দেবাশিশ দাসগুপ্ত: মহালয়া এলেই মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। সেই কবে একবার মহালয়ার আগের দিন বাবা অফিস থেকে ফেরার পথে বুশ ব্যারন কোম্পানির রেডিও নিয়ে এল। তার আগে রেডিওর পাট ছিল না বাড়িতে। সে কী উত্তেজনা আমাদের ভাইবোনদের। সাংবাদিক ছিল বলে বাবার বাড়ি ফিরতে রাত হত। লাস্ট ট্রেনে ফিরত। নতুন রেডিও আসবে বলে আমাদের ঘুম লাটে। অবশেষে এল সেই বহু প্রতীক্ষিত রেডিও। খয়েরি বাক্সে মোড়া। খুব সন্তর্পণে বাক্স থেকে বার করা হল রেডিও।
উত্তেজনায় রাতে আর ঘুমই হল না। প্রায় সাড়ে রাতই জেগে। ভোরে বড় ঘরে আমরা সবাই। তখন যৌথ পরিবার। দাদু, ঠাকুমা, পিসি, কাকু, ভাইবোনেরা মিলে প্রায় ১৪ জন। আমরা ছোটরা রেডিওর গায়ে কান লাগিয়ে। তারপর সেই উদাত্ত গলা বীরেন ভদ্রের। আশ্বিনের শারদ প্রাতে…….।
আজকাল কি কেউ রেডিওতে মহালয়া শোনে? জানা নেই। এখন তো মোবাইল, ইউ টিউবের কল্যাণে সারা বছরই যখন তখন শোনা যায় মহালয়ার অনুষ্ঠান।
তবে যে যাই বলুক, আধো অন্ধকারে রেডিওতে কান পেতে বিছানায় শুয়ে মহালয়া শোনা, সে এক আলাদা অনুভূতি। দফায় দফায় সঙ্গে চা। কোনও কথা বলা চলবে না। অবশ্য আমরা ছোটরা কথা বলতাম না। শুধু শুনতাম বেতার তরঙ্গে ভেসে আসা বীরেন্দ্র ভদ্রের জলদ গম্ভীর গলায় স্তোত্র পাঠ।
আজকের দিনে কতজনের বাড়িতে রেডিও আছে, তা নিয়ে গবেষণা চলতে পারে। আগে আমরা মহালয়া শুনব বলে আগের রাতে উত্তেজনায় ছটফট করতাম। এখন আর সে সব দিন নেই। বাড়ির ছোটরা রেডিও কী জিনিস, জানে না। জন্মের পরই তাদের হাতে মুঠো ফোন চাই। মোবাইলের সমস্ত অপারেশন তাদের বাঁ হাতের খেল। এখন বাচ্চারা কাঁদলেই বাবা, মায়েরা হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেন। ব্যাস, বাচ্চা চুপ। সেদিন মেট্রোতে বাড়ি ফিরছিলাম। তরুণ এক দম্পতি বছর দুয়েকের ছেলেকে নিয়ে বসে। সে ছেলে জিনিস। এক মুহূর্ত চুপ করে বসবে না। ফাঁকা ট্রেনে ছুটে বেড়াচ্ছে। বাবা, মা সামাল দিতে গলদঘর্ম। হঠাৎ স্ত্রী স্বামীকে কানে কানে বললেন, মোবাইলটা দিয়ে দাও। হাতে মোবাইল পেয়ে সে ছেলে মুহূর্তে পাল্টে গেল। কোথায় দুরন্তপনা।
কাল ভোরে মহালয়া। দুদিন আগে একটা পকেট রেডিও কিনে এনেছি মহালয়া শুনব বলে। তার পরে অবশ্য যন্ত্রটা পড়েই থাকবে। তবু রেডিওতে শুনতেই হবে, আশ্বিনের শারদ প্রাতে ……..। বেঁচে থাকুন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র।