ বছর জেলে থাকার পরে একটাও প্রমাণ হাজির না করায় তাঁকে জামিন দিয়েছে আদালত, ছ’ বছর কেটে গেছে। কৌস্তুভ রায়ও জেল থেকে ছাড়া পাবেন, কিন্তু সম্ভবত নির্বাচনের পরে, কারণ ওটাই নির্দেশ, আর আমাদের কাছেও নির্দেশ এসেছে জেল থেকেই এসেছে, নো পাসারন, এতটুকু ছাড় নেই, পেছনে হঠে যাওয়ার প্রশ্নই নেই, আমাদের লড়ে যেতে হবে। কলকাতা টিভির কর্মীরা লড়ে যাচ্ছেন, বিরোধিতার একটা শব্দও বাদ পড়বে না। একটা কাগজে মন্ত্র লিখে পাঠিয়েছেন আমাদের সম্পাদক, জানা গেছে সেই গোপন মন্ত্র লেখা কাগজটা আমাদের হাতে আসার আগেই ধরা পড়ে গেছে ইডির হাতে। তাতে লেখা ছিল “হলদে সবুজ ওরাং ইট পাটকেল চিৎপটাং, মুশকিল আসান উড়ে মালি ধর্মতলা কর্ম খালি।” বাংলা না জানা সেই ইডির গোয়েন্দাপ্রবর এর মানে উদ্ধারের জন্য জনে জনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ইট আর পাটকেল শব্দ দুটোর মানে সম্ভবত কেউ বুঝিয়েছে তাই আরও উত্তেজিত, ইট আর পাটকেলের কথা তো ইডি সিবিআই এনআইএ জেনেছে। এসব তথ্য গোপন সূত্রে জানা গেছে, দেখা যাক কতদিনে এই অসাধারণ চিরকুটের মানে উদ্ধার করতে পারে ইডি বা সিবিআই।
দেখুন ভিডিও: