Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: দ্য কাশ্মীর ফাইলস (পর্ব-১)

চতুর্থ স্তম্ভ: দ্য কাশ্মীর ফাইলস (পর্ব-১)

Follow Us :

১৮০ ডিগ্রি ডিগবাজির যদি কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থাকতো, তাহলে  নরেন্দ্র মোদি পেতেন স্বর্ণপদক, নিশ্চিত পেতেন। একবার নয়, দুবার নয়, বহুবার বহু বিষয়ে এ তথ্য প্রমাণিত সত্য। আজ আরেকবার সেই সত্য সামনে এল।

উনি বলছেন মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা, বলছেন যার কাছে যেটা সত্যি মনে হয়, সে সেই সত্যিকে সামনে আনুক। উনি বলছেন দ্য কাশ্মীর ফাইলসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, কেমন ষড়যন্ত্র? কে করছে সেই ষড়যন্ত্র? তাদেরকে পুলিশ ধরছে না কেন? সে সব ব্যপারে কোনও কথা নেই, নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী, মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলছেন। কেবল তাঁর রাজত্বকালে, মানে যে সময় তিনি গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে তিনটে ফিল্মের কথা তো এই মূহুর্তে মনে পড়ছে, পরজানিয়া, পরিচালক রাহুল ঢোলকিয়া, বিষয় গুজরাট দাঙ্গা, অসহায় মানুষ। ফিরাক, পরিচালক নন্দিতা দাস, বিষয় গোধরা আর তার পরবর্তি ঘটনা নিয়ে। তৃতীয়টা হল, ফনা, আমির খান কাজলের সিনেমা, এক কাশ্মীরি যুবতী, এক টেররিস্টের প্রেমগাথা। তিনটে ছবিই গুজরাটে দেখাতে দেওয়া হয় নি, গুজরাটের কোনও হলে রিলিজ হয় নি, যদিও এই তিনটে ছবিই সেন্সর বোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পেয়েছে, তারপরেও তিনটের একটা ছবিও গুজরাটে কোনও মাল্টিপ্লেক্স, কোনও সিনেমা হলে দেখাতে দেওয়া হয় নি।

পরজানিয়ার ক্ষেত্রে বজরঙ্গ দল ফতোয়া জারি করেছিল, এই ছবি দেখানো যাবে না, কোনও হল মালিক সেই ফতোয়ার বিরুদ্ধে যায় নি, কারণ তারা পরিস্কার বুঝেছিল, রাজ্য সরকার এই ফতোয়ার পাশেই আছে, মোদিজী, যিনি আজ মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলছেন, তিনি চুপ করে বসে ছিলেন।

দ্বিতীয় ছবি ফিরাক হল মালিকরা নেয়নি, তারা বলেছিল ছবির প্রডিউসাররা অনেক টাকা চাইছে, যদিও পরিচালক নন্দিতা দাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন, এমন কোনও দাবির লিখিত প্রমাণ চাইলেও হল মালিকরা দেখাতে পারেন নি, ছবি গুজরাটে রিলিজ হয়নি, কী করছিলেন চওকিদার? চুপ করে বসে ছিলেন।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: ভোটের আমি, ভোটের তুমি……

ফনা রিলিজ হবার ঠিক আগে ছবির নায়ক আমির খান, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, ভারতীয় জনতা যুবা মোর্চা এই ছবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, শর্ত দেয়, আমিরকে ক্ষমা চাইতে হবে, আমির খান ক্ষমা চান নি, ছবি গুজরাটে দেখানো যায় নি। কে ছিলেন মূখ্যমন্ত্রী? নরেন্দ্র মোদী, আজ তিনি মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলছেন, ১৮০ ডিগ্রি পালটি খাচ্ছেন। এই ছবি যেন প্রত্যেকটা মানুষ দেখে তার ডাক দিচ্ছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে ছবিটিকে ট্যাক্স ফ্রি শুধু নয়, অসমে মুখ্যমন্ত্রী ছবি দেখার জন্য একবেলা ছুটি ঘোষণাও করেছেন, বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি এম এল এ, নেতা নেত্রীরা দল বেঁধে এই ছবি দেখতে যাচ্ছেন, ছবির শেষে শ্লোগান উঠছে, দেশ কে গদ্দারোঁ কো ইত্যাদি ইত্যাদি।

মোদি – আর এস এস – বিজেপি এই কাজ করছেন কেন? কোন সত্য তুলে আনা হল এই ছবিতে যা ওনারা দেশের মানুষকে দেখাতে চান? কেন দেখাতে চান? আসুন তাই নিয়েই একটু আলোচনা করা যাক, আলোচনার সূত্রপাত ছবিটির বিষয় নিয়ে, ছবির নাম কাশ্মীর ফাইলস, পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। আলোচনার আগেই বলে রাখি, পরিচালকের এই ছবি করার পূর্ণ অধিকার আছে, তিনি যা মনে করেছেন, যেমনটা চেয়েছেন তেমন ছবি করেছেন, সেই অধিকার একজন পরিচালকের আছে, থাকাটা জরুরি। তিনি ছবি করেছেন ভারতবর্ষের ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়কে নিয়ে, এক লক্ষেরও বেশি কাশ্মীরি পন্ডিত, তাদের পরিবার নিয়ে ঘরদোর ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন, তাদের বাড়ির সামনে পোস্টার ঝুলছিল, তাদের হাতে লিফলেট দেওয়া হচ্ছিল, ইসলামিক টেররিস্টরা এমন কি দখল করেছিল স্থানীয় মসজিদগুলোও, যেখান থেকে সারাক্ষণ কাশ্মীরি পন্ডিতদের ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলা হচ্ছিল।

এই উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল রাজীব গান্ধীর জামানার শেষের দিকে, নির্বাচন এসেছিল, নতুন সরকার তৈরি হল, ভি পি সিং এর সরকার, একধারে বামেদের সমর্থন, অনদিকে বিজেপির সমর্থন। সরকার তৈরি হবার কদিনের মধ্যেই, কিডন্যাপ করা হল, সিং মন্ত্রী সভার স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সাইদের কন্যা, রুবিয়া সাইদকে, বছর তিরিশেকের এক ডাক্তার। চারদিনের মধ্যেই সেই সন্ত্রাসবাদীদের কাছে নতি স্বীকার করলো সরকার, চারজন কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীদের ছেড়ে দিল তারা, সেদিন বিকেলে শ্রীনগর, কাশ্মীরের প্রত্যন্ত এলাকায় বাজী পোড়ানো হল, মানুষ রাস্তায় নামলেন, এতদিন জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট স্বাধীন কাশ্মীরের কথা বলতো, কাশ্মীরিয়তের কথা বলতো, এই সময় থেকে ইসলামিক জঙ্গীদের হাতে চলে গ্যালো সেই মুভমেন্ট, পাক সামরিক সাহায্য নিয়ে আরও ব্যপক, আরও শক্তিশালী হয়ে উঠল এই মিলিট্যান্ট টেররিস্টদের দল।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: ধর্ষকের জন্য জেড সিকিউরিটি, কেন?

শুরু হল খুন, পালটা খুন, লাখে লাখে মিলিটারি গ্যালো, এনকাউন্টার শুরু হল, এই প্রেক্ষিতে সেই মিলিট্যান্টরা, জম্মু ভ্যালী থেকে কাশ্মিরী পন্ডিতদের তাড়ানোর প্ল্যান করলো, সফলও হল। ভি পি সিং সরকারের পাঠানো জগমোহন, যিনি কিছুদিন পরে বিজেপিতে যোগ দেবেন, বিজেপি সাংসদও হবেন, সেই রাজ্যপাল জগমোহন সাফ জানিয়ে দিলেন, আমরা আপনাদের রক্ষা করতে পারবো না, কিন্তু সেফ প্যাসেজ দিতে পারি, তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসুন। ওনারা বেরিয়ে এসেছিলেন, কে ছিল সরকারে? ভি পি সিং, সমর্থন বিজেপি আর বামেদের, তো বিজেপি নেতারা কী এই ইস্যুতে সরকারে ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিল? না। তারা কি রুবিয়া সাইদের বদলে সন্ত্রাসবাদীদের ছাড়ার বিরোধিতা করেছিল? না করেন নি। তারপর থেকে বিভিন্ন সরকার বহুটাকা খরচ করেছেন, ওনাদের বাড়ি বানানোর টাকা দেওয়া হয়েছে, ওনাদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে, কিন্তু ওনাদের কতজন ফেরত গেছেন? বিভিন্ন সময়ে কাশ্মীর ভ্যালি থেকে পালিয়ে আসা, পাঁচ সাড়ে পাঁচ লক্ষ কাশ্মীরি পন্ডিতের মধ্যে, আজ পর্যন্ত ফেরত গেছে হাজার ছয়েক মানুষ। অথচ এই পলায়নের সময় থেকে আজ অবধি, প্রায় ৩২ বছরের মধ্যে ১৫ বছর হয় বিজেপির সরকার ছিল, নাহলে বিজেপির সমর্থনে সরকার চলেছিল, কেন এই কাশ্মীরি পন্ডিতদের তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠানো গ্যালো না?

গ্যালো না কারণ কাশ্মীরে সমস্যাটা হিন্দু বনাম মুসলমান নয়, কাশ্মীরের সমস্যার শেকড় লুকিয়ে রয়েছে কাশ্মীর ভারত সংযুক্তির মধ্যে, লুকিয়ে রয়েছে এক বিরাট জনসংখ্যক মানুষের জাতিসত্তার অভিব্যক্তির মধ্যে, লুকিয়ে রয়েছে কাশ্মিরিয়তের মধ্যে, লুকিয়ে রয়েছে তাদের সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, বেশভূষার মধ্যে। এ যদি কেবল হিন্দু মুসলমান সমস্যা হত, তাহলে স্বামী বিবেকানন্দ, ওই অতদিন আগে মন্দির তৈরি করে কূমারী পুজো করতে পারতেন? তারও আগে শঙ্করাচার্য কাশ্মীরে গিয়ে সাধনা করতে পারতেন? কাশ্মীরের মধ্যেই হিন্দু তীর্থক্ষেত্র গড়ে উঠতে পারতো?

এই ছবি হিন্দু মুসলমান বিভাজনকেই প্রাধান্য দিয়ে চায়, কাশ্মীর যাক মায়ের ভোগে, আর এস এস – বিজেপি চায় কাশ্মীর ফাইলস খুলে সারা দেশের হিন্দু মুসলমানদের বিভাজিত করতে, তারা বুঝে গেছে, দেশের একজন হিন্দু যদি তাদের এই বিভাজনের রাজনীতিতে সায় দেন, তাহলে ঠিক এই মূহুর্তে অন্যজন সেই বিভাজনের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে, কাজেই তাদের এই বিভাজনের প্রক্রিয়া, এই পোলারাইজেশন আরও তীব্র করতে হবে, না কাশ্মীর, না কশমীরি পন্ডিত নিয়ে তাদের এতটুকুও মাথা ব্যথা আছে, তারা চিন্তিত তাদের ভোট নিয়ে, তাই ১৮০ ডিগ্রি পালটি খেয়ে চওকিদার আজ মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলছেন, আসলে হিন্দু মুসলিম বিভাজন আরও গাঢ় হোক, সেটাই চাইছেন।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: হাল্লা চলেছে যুদ্ধে

কাশ্মীরিয়ত কী? কাশ্মীরিয়ত হল হিন্দু শৈব সাধনা, বৌদ্ধ অহিংসা মন্ত্র আর সুফিবাদের উদার প্রেম। তাই আজও শ্রীনগরে গেলেই চোখে পড়বে শংকরাচার্যের মন্দির, শ্রীনগরের কাছে হারওয়াঁ, আর বারামুলার কাছে উসকুর বৌদ্ধ তীর্থ, চোখে পড়বে সুফি পীর বুলবুল শাহের মাজার, শ্রীনগরে আমির এ কবির, হজরত মীর সাইদ আলি হামাদানির মাজার। সেই কাশ্মীরিয়তকে ভেঙে ছারখার করতে চায় ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিস্টরা, তাদের সঙ্গে আছে পাকিস্থানের আশকারা, সেই কারণেই কেবল হিন্দু নয়, কেবল কাশ্মীরি পন্ডিত নয়, শয়ে শয়ে কাশ্মীরি মুসলমান মানুষজনকে খুন করেছে তারা, যারা কাশ্মীরিয়তের কথা বলেছে, যারা শান্তি আর সম্প্রীতির কথা বলেছে, সে ইতিহাস দ্য কাশ্মীর ফাইলস দেখায় নি, সে ইতিহাসের বদলে এক পুরনো ঘাকে আরও দগদগে করে তুলে ভোটের বাক্স গরম করার চেষ্টা করা হয়েছে, এবং দেশের মাথায় বসে থাকা ২৪ X ৭ ভোট কুড়নোর ম্যানেজার, আজ হঠাৎ ভোল পালটে বাক স্বাধীনতার কথা বলছেন, আসলে ভোটের প্রচার করছেন।

কিন্তু এটাই কী প্রথম? নাকি এই ষড়যন্ত্র অনেক বড়, অনেক বিস্তৃত? …(চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Jyotipriya Mallick | হাড়-মাংস-কিডনি-লিভার, জামিনে বালুর হাতিয়ার
00:00
Video thumbnail
Lok Sabha election 2024 | কলকাতা টিভিতে মুখোমুখি সৌমিত্র খাঁ ও সুজাতা মন্ডল, কী বললেন শুনে নেব
00:00
Video thumbnail
Arjun Singh | বিবাহ তিরে বিদ্ধ অর্জুন সিং, অভিরূপ সিং অর্জুনের পুত্র দাবি সোমনাথ শ্যামের
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | '২৩ তারিখ ঘাটালের হিরোকে জিরো করবে', দেবকে নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শুভেন্দুর
00:00
Video thumbnail
Adhir Ranjan Chowdhury | 'হঠাৎ করে সমীকরণ বদলে যায় দিদির', কার্তিক মহারাজ ইস্যুতে অধীরের তোপ
02:39
Video thumbnail
Raj Bhavan | রাজভবনের ৩ কর্মীকে ফের তলব, হেয়ার স্ট্রিট থানায় হাজিরার নির্দেশ
02:02
Video thumbnail
Narendra Modi | 'ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশনকে অপমান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী', পুরুলিয়ায় মমতাকে নিশানা মোদির
11:22
Video thumbnail
Ghatal | ঘাটালে বিজেপির প্রচারে বাধার অভিযোগ, বিজেপি বিধায়ককে ঘিরে বিক্ষোভ তৃণমূল কর্মীদের
00:43
Video thumbnail
Curd | দইয়ের সঙ্গে খাবেন না এই ৫ খাবার!
01:21
Video thumbnail
Ghatal | ঘাটালে বিজেপির প্রচারে বাধার অভিযোগ তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে
00:53