Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeআজকেAajke | বাম-কং-আব্বাস জোট কতদূর? জটিলতা কোথায়?
Aajke

Aajke | বাম-কং-আব্বাস জোট কতদূর? জটিলতা কোথায়?

বাম ঘনিষ্ঠ বা বাম বিটের সাংবাদিকরা সকাল সন্ধ্যায় ফোন করছেন সেলিম সাহেবকে, আর কবে?

Follow Us :

ইঁটের পাঁজায় বসে রাজা মুঠোমুঠো বাদাম ভাজা খাচ্ছে, কিন্তু গিলছে না। হ্যাঁ, সুকুমার রায় বেঁচে থাকলে আর এই কবিতা আজ লেখা হলে একজনেরও বুঝতে অসুবিধে হত না যে উনি কাদের কথা বলতে চাইছেন। রোজ রাতে শুনি কাল শিওর, সকালে শুনি বিকেলে আর বিকেলে শুনি রাতে। আজ নয় বহুদিন ধরেই এটাই চলছে। সেই কবে প্রথম তালিকা বের করেছে সিপিএম, আজও সেই তালিকার পরে সংযোজন বলতে মিলি ওঁরাও, আলিপুরদুয়ারে আরএসপির প্রার্থী, ব্যস। চোখ বন্ধ করে ভাবলে লালমোহন গাঙ্গুলির মতো শিহরিত হতে হয় মশাই। সেই যে সেই বামফ্রন্ট, নির্বাচনের ৩০-৪০ দিন আগেই কেন্দ্রীয় রাজ্য জোন ইত্যাকার বৈঠক সেরে ঠিক করে ফেলত কেবল সিপিএম ক’টা আসনে দাঁড়াবে তা নয়, ফব বা আরএসপির কে দাঁড়াবে, কোন আসনে দাঁড়াবে সেটাও ঠিক করে দিতেন সিপিএম নেতারা, সেই দুর্ভেদ্য বাম দুর্গে আজ সুনামির পরবর্তী ছবি। এক কাঠমোল্লার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা আইএসএফকে ম্যানেজ করতেও হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে, তার মধ্যে আবার শরিকি ঝামেলা। যাঁরা এতদিনে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন, সাধে কি আর বলে সর্বহারার শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই। আজ সিপিআই বা ফব বা আরএসপির হারানোর কী আছে? তাঁদের একজন এই রাজ্য থেকে সাংসদ নির্বাচিত হবেন এমন দুরাশা তো তাঁদের নেই, মন্ত্রিত্বের ভাগাভাগি নেই, সিপিএম রক্তচক্ষু দলের মধ্যেই দেখাতে পারছে না তো দলের বাইরে আর কী হবে? কাজেই শরিকরা জানিয়ে দিয়েছেন সাকুল্যে বরাদ্দ ওই আসন তাঁরা ছাড়বেন না। ওদিকে নয়া কাঠমোল্লাদের চাহিদা বিরাট। এবং এসব তামাশা চলছে প্রকাশ্যেই। কাজেই সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, বাম-কং-আব্বাস জোট কতদূর? জটিলতা কোথায়?

বাম ঘনিষ্ঠ বা বাম বিটের সাংবাদিকরা সকাল সন্ধ্যায় ফোন করছেন সেলিম সাহেবকে, আর কবে? যা খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে কমরেড সেলিমও বিরক্ত। তিনি যখন মধ্যগগনে তখন একবারের জন্যও ভেবেছিলেন যে ফরোয়ার্ড ব্লকের নরেন চ্যাটার্জি বা সিপিআই-এর স্বপন ব্যানার্জির দাঁতখিচানি সহ্য করতে হবে? এখন সেটাও সহ্য করতে হচ্ছে। তবুও মোদ্দা কিছু বিষয়ের উপরে ঝুলে রয়েছে এই জোটের ভবিষ্যৎ। কংগ্রেস বহরমপুর লড়বে জানা কথা, মালদা উত্তর বা দক্ষিণ লড়বে, সেও জানা, কিন্তু মুর্শিদাবাদ ছেড়ে দেব? বা পুরুলিয়া জানা নেই। তো আগে সেসব বোঝাপড়া রাহুল আর ইয়েচুরিরা দিল্লিতেই সেরে ফেলতেন, কিন্তু সেখানেই সবচেয়ে বড় সমস্যা।

আরও পড়ুন: Aajke | বহুতল ভেঙে পড়ল, গাফিলতি কার? পিছনের আসল কারণটা কী?

কেরালাতে গতবার সিপিএম সাকুল্যে একটা আসন পেয়েছিল, আলাপুঝা, সেখানে এবার উল্টোদিকে কংগ্রেসের তরফে দাঁড়িয়েছেন সি কে বেণুগোপাল, ওয়েইনাড়ে রাহুল গান্ধী নিজেই, কাজেই নির্বাচন শুরু হলেই ইন্ডিয়া জোটের হয়ে বামেদের একটা কথাও শোনা যাবে না। তাঁদেরকে বাকি সারা ভারতে একটা আসনও ছাড়েনি কংগ্রেস, না তেলঙ্গানায়, না অসমে। তার মানে যদি জোট হয়ও তাহলে কেবল ওই ত্রিপুরা আর পশ্চিমবঙ্গ। যেখানে বাম আর কংগ্রেসের এক বিরাট লড়াইয়ের ইতিহাস আছে। সে ইতিহাস ভুলেও জোট হলে রাহুল আসবেন এই বাংলাতে সিপিএম-এর হয়ে একটা প্রচারসভায়, ইয়েচুরি যাবেন নাকি ওয়েইনাড়ে তাঁর লোকে বলে ভাবশিষ্য রাহুল গান্ধীর প্রচারে? কাজেই গুচ্ছের স্ববিরোধিতা নিয়ে দলের মধ্যেই নানান মত ঘুরছে, সবথেকে প্রবল হয়ে উঠছে যে মত তা হল অনেক হয়েছে, এবার একলা চলো রে। যে আরএসপি কেরালাতে এলডিএফ বিরোধী জোটে, যে ফরোয়ার্ড ব্লক তামিলনাড়ুতে ডিএমকে বাম কংগ্রেস বিরোধী জোটে তাদের জন্য এ রাজ্যে আসন ছেড়ে কী লাভ? ওই অংশের বক্তব্য কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে আমাদের লাভ কী? তার চেয়ে আমরা নিজেরা লড়ে হারলেও আমাদের জনসমর্থনের একটা ঠিকঠাক হদিশ পাওয়া যাবে আর তার চেয়েও বড় কথা হল এত শত স্ববিরোধিতা নিয়ে চলতে হবে না। কিন্তু দলের মধ্যে পাকা মাথাদের এক অংশ এখনও এই জোট করেই মমতাকে হারানোর স্বপ্ন দেখেন, হোক না আব্বাস নওশাদ, দুটো একস্ট্রা ভোট তো কাটা যাবে তৃণমূলের। এই অংশের ধারণা তৃণমূল দুর্বল হলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে আর তারপরে তো রাস্তা খালি, বিজেপির মুখোমুখি বাম কংগ্রেস। এই দুই মতের টানাপোড়েনের ফাঁকফোকরে ফব, আরএসপি, সিপিআই। আর আগের সেসব দল বিপ্লবী বাংলা কংগ্রেস বা মার্কসবাদী ফরোয়ার্ড ব্লক, সোশালিস্ট পার্টি ইত্যাদি কোথায় গেল কে জানে। তারই মধ্যে জোটের জোয়ার-ভাটা খেলে যাচ্ছে বাংলা জুড়ে। আমরাই বহু আগেই বলেছিলাম, ডায়মন্ডহারবারে লড়তে রাজি নয় সিপিএম, তারা এ আসন ছেড়ে দিয়েই রফা করতে চায় আইএসএফ-এর সঙ্গে, ওদিকে নওশাদ সিদ্দিকি বুঝেছেন তাঁকে বাঘের মুখে ফেলে সার্কাস দেখবে বামেরা, ওখানে দাঁড়িয়ে জামানত জব্দ হলে আম ছালা দুই যাবে, কাজেই তারাও জল মেপেই যাচ্ছে। আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, কং-বাম-আইএসএফ জোট হলে তারা সাকুল্যে ক’টা আসনে লড়াই দেবে? জিতবে ক’টায়? নাকি আবার বাংলার নির্বাচন সেই পুরনো বাইনারি তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যেই থেকে যাবে? শুনুন কী বলেছেন আমাদের দর্শকেরা।

১৯৫২-তে সিপিআই প্রার্থী কমল বসু, যিনি পরে কলকাতার মেয়র হয়েছিলেন, ১৯৫৭-তে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেই লড়ে জিতেছিলেন তেভাগা আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম নেতা কংসারি হালদার। সে এক অসাধারণ মুহূর্ত, প্রার্থী পালিয়ে বেড়াচ্ছে, আজ এখানে হঠাৎ হাজির তো পরক্ষণেই হাওয়া। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হারানের নাতজামাই পড়ে ফেলুন, তিনি মানুষের সমর্থন নিয়েই জিতেছিলেন। হিন্দু বা মুসলমান ভোট নিয়ে নয়। এরপর ১৯৬২-তে একবার মাত্র কমিউনিস্টরা হেরেছিল, আবার ১৯৬৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ১১ বার ডায়মন্ডহারবার আসনে জিতেছে কমিউনিস্টরা। আজ সেই কমিউনিস্টরা সেই আসন কাকে ছেড়ে দিচ্ছে? ফুরফুরা শরিফের এক কাঠমোল্লার তোল্লা দেওয়া দল, এক পিরজাদা নওশাদ সিদ্দিকির হাতে। সেই কবে থেকেই কমিউনিস্টরাই বলে এসেছে, জেতা হারা নয়, নির্বাচন হল আমাদের আদর্শকে মানুষের সামনে নিয়ে যাওয়ার লড়াই, আজ তাদের এই করুণ ছবিই বলে দেয় আর যাই হোক এই বাংলার বামফ্রন্টে কোনও কমিউনিস্ট নেই।

RELATED ARTICLES

Most Popular