Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeআজকেAajke | বায়রন বোল্ড আউট?

Aajke | বায়রন বোল্ড আউট?

Follow Us :

ছেলেগুলো রাতজেগে পোস্টার এঁকেছে দেওয়ালে, পোস্টার সাঁটিয়েছে। গলার শিরা তুলে স্লোগান দিয়েছে, রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছোট, সেজো, মেজো নেতারা ভাষণ দিয়েছে। কত আদর্শের কথা বলেছে, কত ইতিহাসের কথা বলেছে, কত লিফলেট ছাপা হয়েছে, বাড়িতে বাড়িতে ও মাসিমা দেখবেন, মেসোমশাই ভালো আছেন? এসব হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটাই তো দস্তুর। এইসব প্রচার শেষে নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন এক লক্ষ পঁচাশি হাজার একশো বিয়াল্লিশ জন মানুষ। ৮৭৬৬৭ জন ভোট দিয়েছেন কংগ্রেসের প্রার্থী বায়রন বিশ্বাসের পক্ষে, ৬৪৬৮১ জন ভোট দিয়েছিলেন তৃণমূলের দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে আর বিজেপির দিলীপ সাহা ভোট পেয়েছিলেন ২৫৮১৫ জনের, নোটাতে ভোট দিয়েছিলেন ১৩৩৭ জন। জিতেছেন বায়রন বিশ্বাস। আজ জিতলেন কোন মানুষেরা? ওই যে ১৩৩৭ জন, যাঁরা মনে করেছিলেন এঁদের কেউই তাঁদের প্রতিনিধি হতেই পারেন না, তাঁরা জিতে গেলেন আজ। তিন মাসের মধ্যেই জার্সি বদল বায়রনের, তিনি কংগ্রেস থেকে আপাতত তৃণমূল, যে কোনওদিন বিজেপিতেও চলে যেতে পারেন। অবিশ্বাস করার তো কোনও কারণ দেখছি না। 

গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শর্ত নির্বাচন সে আজ এক ছেলেখেলা। শিশির অধিকারী কোন দলের? তৃণমূলের না বিজেপির? অর্জুন সিং কোন দলের বিজেপির না তৃণমূলের? মুকুল রায়ের মাথাটাই ভেবলে গেছে, তিনি এখন কোন দলে নিজেই জানেন না। দিব্যেন্দু অধিকারী কোন দলের? তৃণমূলের না বিজেপির? এসব প্রশ্ন থাকতেই পারে, বায়রনের ব্যাপারে এমন টেকনিকাল প্রশ্নও নেই। কারণ তিনি একলাই বিধায়ক, দল বদলেছেন, কোনও আইনেই তাঁকে আটকানো যাবে না। কিন্তু সবটাই তো আইনের প্রশ্ন নয়, নৈতিকতা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে, সেখানে কারও কোনও হেলদোল নেই। দল বদলাচ্ছেন দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। সেটাই বিষয় আজকে, বায়রন বোল্ড আউট।

আরও পড়ুন: Aajke | সামাল দিতে এগরায়? 

এসবের পেছনে কোনও আদর্শ কাজ করে? কেউ যদি হ্যাঁ বলেন, ভিক্টোরিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঘোড়াগুলোও তা শুনলে ফিক করে হেসে ফেলবে। বাজারে চলতি কথা আছে, পলিটিক্স ইজ দ্য লাস্ট রিসর্ট অফ অ্যা স্কাউন্ড্রেল। আমি তাও মানি না। মানি না কারণ কোনও স্কাউন্ড্রেলের পক্ষে পাঁচ বছরে তার টাকা ৩০২৪ শতাংশ বাড়িয়ে ফেলা সম্ভব নয়, ৪৬ বছরের বিজয়ওয়াড়ার সাংসদ ৯.২৫ কোটি টাকার মালিক ছিলেন ৫ বছর পরে তাঁর সম্পদ ২৮৯ কোটি টাকা। মানেকা গান্ধীর সম্পদ ২০০৪-এ ছিল ৬.৩২ কোটি, ২০০৯-এ ১৭.৬ কোটি, এখন তা ৫৫ কোটি। এসব তো দেশসেবারই ফল তাই না। কাজেই দলবদল হয়, পেছনে কী কাজ করে তা কারওরই অজানা নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল এমনটা চলতে থাকলে এই নির্বাচন, গণতন্ত্র এসব শব্দগুলোর আর কি কোনও প্রয়োজন থাকবে? পলিটিক্সে নতুন শব্দ জুড়ে দিয়েছে বিজেপি, রিসর্ট পলিটিক্স। প্রথমে দল ভাঙানোর কাজ চলবে তলায় তলায়, তারপর এক সকালে বিপক্ষ দলের বেশ কিছু এমএলএ চলে যাবেন বিলাস বহুল রিসর্টে, সেখানে বসে বলবেন আমরা আসলি শিব সেনা, আমরা বিজেপির সঙ্গে আছি, মাথা পিছু কত? শোনা যায় ৫০ কোটি টাকা। মধ্যপ্রদেশ, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দল ছাড়লেন, তাঁর অনুগামীরা চলে গেলেন কর্নাটকে রিসর্টে, জ্যোতিরাদিত্য তুম লড়তে রহো, হাম তুমহারে সাথ হ্যায়। তারপর কমলনাথের সরকার পড়ে গেল, শিবরাজ চৌহান আবার ক্ষমতায়। এ রাজ্যে বিজেপির বিধায়ক ছিলেন ৭৭ জন, খসে যাওয়া তারার মতো তাঁদের বিধায়করা খসে পড়ছেন, আজও তৃণমূলের যুবরাজ বলেছেন দরজা ফাঁক করলে বিজেপিতে ধস নামবে, সেই দরজা নাকি সময় বুঝে ফাঁক করা হবে, সেটাই নাকি রাজনীতি, পলিটিক্স ইজ অল অ্যাবাউট টাইমিং। তাহলে নির্বাচনের আগেই টাকা পয়সা লেঠেল গেঁজেলদের নিয়ে রাস্তায় নেমে যে যটা আসন পারেন দখল করুন, ন্যাকামো করার জন্য এই নির্বাচন নামক প্রহসনের দরকারটা কোথায়? বাবুল মোরা নৈহর ছুট হি যায়, সে বাবুল ঝালমুড়ি খাবার পরেও দল বদলাননি, মন্ত্রী না হতে পেরে দল বদলে এখন তৃণমূল, তবু মন্দের ভালো যে তিনি নিজের সাংসদ পদটা ছেড়েছিলেন। আসলে রাজনীতি এক লুক্রেটিভ বিজনেস, যেখানে নেমে পড়তে পারলে কিছুদিনের মধ্যেই কোটি কোটিপতি হওয়া যায়, আর কোটিপতি হওয়াটা ওই ফালতু আদর্শের নুকনির থেকে অনেক বেশি কাজের, কাজেই দলবদল চলছে চলবে। আজ বায়রন বিশ্বাস সেটাই করে দেখালেন। আমরা মানুষকে প্রশ্ন করেছিলাম, বায়রনের দলবদল বা সারা দেশেই এমএলএ এমপিদের সময় আর সুযোগ পেলেই দলবদল কি এক চরম অনৈতিক কাজ নয়? কী বলেছেন মানুষ শোনা যাক। 

ক’দিন আগেই এই বায়রন বিশ্বাসের শপথগ্রহণ নিয়ে কত ন্যাকামি হয়েছে, আমরা তখনই বলেছিলাম, উইকেট বড্ড নড়বড়ে, যে কোনও শাসকদলেরই এক উদগ্র বাসনা থাকে সব্বাইকে অধীনে রাখার, আমাদের রাজ্যের শাসকদল আলাদা হতে যাবেই বা কেন? বিজেপি বড় খেলোয়াড়, তারা ভেড়া পিছু ৫০ কোটি ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, তাদের দলবদলের খেলায় সরকার বদলে যায়, আর ছোট খেলোয়াড়েরা অনুপ্রেরণা পায়। সেই অনুপ্রেরণাতেই আজ বায়রন বোল্ড আউট, আর উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে অধীর চৌধুরীর দুঃখ, আগামিকাল সে দুঃখ যে অন্য কারও কপালে ঝুলছে না, হলফ করে সেটা কি কেউ বলতে পারে?      

 

RELATED ARTICLES

Most Popular