বসন্ত আসলে কোকিল ডাকে, বর্ষা কালে ব্যাঙ ডাকে, হেমন্তে পাতা ঝরে, গরমে ঘামাচি হয় আর নির্বাচন সামনে আসলেই অমিত শাহ আসেন। এ এক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঘের আগে ফেউয়ের মতোই নির্বাচনের ঠিক আগে আগে প্রথম যার দেখা এই বাংলায় পাওয়া যায় তিনি হলেন অমিত শাহ। তো আবার নির্বাচন আসছে, যে সে নয়, দেশ জোড়া সাধারণ নির্বাচন, তার আগে অমিত শাহ ঘুরে গেলেন। কিন্তু এবারের ট্যুর কেমন দায়সারা গোছের, আসা থেকে বক্তব্য সবটাই খুব নিয়মমাফিক বলেই মনে হল। সেই বিরাট জোশ ছিল না, তিনি এলেন এবং সমর্থকরা বিরাটভাবে উজ্জীবিত হলেন তেমনও মনে হল না। ভিক্টোরিয়ার সমাবেশ, কদিন আগেই বাংলা দেখেছে, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের জায়গাতেই এবারের সমাবেশ। না, ছাপিয়ে যাওয়া তো দূরের ব্যাপার, জায়গায় জায়গায় খাবলা খাবলা ফাঁকা জায়গা, দলের এক নেতা বললেন এই পাল্লা দিতে যাওয়াটা ভালো হল না। এবং অমিত শাহের বাংলায় আসা মানেই নেতাকর্মীদের মধ্যে সামান্য হলেও এক প্রত্যাশার জন্ম দেয়। সেখানে প্রত্যাশা পূরণ তো দূরস্থান কর্মীরা খানিক হতাশ বললেও ভুল হবে না। কর্মীদের এক অংশ ভেবেছিলেন অমিত শাহ নতুন কিছু ঘোষণা করবেন, কোনও নতুন তথ্য ফাঁস করবেন, বাংলা কেন্দ্রিক কোনও প্রকল্পের ঘোষণা করবেন। কিছুই হয়নি, বরং আজ ওই সভাতেই দিলীপ ঘোষের বক্তব্যের পরে খানিক জোশ দেখা গিয়েছে, কিন্তু সেই বক্তব্যেও এক বিশাল কেলো, তা নিয়ে কথা পরে বলছি। কিন্তু এই সাদামাটা অমিত শাহ আগমন নেতাদের কপালেও ভাঁজ ধরিয়েছে, তাই সেটাই বিষয় আজকে। অমিত শাহের বাংলা ভ্রমণ।
আরও পড়ুন: Aajke | মতুয়া ভোট আর বিজেপির মিথ্যাচার
মেরেকেটে ২০ মিনিটের ভাষণ। তাতে ছিল কী? মোদি টাকা পাঠাচ্ছে কিন্তু গরিব মানুষ পাচ্ছেন না। বাংলা এবার মোদিজিকে প্রধানমন্ত্রী বানাবে। বাংলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের বদলে বোমার আওয়াজ পাওয়া যায়। কাশ্মীর শান্ত, সন্ত্রাসবাদ শেষ। রাম মন্দির উদঘাটন ২২ জানুয়ারি আর ২১২ জন বিজেপি কর্মী খুন। নতুন একটা কথাও কি আছে? এর আগে নির্বাচনের সময় যা যা বলেছেন, তার চেয়ে আলাদা কিছু আছে? উনি বললেন ২০২৬ সালে রাজ্যে বিজেপি আসবে, উনি জানেন বিধানসভা নির্বাচনের পরে ৮টা উপ নির্বাচনের একটা বাদ দিলে বাকিগুলোতে বিজেপি তিন নম্বরে? জানেন যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট কমেছে? জানেন যে রাজ্যজুড়ে এই মুহূর্তে বিজেপি দু’ নম্বর জায়গাটাই ধরে রাখতে পারছে না? বলে চলে গেলেন, খুব হিসেব করেই এই মিটিং ২৯ তারিখেই রাখা হয়েছে।
৩ তারিখের ফলাফল আসার পরে এই মিটিংটাও কি করা যেত? অন্তত দিন ২০র মধ্যে সভা করার মতো অবস্থায় থাকবে বিজেপি? জানে, বিজেপি এসব জানে। এক নার্ভাসনেস তাদের চোখে মুখে, রুদ্রনীলের ছড়াতে সেই ভয় কেটে যাবে না। আবার এসে বলে গেলেন সিএএ আমরা লাগু করবই। এ তো ভারি মজার ব্যাপার, সরকারে আছেন ওঁরা, বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই আছেন, আইন পাশ করেছেন ২০১৯-এ। সেই থেকে এখনও সেই আইনের রুলবুক তৈরি হল না, মানে একটা আইনকে লাগু করতে হলে এক রুল বুক তৈরি হয়, কীভাবে তার প্রয়োগ হবে সেসব লেখা হয়, কিন্তু এখনও তা তৈরি হল না। কে বাধা দিচ্ছে? প্রতিবার আসছেন আর প্রায় ধমকের সুরে বলে যাচ্ছেন, আমরা সিএএ লাগু করব। এর মানে কী? করেই দেখুন না, ভালো করেই জানেন রাজ্য জুড়ে ভ্যানিশ হয়ে যাবে বিজেপি, করতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিবার কেবল ওই মতুয়া ভোট পাওয়ার জন্য একই কথা বার বার করে বলে যান। এবং দুর্নীতির কথা বলে গেলেন। এর আগে বলেছিলেন তো, ভাগ মুকুল ভাগ, ভাগ শুভেন্দু ভাগ, সেই মুকুলকে দলে নিয়েছেন, সেই শুভেন্দু এখন বিজেপি বিধানসভার দলনেতা, লোকে শুনবে এই কথাগুলো? উত্তরের বিজেপি আলাদা উত্তরবঙ্গ চান, এ নিয়ে কোনও কথা? না বলেননি। আগামী পরিকল্পনা, রাজনৈতিক কর্মসূচির কথা বলেননি। সব মিলিয়ে এক ম্যাড়ম্যাড়ে ভাষণ শেষ করেই ঘরের দিকে রওনা দিলেন অমিত শাহ। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, বাংলায় এলেন অমিত শাহ, নতুন কোনও প্রল্পের ঘোষণা নয়, নতুন কোনও কথাও তাঁর ভাষণে নেই, তেমন তীব্র বা তীক্ষ্ণ সমালোচনাও নেই, গতানুগতিক ভাষণ দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পাল্লা দিয়ে ভিড়ও তেমন হল না, বিজেপি কি তাহলে সত্যি বাংলায় তিন নম্বরে চলে যাচ্ছে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার ফলাফল নিয়ে তেমন শিওর নয় বিজেপি। অন্তত তিনটেতে জিতবেন, এটা জানলে এই জনসভাই রাখা হত ৫ কি ৭ কি ৯ ডিসেম্বর। এটা ছিল নিছক এক নিয়মরক্ষার জনসভা, সেই জন্যই মাত্র ২০ মিনিটের ভাষণে কোনও ঝাঁঝ নেই, নতুন কোনও অভিযোগ নেই, যেদিন এলেন সেদিনই নিয়োগ দুর্নীতিতে এক অন্যতম অভিযুক্ত বেল পেলেন। ওনারাও জানেন শেষ পর্যন্ত একজনের দুর্নীতিও প্রমাণ করা যাবে না, প্রত্যেকে ধীরে ধীরে বেল পেয়ে বাইরে আসবেন, আর যদি লোকসভার রেজাল্ট অন্যরকম হয়, তাহলে তো কথাই নেই, নিজেদের সামলাতে দিন যাবে। অন্যদিকে দক্ষিণে দরজা বন্ধ, উত্তরপূর্বে সমস্যা বাড়ছে, সব মিলিয়ে বিজেপি ব্যাকফুটে। সেটাই বোঝা গেল আজকের জনসভা থেকে, অমিত শাহ ফিরছেন, জানলা দিয়ে কি বাইরেটা দেখেননি, নিশ্চয়ই দেখেছেন। এমনিতে তৃণমূলের কাছ থেকে খুব বুদ্ধিদীপ্ত কিছু আশা করা যায় না, কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই, আজকে শহরজুড়ে মোটাভাই ভোট নাই ব্যানারগুলো ভারি মজার, নিশ্চয়ই অমিত শাহের চোখে পড়েছে বড়দাদার।