ছবির শুরুতেই পরিচালক অঞ্জন দত্ত একটার পর একটা দৃশ্যকে যে গতিতে বুনেছেন তাই যেন মৃণাল সেন। ছটফটে, প্রতি মুহূর্তে ইম্প্রোভাইজ করছেন, পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন অভিনেতাদের। এক অসম্ভব প্রাণশক্তিতে ভরপুর। ব্যক্তি অঞ্জন দত্ত খুব কাছ থেকে মৃণাল সেনকে দেখেছেন, তাই ‘চালচিত্র এখন’ সিনেমাটি যেন ওঁদের দুজনের কথোপকথন, পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া, নানা অভিজ্ঞতার কোলাজ এবং এবং কলকাতার অলিতে গলিতে নানা স্মৃতিতে টক্কর খেতে খেতে এক সময় সফর। তারই পাশাপাশি রয়েছে এই ইট কাঠ পাথরের বুড়ো শহর কলকাতা।
এই ছবি মৃণাল সেনের বায়োপিক নয়। তাহলে কি ১৯৮২ সালে তৈরি হওয়া চালচিত্র ছবিটির বায়োপিক? যে ছবি ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে ঘুরেছে কিন্তু সেভাবে জনসাধারণের জন্য মুক্তি পায়নি। এমনকী মৃণাল সেনের আত্মজীবনী, তাতেও এই ছবির সে অর্থে কোনও আলোচনাও নেই। তাহলে এই ছবি কি সেই ছবিটির বায়োপিক? তা কি কখনও সম্ভব? আসলে এই ছবি অঞ্জন দত্তের ট্রিবিউট টু মৃণালদা। সেই ট্রিবিউট দিতে গিয়ে এক অদ্ভুত ছবি বানিয়ে ফেলেছেন অঞ্জন দত্ত। ছবির গল্প, যা হয়তো অনেকটাই সত্যি, দর্শককে আকৃষ্ট করবে তো বটেই, অঞ্জন-মৃণাল সম্পর্ক সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নন যাঁরা, তাঁদেরকেও বসিয়ে রাখবে। আর এখানেই একটা ছবি হিসেবে ‘চালচিত্র এখন’ সফল।
আরও পড়ুন: দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল সঙ্গীতশিল্পী তানভীর পিয়ালের
মুখ্য চরিত্র কুণাল সেনের ভূমিকায় অঞ্জন দত্ত স্বয়ং এবং রঞ্জন দত্তের ভূমিকায় সায়ন চক্রবর্তী যথাযথ বললেও কম বলা হয়। পাশাপাশি আর্ট ডিরেকশনে সুভাষ সাহা, সম্পাদনায় অর্ঘ্যকমল মিত্রের মুন্সিয়ানা এই ছবিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। চলচ্চিত্রের পরিভাষায় মিসে সিন বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে।
আবার এই ছবি যেহেতু অঞ্জন দত্তের ছবি তাই এই ছবিতে শহর কলকাতা, তার নানা রূপ রস গন্ধ নিয়ে ধরা দিয়েছে। টুকরো টুকরো গানে কলকাতার সেই চিরকালীন সত্যকে ধরতে চেয়েছেন পরিচালক। বিশেষ করে ছবির এন্ড স্ক্রল ওঠার সময় যে গানটি অঞ্জন দত্ত গেয়েছেন তা মৃণাল সেন ও তাঁর প্রিয় শহরকে মিলিয়ে দিয়েছে।
ছবির শেষের দিকে আরও একটা কথা রঞ্জন দত্ত চরিত্রটি বলছে যা কুণাল সেন চরিত্র অর্থাৎ মৃণাল সেনের ইউনিট, তার কাজের পরিবেশ, এই সমস্ত কিছুকেই দর্শকদের সামনে এক ভালোবাসার সংসার হিসেবে তুলে ধরে। সব মিলিয়ে ‘চালচিত্র এখন’ সিনেমা হিসেবে সফল একথা বলাই যায়। শুধুমাত্র ট্রিবিউট বা স্মৃতিচারণ বা অন্তরঙ্গ কথোপকথনের সীমানা পেরিয়ে তা এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা।
মৃণাল সেন তার ছবি জেনেসিস সম্পর্কে এক সাংবাদিককে বলেছিলেন “A world built and gained is but the world lost… To be rebuilt or regained… Genesis, over again. চালচিত্র এখন দেখে একথা বলাই যায় মৃণাল সেন ও তাঁর অপছন্দের একইসঙ্গে পছন্দের, ভালবাসার শহর কলকাতা rebuilt or regained… by Anjan Dutta.
দেখুন অন্য খবর: