কলকাতা: মোট সাত সেমেস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত শনিবার। পরীক্ষার্থীরা ভালো ফলের ব্যাপারে আশাবাদী। ফল প্রকাশ হতে চলেছে আজ, মঙ্গলবার। আজ দুপুরের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, আগামী পাঁচ বছর দেশের শাসনভার থাকবে কোন পক্ষের হাতে, বিজেপির নেতৃত্বীধান এনডিএ নাকি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের হাতে। আশাবাদী দুই পক্ষই।
অষ্টাদশ লোকসভা গঠনের জন্য ভোট পর্ব শুরু হয়েছিল গত ১৯ এপ্রিল। প্রায় দেড় মাস ধরে চলা ওই ভোট পর্ব শেষ হল শনিবার। এত দীর্ঘ সময় ধরে লোকসভা ভোট আগে কখনও হয়নি বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের। বাংলায় এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতি পর্বের ভোট প্রচারেই এই দীর্ঘ ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শোনা গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একেবারে প্রথম থেকেই এবার চারশো পারের স্লোগান তুলেছিলেন। তাঁর দেখাদেখি বিজেপির অধিকাংশ নেতা-মন্ত্রীই সভা, সমাবেশে চারশো পারের স্লোগান দিয়ে গেরুয়া শিবিরকে চাঙ্গা রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। ইন্ডিয়া জোটের সমালোচনায় মুখর ছিলেন মোদি-সহ কেন্দ্রের শাসকদলের নেতারা। খোদ প্রধানমন্ত্রী প্রচারে ধর্মীয় মেরুকরণের তাস খেলতে কোনও রাখঢাক করেননি। দেড় মাসের প্রচার পর্বে তাঁর কথায় বারবার উঠে এসেছে বিরোধীদের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তুষ্টিকরণের অভিযোগ। তিনি এমনও বলেছেন, কংগ্রেস কিংবা ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে ওবিসিদের সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে নিজেদের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। এমনকী ওরা আপনার গলার মঙ্গলসূত্র পর্যন্ত কেড়ে নেবে। ওরা আপনার গয়না এবং সম্পত্তির এক্স রে করবে। তারপর তা মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। কংগ্রেসের ইস্তাহারে এমনটাই বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল, কংগ্রেসের ইস্তাহারে এরকম কোনও প্রসঙ্গই ছিল না। মোদির ভাষণে উঠে এসেছে রামমন্দিরের কথা। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীরা রাম নিয়েও রাজনীতি করেছে। সেই কারণেই নেতারা অযোধ্যায় রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি আমন্ত্রণ করা সত্ত্বেও।
পাল্টা ইন্ডিয়া জোটের নেতারা প্রচারে জোর দিয়েছেন বেরোজগারি, কর্মসংস্থান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদির উপর। রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেস নেতারা দাবি করেন, বিজেপি এবার দুশো পার করতে পারবে না। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দাবি ছিল, চারশো তো দূরের কথা, দুশোতেও পৌঁছতে পারবে না বিজেপি।
দেশের অন্য কয়েকটি রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদের আসন সমঝোতা হলেও ব্যতিক্রম ছিল বাংলা। মমতা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তৃণমূল বাংলায় সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে নেই। ওরা বিজেপির দালাল। বাংলায় বিজেপিকে সরাতে তৃণমূল একাই যথেষ্ট। তবে জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূল রয়েছে। কোনও কোনও সভায় মমতা এমনও বলেন, কংগ্রেস সারা দেশে চল্লিশটির বেশি আসন পাবে না। একটি সভায় তিনি আবার বলেন, ইন্ডিয়া জোট জিতলে তৃণমূল বাইরে থেকে তাদের সরকার গড়তে সাহায্য করবে। তা নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের অন্দরে ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়। পরে মমতা তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। সমাজবাদী পার্টি, চার বাম দল, এনিসিপির মতো বিভিন্ন বিরোধী দলের দাবি, বিজেপি এবার কোনও মতেই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এই মুহূর্তে বাংলায় সিপিএমের হাতে বাংলার কোনও আসন নেই। সিপিএম খাতা খুলতে পারবে কি না, নজর থাকবে সেদিকেও।
এই দাবি, পাল্টা দাবির মধ্যেই শনিবার প্রকাশিত অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষায় বিজেপিকেই এগিয়ে রাখা হয়েছে। প্রায় সব সংস্থার সমীক্ষাতেই বিজেপিকে প্রায় চারশোর কাছাকাছি আসন দেওয়া হয়েছে। ইন্ডিয়া জোটকে দুশোরও কম আসন দেওয়া হয়েছে। বাংলার সম্ভাবনা সম্পর্কে ওইসব সমীক্ষাতেও তৃণমূলের তুলনায় বিজেপিকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। তা মানতে অবশ্য রাজি নন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিজেপিকে হারিয়ে ইন্ডিয়া জোট সরকারে এলে সেখানে অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি কিছুটা ধোঁয়াশা রেখে দিয়ে এক সাক্ষাতকারে বলেন, প্রকৃত ফল সামনে এলে তৃণমূল অঙ্ক কষে সিদ্ধান্ত নেবে। ইন্ডিয়া মঞ্চে সিপিএমের দাদাগিরি নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যেই আগামীকাল লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশ হচ্ছে। তৃতীয়বারের জন্য বিজেপির প্রত্যাবর্তন হবে নাকি এবার কেন্দ্রে পরিবর্তন হবে, তার দিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ। বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল মেলে কি না, নজর থাকবে তার উপরও। এই সমীক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সব সময় তা মিলেছে, এমনটাও নয়। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে সব সমীক্ষার ফলাফল উল্টে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস। তবে এই বুথভিত্তিক সমীক্ষায় ভোটের ফলাফলের একটা আভাস পাওয়া যায়।