আসানসোল: কম্বল বিতরণ কাণ্ডে শর্ত স্বাপেক্ষে জামিন পেলেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। অবশেষে হাই কোর্টে জামিন পাওয়ার পর মঙ্গলবার আসানসোল সিজিএম আদালতে পেশ করা হয় জিতেন্দ্রকে। পরে হাই কোর্টের জামিনের কপি জমা দেওয়া হলে আসানসোল সিজেএম আদালতের বিচারক তা কনফার্ম করেন এবং জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু কলকাতা এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই আসানসোল জেলেই ছিলেন জিতেন্দ্র। সেই কারণেই জামিন পাওয়ার পর জিতেন্দ্রকে পুনরায় আসানসোল জেলে নিয়ে আসা হয়। আসানসোল জেল থেকে মুক্তি পেতে জিতেন্দ্র তিওয়ারির এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে জিতেন্দ্রর জামিনের মামলার শুনানি ছিল। শুনানি শেষে আদালত জিতেন্দ্রর জামিন মঞ্জুর করে। ৫০ হাজার টাকা ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পেলেন জিতেন্দ্র। কিন্তু এখনই আসানসোল পুরসভা এলাকায় ঢুকতে পারবেন না বিজেপি নেতা। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া ওই এলাকায় যেতে পারবেন তিনি।
এদিন জিতেন্দ্র জল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে মালা পরানোর পাশাপাশি স্লোগান দিতে থাকে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। গাড়িতে বসে আসানসোল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জিতেন্দ্র বলেন, ওদের এটা আতঙ্ক। ওরা বলছে ৩ লক্ষ ভোটে জিতেছে। যদি তিন লক্ষ ভোটে যেতে তবে তাদের এত ভয় কেন। এটা আসানসোলের মাটি। আমাদের মাটি। আদালতের রায়ে আসানসোলে থাকতে পারলাম না আবার আদালতের রায় নিয়ে আসানসোলে ফিরে আসব।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর আসানসোলে কম্বল বিতরণের অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছিল। জিতেন্দ্র ও তাঁর স্ত্রী ছিলেন সেই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা। ওই ঘটনাতেই জামিন অযোগ্য ধারায় জিতেন্দ্র ও চৈতালির নামে মামলা দায়ের হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ১৪ ডিসেম্বর আসানসোলে কম্বল বিতরণ ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেদিন সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি ওই অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর, কম্বল নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয়। সেই সময়ই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তিন জনের। ওই কর্মসূচির উদ্যোক্তা ছিলেন জিতেন্দ্রর স্ত্রী চৈতালি তিওয়ারি। সেই ঘটনায় জিতেন্দ্র তিওয়ারি, চৈতালি তিওয়ারি সহ আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল থানায়। পাশাপাশি পুলিশ জানিয়েছিল ওই অনুষ্ঠানের জন্য তাঁদের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। তারপর বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। একাধিকবার জিতেন্দ্র এবং তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এর পর শনিবার আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা দফতর এবং আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ যৌথ ভাবে অভিযান চালিয়ে নয়ডায় যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে জিতেন্দ্রকে গ্রেফতার করে। সেখান থেকে দমদম বিমানবন্দর হয়ে জিতেন্দ্রকে নিয়ে যাওয়া হয় দমদমের হাসপাতালে। সেখানে স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর, তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আসানসোল আদালতে।
গত ২৩ ফেব্রয়ারি কলকাতা হাইকোর্ট কম্বলকাণ্ডে জিতেন্দ্র এবং তাঁর স্ত্রী চৈতালির আগাম জামিনের আবেদন নাকচ করে। তার পর থেকেই তাঁদের বাড়িতে তালা দেওয়া। এর পর শনিবার গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।