Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: বিজেপি দেশকে বিরোধীমুক্ত করতে চায়, হাতিয়ার ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স

চতুর্থ স্তম্ভ: বিজেপি দেশকে বিরোধীমুক্ত করতে চায়, হাতিয়ার ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স

Follow Us :

বিহারে নীতীশ, তেজস্বী সরকার শপথ নিচ্ছে৷ বিধানসভা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিজেপির স্পিকার পদত্যাগ করেছেন৷ বিজেপি হার নিশ্চিত জেনেই ওয়াক আউট করেছে এবং ঠিক সেই সময় দিল্লি পাটনা, রাঁচিতে ইডি রেইড চলছে। পয়লা আগস্ট ইন্ডিয়া টুডে, সি ভোটার মুড অফ দ্য নেশন, দেশের মানুষ কী ভাবছে, এক সার্ভে প্রকাশ করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে এনডিএ, যা এখন মোটামুটি বিজেপি, কারণ বাকি দলগুলোর কারও দুই অংকের সাংসদ নেই৷ কারও দুই কারও এক, কারও তিনজন সাংসদ আছে৷ তো এখনই ভোট হলে এনডিএ ৩০৩টে আসন পাবে। কিন্তু ইতিমধ্যে বিহারে নীতীশ বিজেপি জোট ভেঙে গেল৷ তেজস্বী – নীতীশ জোট শুরু হল৷ কাজেই ইন্ডিয়া টুডে – সি ভোটার আবার মাঠে নামল৷ জানাল, বিহারে যা হয়েছে তা মাথায় রেখে এই মূহুর্তে ভোট হলে এনডিএ  পাবে ২৮৬।

২০২৪, সাধারণ নির্বাচনের এখনও দেড় বছরেরও বেশি সময় আছে৷ তা থাক, এখনই ভোট হলে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ২৭২ টার চেয়ে মাত্র ১৪ টা আসন বেশি পাবে এনডিএ৷ অপনা দলের অনুপ্রিয়া প্যাটেল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চাইতেই পারে, যিনি এখনও পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদিজীকে নিয়ে কবিতা লিখেই খুশি, প্রতিমন্ত্রী পদ নিয়েই খুশি, সেই রিপাবলিকান পার্টির রামদাস অটাওলে শিল্প মন্ত্রক চাইতেই পারেন। কাজেই ল্যাজে ঘা হলে কুকুরের যা হয়, সেরকমই একটা হাল বিজেপি দলের, বড্ড ব্যাথা, বড্ড যন্ত্রণা। অবশ্য কেবল ইন্ডিয়া টুডে – সি ভোটারের সার্ভে নয়, আরএসএসের ইন্টারনাল সার্ভে আরও খারাপ খবর আগেই দিয়েছে, সতর্ক করেছে, সূত্রের খবর সেই সার্ভেতে বিজেপি নাকি ২৪২ পার করছে না, কাজেই তাঁরা এখন থেকেই নেমে পড়েছেন মেরামত করতে।

তাঁরা মানে? মোদি-শাহ। এই দুজন ছাড়া দলে তো সবাই এলেবেলে। ২০১৪ তে বিজেপির পার্লামেন্টারি কমিটিতে কারা ছিল? আচ্ছা এই পার্লামেন্টারি কমিটি বস্তুটা কী? কংগ্রেসে যেমন ওয়ার্কিং কমিটি, সিপিএমের পলিটব্যুরো, তেমনই বিজেপিতে পার্লামেন্টারি কমিটি হল সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি৷ ১১ জনের এই কমিটিতে ছিলেন মোদি, শাহ, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, অনন্ত কুমার, বেঙ্কাইয়া নাইডু, থাবর চন্দ গেহেলোট ইত্যাদিরা। মারা গিয়েছেন জেটলি, সুষমা স্বরাজ, অনন্ত কুমার। উপরাষ্ট্রপতি হয়েছেন বেঙ্কাইয়া নাইডু, রাজ্যপাল হয়েছেন থাবর চন্দ গেহেলোট, বাকি ৬ জনের মধ্যে মোদি, শাহ, নাড্ডা, রাজনাথ সিং, নিতিন গডকরি, শিবরাজ সিং চৌহান। এবার বাদ মামাজী শিবরাজ সিং চৌহান৷ কারণ তাঁর কাজ ফুরিয়েছে, ওনাকে না সরালে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে সামলানো যাবে না, ডানা ছাঁটা হল। গডকরি মোদি-শাহের অনুগত নন কোনওদিনও, বাদ পড়লেন। এলেন কারা? অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল, অসমের বাইরে এনাকে কেউ চেনে না। এলেন বি এস ইয়েদুরিয়াপ্পা, এনাকে না সামলাতে পারলে কর্ণাটকের নির্বাচনে হার নিশ্চিত, ইনিও রাজ্যের বাইরে নন এনটিটি৷ ইকবাল সিং লালপুরা, গুগল করে জানতে পারবেন ইনি পঞ্জাবের মানুষ, তার বেশি কিছু নয়। সুধা যাদব, গুগল করেও কিছু জানা যাবে না। এবং মজার কথা হল পার্লামেন্টারি কমিটিতে আসার আগে সাধারণ সম্পাদক পদ ছুঁইয়ে আসাটাই রীতি, এনারা তাও নন।

আসলে বিজেপির কংগ্রেসিকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে৷ সবটাই হাইকমান্ড, সবটাই মোদি-শাহ। তো ওনারা ঠিক করেছেন, রাজনীতি নয়, ইডি-সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স আর ভিজিলেন্স দিয়েই শাসন চালাবেন, আরও বেশি সক্রিয় হলে এনআইএ আছে, ইউএপিএ আছে, আর্বান নকশাল বলে সোজা জেলে পুরে দাও। এই অঘোষিত জরুরি অবস্থার শাসনে অগাস্টের ১ তারিখ থেকেই যদি হিসেব নেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে মহারাষ্ট্রে জুলাই এর শেষ দিনে গ্রেফতার সঞ্জয় রাউত, রেইড অব্যাহত মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায়৷ এরপর তৃণমূল মন্ত্রী নেতাদের বাড়িতে রেইড চালানো হল৷ তারপর কলকাতা টিভি, তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের দফতর, যেদিন কলকাতা টিভির রেইড উঠে গেল, সেদিনই সকালবেলায়  আম আদমি পার্টির মন্ত্রী, নেতা মণীশ সিসোদিয়ার বাড়ি৷ তারপর বুধবার তেজস্বী যাদব সমেত আরজেডি নেতাদের বাড়ি, একই সঙ্গে ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের ঘনিষ্ঠ মানুষ জনের বাড়িতে রেইড চলল। কোনওটায় সামনে ইডি, কোনওটায় ইনকাম ট্যাক্স, কোনওটায় সিবিআই, পিছনে কিন্তু দুটি মানুষ মোদি – শাহ। উদ্দেশ্য কী? কালো টাকা উদ্ধার? ফাইট এগেন্সট করাপশন? ঘন্টা। বিএস ইয়েদুরিয়াপ্পার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা বেআইনি রোজগারের অভিযোগ আছে, বেআইনিভাবে খনি ইজারা দেওয়ার অভিযোগ আছে। কেউ রেইড করবে?

হিমন্ত বিশ্বশর্মা সারদা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত, ইডি যাবে রেইড করতে? শুভেন্দু অধিকারী, চোখের সামনে টাকা নিয়েছেন, ভিডিয়ো আছে, সিবিআই যাবে জেরা করতে? এই খোজা সিবিআই, ইডি, আইটি আটকেছে গুজরাতের ওই নীরব মোদি, মেহুল চোকশি সমেত ৩৬ জন ব্যবসায়ীকে, যারা লক্ষ কোটি টাকা মেরে চলে গিয়েছে বিদেশে? কেউ গিয়েছে নরেন্দ্রভাই দামোদর দাস মোদির বাড়িতে রেইড করতে, কারণ যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে এই ভদ্রলোক ওই নীরব মোদি বা মেহুল চোকসিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন। যদি না যায়, তাহলে কেবল কৌস্তুভ রায়ের চ্যানেলের কর্মচারি বা সাংবাদিককে ডেকে এনে ৩০/৪০/৬০ ঘন্টা আটকে রেখে জেরা করা হবে কেন? না খাউঙ্গা না খিলাউঙ্গার বাওয়ালি দেওয়ার পরে দেশের ১ লক্ষ ৮৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পগার পার এই ব্যবসায়ীরা, তাহলে এদের কে খাওয়ালো? তাকে একটা প্রশ্ন করার ধক আছে ওই ইডি কর্তাদের? আইটি কর্তাদের? নরম মাটি পেলেই আঁচড়াতে ইচ্ছে হয় তাই না? আমাদের দফতরে ইনকাম ট্যাক্স রেইড যে টাকার হিসেব বা হদিশ পেতে হয়নি তা তো সবাই জানে, যেটা জানেন না তা হল এই রেইড চলাকালীন অমানবিক ব্যবহার, টর্চারের কথা।

আমাদের একজন কর্মচারি অমিতাভ কুন্ডুকে ডেকে পাঠানো হয় ১৬ তারিখ দুপুর বেলায়, উনি কোন সময়ে কোন বিজ্ঞাপন যাবে, কতটা সময় যাবে তার তালিকা তৈরি করেন, ডাকা হল, জেরা করা হল, জেরা শেষ, বসিয়ে রাখা হল৷ উনি বললেন, আমি অসুস্থ, আমার নিয়মিত ওষুধ আছে, বাড়ি যেতে দিন৷ দেয়নি৷ ওষুধ আনিয়ে দিন৷ দেয়নি৷ বাড়িতে ফোন করে অন্তত জানাতে দিন৷ দেয়নি। যে সরকার গণধর্ষণে অভিযুক্তদের সাজা কমিয়ে দেয়, সেই সরকার একজন অসুস্থকে ওষুধ দেবে, তা আমরা আশা করি না৷ কিন্তু তা এক কল্পিত অভিযানের নামে চালানো হচ্ছে। আমাদেরই সাংবাদিক দীপ্তিমান ভট্টাচার্য, তাঁকেও একই ভাবে ডেকে পাঠানো হয়, জেরা হয়৷ সে সাংবাদিক, তাঁর ফোন কেড়ে নেওয়া হয়, তাঁকে বার বার যা জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল তা হল, টাকা কোথায়? ক্যাশ টাকা কোথায়? মালিক কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন? মানে এখন থেকে সাংবাদিকতার চাকরির শর্ত হল মালিকের টাকার হদিশ রাখা? অথচ ওই অসাংবাদিক, যিনি টাকা খাইয়ে টিআরপি বাড়ানোর কাজ করেছেন, দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো বলে ভর সন্ধ্যেবেলা ডাক ছাড়েন, সেই প্রভুভক্তকে ইডি ধরে না, সিবিআই ধরে না।

মনেইর হোসেইন, একে কৌস্তুভ রায়ের কর্মচারি তায় আবার মুসলমান৷ অতএব তাঁকেও আটকানো হল ওই ১৬ তারিখেই৷ তিনি বলছেন তাঁর মা এনআরএসে ভর্তি আছেন, রক্ত দরকার, তাঁকে যেতে হবে, যেতে দেওয়া তো দুরস্থান, ফোনও করতে দেওয়া হয়নি৷ মনেইর যে বেঁচে আছেন তা ওনার বাড়ির মানুষ জন জানতে পারলেন ১৯ আগস্ট বিকেল ৬টার পরে৷ এ কোন ধরনের রেইড? স্বাধীনতা আন্দোলনের এই বিশ্বাসঘাতকদের গণতান্ত্রিক রীতি নীতি মেনে বাঁচিয়ে রাখাটাই কি তাহলে ভুল ছিল? গান্ধী হত্যা ষড়যন্ত্রের মূল মাথা ওই সাভারকারকে সেদিন ফাঁসি দিলে আজ দেশকে এই দিন দেখতে হত না। গণতন্ত্রকে, সংবিধানকে ভেঙে মুচড়ে ফেলে এক সামরিক শাসনের আওতায় আনা হচ্ছে। আমাদের সহোদর কোম্পানি আর পি ইনফোসিস্টেমের ল অফিসার খুসবু নাহিদ, তাঁকে আটকানো হল, ফোন কেড়ে নেওয়া হল, ৮ লক্ষ টাকার লোভ দেখানো হল, যদি কৌস্তুভ রায়ের নামে কিছু বলানো যায়৷ আসলে এই ইনকাম ট্যাক্স রেইড ছিল ভয় দেখানোর এক ব্যবস্থা, কলকাতা টিভি, চতুর্থ স্তম্ভ অনুষ্ঠান বন্ধ করার প্রচ্ছন্ন হুমকি। আমরা অন্তত এবারের মত তাকে রুখে দিতে পেরেছি, কতদিন পারা যাবে জানা নেই, কারণ প্রতি পদক্ষেপেই বুঝতে পেরেছি, তারা যে কোনও জিনিস, টাকা, দলিল, কাগজ এমন কি অস্ত্র শস্ত্রও রেখে দিতে পারেন, প্ল্যান্ট করতে পারেন, তারপর তার ছবি হুক্কাহুয়ার দলের কাছে পাঠিয়ে রাখতে পারে, যাদের শিরদাঁড়াই নেই অথচ দাবি করেন চোখে চোখ রেখে কথা বলার। আমরা লড়ছি স্বাধীন দেশের সংবিধানের জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য, ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য, শেষ পর্যন্ত লড়ব। সঙ্গে থাকুন।

RELATED ARTICLES

Most Popular