Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: কী বলছে উত্তরপ্রদেশ?

চতুর্থ স্তম্ভ: কী বলছে উত্তরপ্রদেশ?

Follow Us :

গতকালের পঞ্চম পর্যায়ের ভোট সমেত এখন পর্যন্ত ২৯২টা আসনে ভোট শেষ, গতবার উত্তরপ্রদেশের এই ২৯২টা আসনের মধ্যে, বিজেপি পেয়েছিল ২৪১টা আসন, ভোটের পাঁচ পর্যায় থেকে একটা প্যাটার্ন তো পরিস্কার, যেখানে কৃষক আন্দোলনের প্রভাব আছে, যেখানে সংখ্যালঘু ভোট আছে, যেখানে যাদব ভোট আছে, সেখানে ভোট পারসেন্টেজ বেড়েছে। শহরে, যেখানে সাধারণভাবে বিজেপির প্রভাব বেশী, সেখানে ভোট কমেছে, তিন / চার / পাঁচ শতাংশ কমেছে। এমনিতে গ্রামীণ এলাকায় বেশি ভোট পড়ে, শহরে কম, এটা কমবেশী গোটা ভারতের নির্বাচন ছবি। কিন্তু এবারে ২০১৭ র থেকেও শহরে ভোট পারসেন্টেজ কমেছে, কারা এলনা ভোট দিতে?

বিজেপিকে যে ব্রাহ্মণরা বরাবর ঢেলে ভোট দিয়েছে, তারা? বা ঐ সব গ্রামীণ এলাকা, যেখানে কৃষক আন্দোলনের প্রভাব আছে, জাঠ কৃষকবহুল এলাকা, লখিমপুর খেরি, যেখানে কৃষকদের গাড়ির চাকার তলায় পিষে মারা হল, বা সেই সমস্ত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চল, সেখানে ভোটের হার বেড়ে গেল, কারা এল সেই ভোট দিতে? ২৯২টা আসনে ভোট শেষ হবার পরে এই আলোচনা রাজনৈতিক মহলে, অন্তত একটা ইঙ্গিত তো দিচ্ছেই যে বিজেপির সময় ভালো যাচ্ছে না, এই নির্বাচন হাওয়া বদলের দিশায় চলেছে। বলার সময় এসেছে কি, যে বিজেপি হেরে ভূত হয়ে যাবে? বলার সময় এসেছে কি, যে আদিত্যনাথ যোগী কোনওভাবেই লক্ষ্ণৌর মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে ঢুকতে পারবেন না, বলার সময় এসেছে কি, যে উত্তরপ্রদেশ তার গত ৩০ বছরের রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা রেখেই, এক দলকে দুবার ফিরিয়ে না আনার ইতিহাস বজায় রাখলো?

এ প্রশ্নের সঠিক জবাব তো পাওয়া যাবে ১০ মার্চ, কিন্তু আপাতত আকাশের গায়ে অদ্ভুত টক টক গন্ধ, কেবল সীতারাম বন্দ্যোই সে গন্ধ পাচ্ছে, এমনও নয়, কেবল সাংবাদিকরা পাচ্ছে এমনও নয়, কেবল সমাজবাদী দল বা অখিলেশ যাদব পাচ্ছেন? না এমনও নয়। মোদি, যোগী, অমিত শাহও সেই গন্ধ পেয়ে গেছেন। কেন বলছি এ কথা? আসুন সেটাই আলোচনা করা যাক।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: কোকো লে গয়া

এক সময় সিপিএম সম্পর্কে এই কথা বলা হত, একটা নির্বাচন শেষ হলেই তাঁরা পরের নির্বাচন শুরু করে দেন, রিকশা মালিক সমিতির নির্বাচন, জগবন্ধু বিদ্যালয়ের কর্মসমিতির নির্বাচন থেকে এমপিএমএলএ নির্বাচন, তাঁরা লড়তেন একই সিরিয়াসনেস নিয়ে, একই তীব্রতা নিয়ে, শেষের দিকে ২০০০ সাল থেকে তাদের আর তো কোনও কাজই ছিল না, কেবল নির্বাচন, পার্টি অফিসে গেলেই দেখা যেত, নির্বাচনের তৎপরতা।

বিজেপির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, বরং বেশি ভাবেই প্রযোজ্য, হেরে যাবে, হেরে ভূত হয়ে যাবে, জানার পরেও বিজেপি যে ভাবে নির্বাচনে নামে তা দেখার মত, এবং নির্বাচনে নামার আগেই ঠিক হয়ে যায় একটা কেন্দ্রীয় শ্লোগান, যে শ্লোগান শোনা যাবে অমিত শাহের গলায়, নরেন্দ্র মোদীর গলায়, দলের প্রত্যেক নেতারা, কর্মীরা সেই শ্লোগান নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন। ইস্যুও পরিস্কার, তিনটে কি চারটে মূল ইস্যু, চুনাও কা অসলি মুদ্দা নিয়ে তাদের প্রচার শুরু হয়, এ আমরা দেখেছি। বহুবছর পরে গবেষকরা নিশ্চই গবেষণায় পাবেন, বিজেপির বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন ইস্যু, বিভিন্ন ন্যারেটিভ নিয়ে প্রচারে নামার পেছনের হিসেব নিকেশ। একটা নির্বাচন শেষ, অন্য নির্বাচনে আবার অন্য ইস্যু, অন্য শ্লোগান। আসুন কিছু উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক।

ধরুন ২০১৪র জাতীয় নির্বাচন। ক্ষমতায় কংগ্রেস, তাদের বিরোধিতায় প্রত্যেকে, কমিউনিস্ট পার্টি, জনতা দল, সমাজবাদী দল, তৃণমূল কংগ্রেস প্রত্যেকে। বিজেপি বিরোধিতায়, তাদের শ্লোগান কী? দূর্নীতিমুক্ত ভারত, কংগ্রেস মুক্ত ভারত, দেশ বিকাশ চায়, মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিজেপি, নারী সুরক্ষার পক্ষে বিজেপি, ব্যস। এই তো ছিল  তাদের শ্লোগান। ঠিক তার আগেই চলেছে আন্না হাজারের আন্দোলন, সামিল ছিল বিজেপিও, সেখান থেকেই এই সবকটা শ্লোগানের জন্ম।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: সাইকেল, সাইকেল

প্রত্যেকটা সভায় মোদিজী বলেছেন, দেশের কোটি কোটি টাকা লুঠ হয়েছে, বিদেশে চলে গেছে, ফিরিয়ে আনতে হবে, সেই টাকা জমা পড়বে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে, পেট্রল ডিজেলের দাম বেড়েছে, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, নারী ধর্ষিতা হচ্ছেন রাজধানীতেই, অতএব কংগ্রেসমুক্ত ভারত চাই, দূর্নীতিমুক্ত ভারত চাই। শুরু থেকে শেষ, এটাই ছিল তাদের শ্লোগান। বিজেপি একাই ২৮২, এন ডি এ ৩৩৬।

এবার চলুন ২০১৯ এর সাধারণ নির্বাচনে, দূর্নীতিমুক্ত ভারত? বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে আনা? নারী সুরক্ষা? পেট্রল ডিজেলের দাম? মূল্যবৃদ্ধি? এর একটাও কি বিজেপির শ্লোগান ছিল? না, ততদিনে তারা নিজেদের শ্লোগান বদলে নিয়েছে, ঘর মে ঘুস কর মারেঙ্গে, সার্জিকাল স্ট্রাইক, সবকা সাথ সবকা বিকাশ, মন্দির ওঁহি বনায়েঙ্গে, হর হর মোদী, ঘর ঘর মোদী। প্রত্যেক জনসভায় এগুলোই ছিল তাদের ইস্যু, তাদের শ্লোগান। তার সঙ্গে তারা জুড়ল পরিবারবাদ, ডায়েনেস্টিক রুল, তীব্র ব্যঙ্গ নিয়ে হাজির মোদিজী, প্রত্যেক জনসভায়। শুরু থেকে শেষ, তাদের ইস্যু আর শ্লোগান এক। এটাই বিজেপি। বিজেপি এবার, একলাই ৩০৩।

২০১৭র উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন, বিজেপির ইস্যু? সবকা সাথ সবকা বিকাশ, তারা নিজেদের দিকে এনেছে বিভিন্ন ওবিসি, দলিত নেতাদের, নিষাধ, রাজভর, মৌর্য, সাইনি, প্রজাপতি, বাল্মিকী, প্রত্যেককে, যাদব বাদ দিয়ে ওবিসিদের, দলিতদের বিরাট অংশ, ব্রাহ্মণ, বানিয়া, রাজপুত তো আছেই। সবে নোটবন্দী হয়েছে, গরীব, দলিত, পিছিয়ে পড়া মানুষরা বলছেন, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়, মোদিজীর হাতে দেশ সুরক্ষিত, বিজেপি ৪০৩ এ একলাই ৩১২, অপনা দল, সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি ইত্যাদি সমেত ৩২৫, বিরাট জয়, সামনে মুখ একজনেরই, মোদিজী।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: খেলা হোবে, খদেড়া হোবে

কিন্তু ২০২২? মুখ? অনেক দোনোমোনো করে শেষমেষ আদিত্যনাথ যোগী, শ্লোগান? ইস্যু? এইখানেই এসে ঘটি উল্টেছে। প্রথমে মোদিজী শুরু করলেন বেনারস থেকে, গঙ্গা স্নান, কাশী করিডোর, ঔরঙ্গজেব, শিবাজী, কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে পুজো। এরপর পাতা পাতা বিজ্ঞাপন, বিকাশ আর বিকাশ, কিন্তু সেখানেও ছড়ালো যোগী সরকার, বিজেপি। বিজ্ঞাপনে কখনও কলকাতার ফ্লাই ওভার, কখনও তেলেঙ্গানার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ছবি, এমনটা অন্তত বিজেপির কাছে আশাই করা যায় না, বিমানবন্দরের উদ্বোধন করতে গেলেন, যা নাকি বেচে দেওয়া হবে কিছুদিনের মধ্যেই।

কদিনের মধ্যে বিকাশ গ্যালো গরু চরাতে, শ্লোগান উঠল ইয়ে তো পহেলি ঝাঁকি হ্যায়, কাশী মথুরা বাকি হ্যায়। বিরোধীরা বলছেন রোজগার কই? ইতিমধ্যে এলাহাবাদে চাকরি প্রার্থীদের বেদম পেটানো হয়েছে, অতএব শ্লোগান বদলালো, গুন্ডই, গুন্ডার দল সমাজবাদী পার্টি, তাদের ভোট দেবেন না। কদিনের মধ্যে আদিত্যনাথ যোগী ফিরে গেলেন ৮০ আর ২০ র হিসেবে, হিন্দু পোলারাইজেসন চাই। তারপর জাঠেরা আসলে হিন্দু, তারা ৬০০ বছর ধরে নাকি মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়েছে, ঠাকুর আদিত্যনাথ যোগীর ওপরে ক্ষুব্ধ ব্রাহ্মণরা, জাঠবহুল কৃষক এলাকার ভোটের পরেই বাকি নির্বাচনের আগে বেল পেয়ে ছাড়া পেয়ে গ্যালো আশিস মিশ্রা, অভিযোগ, তিনিই গাড়ির চাকার তলায় পিষে মেরেছেন চারজন কৃষককে। বিরোধীরা তখনও বলছে রোজগারের কথা, এম এস পি র কথা। উঠল ছুট্টা জানবর, গরু, ষাঁড়েদের বিষয়। বিজেপি বললো গোশালা তৈরি হবে। মোদিজী বললেন, গোবর কেনা হবে, ভাবা যায়?

বিজেপি নির্বাচনে বিরোধীদের জবাব দিতে ব্যস্ত, কোথায় তাদের সলিড শ্লোগান? বিকাশ, বিকাশ থেকে ৮০ – ২০, সেখান থেকে গুন্ডারাজ, সেখান থেকে গোবর বিক্রি, সব শেষে সাইকেল মানে টেররিস্ট। প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে ইস্যু, প্রতিদিন আলাদা আলাদা শ্লোগান, নির্বাচনের মুখ? প্রথমে যোগিজীর ছবি নেই, মোদিজীই সর্বত্র, দ্বিতীয় চরণের পর থেকে যোগিজী হাজির, মোদিজী সভায় সভায় বলছেন, আয়েগা তো যোগি হি, আবার পঞ্চম পর্যায় থেকে মাঠে হাজির উমা ভারতী, লোধ সম্প্রদায়ের মানুষ, মানে আবার আদার ব্যাকওয়ার্ডদের ভোটের জন্য চেষ্টা, অযোধ্যা, যে অযোধ্যা নাকি সারা দেশে হিন্দুত্বের প্রতীক, সেই অযোধ্যায় বিজেপির অবস্থা খারাপ, কাঁটে কা টক্কর, উপমূখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য দাঁড়িয়েছেন সিরাথু থেকে, সামনে অপনা দল কমেরাবাদির পল্লবী প্যাটেল, কাঁটে কা টক্কর, হেরেও যেতে পারেন কেশব মৌর্য, আরও বেশ কিছু মন্ত্রীর আসন টলোমলো, বিজেপির দুই গান্ধী পরিবারের নেতা, মানেকা গান্ধী, বরুণ গান্ধী মাঠে নেই, বরুণ গান্ধী রোজ বিজেপির নীতির সমালোচনা করে টুইট করছেন, রীতা বহুগুণা যোশী বসে আছেন, তাঁর ছেলে মায়াঙ্ক যোশী ভোটের আগের দিন অখিলেশের সঙ্গে দেখা করে সাক্ষাৎকারের ছবি টুইট করছেন, বিজেপির হল কী?

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: রামজাদা হারামজাদা

ঐ যে বলছিলাম, আকাশের গায়ে অদ্ভুত টক টক গন্ধ, বিজেপিও টের পেয়েছে, তারা নার্ভাস, তারা বিচলিত, তারা জানে উত্তরপ্রদেশ গেলে সমূহ সর্বনাশ, কিন্তু তাদের কিচ্ছু করার নেই। ২০১৭ তে সামনের মুখ মোদিজী, তাঁর ক্যারিস্মা, সঙ্গে হিন্দুত্ব, জঙ্গী জাতীয়তাবাদ আর এবার সামনের মুখ অস্পষ্ট, কেবল নারী সুরক্ষা আর লাভার্থী বানানোর পরিকল্পনা। শেষমেষ ঐ শেষটা, ঐ লাভার্থীর দল যদি বৈতরিণী পার করতে পারে, এটাই আপাতত বিজেপির খড়কুটো, যা ধরে তারা ভেসে থাকতে চাইছে, যে গরীব মানুষজনকে ফ্রিতে রেশন দেওয়া হয়েছে, কিছু টাকাও দেওয়া হয়েছে, তা কাজ করবে তো? কারণ এ ছাড়া বিজেপির আর কোনও কিছুই কাজে লাগছে না তো বটেই, বরং উল্টোদিকে যাচ্ছে, উলটো গান গাইছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Locket Chatterjee | ‘আইপ্যাকের ছেলেরা টাকা নিয়ে ঢুকেছে’, তৃণমূলের এজেন্টকে বের করে দিলেন লকেট!
00:00
Video thumbnail
Loksabha Election 2024 | ভোটে হাওড়ায় হাতাহাতি, তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি প্রার্থী রথীন চক্রবর্তীর বচসা
02:18
Video thumbnail
Loksabha Election 2024 | চলতি নির্বাচনে কার দখলে যাবে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্র?
02:20
Video thumbnail
Loksabha Election| দিল্লির কুর্সি দখলের লড়াইয়ের পঞ্চম দফা, বাংলায় শ্রীরামপুর, ব্যারাকপুর, বনগাঁয় ভোট
01:52
Video thumbnail
Loksabha Election 2024 | ভোটে উত্তপ্ত স্বরূপনগর, বিজেপি কর্মীদের লোহার রড দিয়ে 'মারধর'
05:02
Video thumbnail
Lok Sabha Elections 2024 | সকাল থেকে ‘অ্যাকশন মোডে’ দীপ্সিতা, জেতার পক্ষে আশাবাদী সিপিএম প্রার্থী
02:27
Video thumbnail
Lok Sabha Election 2024 | ধনেখালিতে 'ভুয়ো' এজেন্ট ধরলেন লকেট, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকেও ধমক লকেটের
03:02
Video thumbnail
Rachna Banerjee | 'আজ কোনও হুঙ্কারের দিন নয়, খুশির দিন', মানুষের রায় নিয়ে আশাবাদী রচনা ব্যানার্জি
01:25
Video thumbnail
Lok Sabha Election 2024 | কাঁচড়াপাড়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটে বাধা দেওয়ার অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে
02:52
Video thumbnail
Lok Sabha Election 2024 | আমডাঙায় বুথে বুথে উত্তেজনা! BJP এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ
02:43