তেল আভিভ: ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের (Israel Hamas War) উত্তাপ এতটুকু কমেনি। গোটা খ্রিস্টান দুনিয়ার সমর্থন ও রসদ পেয়েও হামাসকে চিরতরে নিকেশ করতে পারছে না ইজরায়েল। এর কারণ কী? কোন শক্তিতে হামাস বাহিনী ১২ দিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে শক্তিধর দেশ ইজরায়েল ও সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে। হামাসকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার পণ নিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। দুটি অসম শক্তির মধ্যে এই লড়াইয়ে হামাসের হাতি রয়েছে এক গোপন কৌশল। যার বলেই বারোদিন ধরে ইজরায়েল তাদের উপর কবজা করতে পারছে না। সেই কৌশলেই হামাস বাহিনী এখনও খাদ্যভাণ্ডার, সরবরাহ পথ, অস্ত্র মজুত, এমনকী চিকিৎসা ব্যবস্থাও অটুট রাখতে পেরেছে। সেটা হল গাজার মাটির নীচে গড়ে তোলা আস্ত শহর। গড়ে তুলেছে আঁকাবাঁকা পথে ঘেরা সুড়ঙ্গ।
ভূগর্ভস্থ রণকৌশল অথবা সুড়ঙ্গ যুদ্ধের রয়েছে এক সুবিশাল ইতিহাস। আর সেই অস্ত্রেই পৃথিবীর সেরা চর বাহিনী মোসাদের চোখেও ধুলো দিয়ে বেড়াচ্ছে হামাস বাহিনী। যে কোনও সভ্যতার মতোই মাটির নীচে লুকিয়ে যুদ্ধকৌশলও অত্যন্ত পুরনো পদ্ধতি। মহাভারত এবং গ্রিক সাহিত্যেও সুড়ঙ্গ যুদ্ধের প্রসঙ্গ আছে। ৬৬-৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান বাহিনীর বিরুদ্ধে ইহুদি বিদ্রোহ থেকে ভিয়েতনাম এমনকী আল কায়েদাও সুড়ঙ্গ যুদ্ধে ধুলো দিয়েছে সর্বশক্তিমান মার্কিন সেনাকে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে কমিউনিস্ট ভিয়েত কংগ্রেসের সঙ্গে মার্কিন বাহিনী এঁটে উঠতে পারেনি দীর্ঘদিন ধরে এই গেরিলা কৌশলের কাছে। আফগানিস্তানের তোরা বোরা-র যুদ্ধেও আল কায়েদা এই কৌশলই নিয়েছিল। শতকের পর শতক ধরে এই রণকৌশল যোদ্ধাদের আশ্রয় ও আক্রমণের অন্যতম হাতিয়ার। চিরাচরিত স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীর যুদ্ধের চেয়ে সুড়ঙ্গ যুদ্ধ অনেক নিরাপদ, ক্ষয়ক্ষতি কম হয়।
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআরের অনুমতি মিলল না
২০ বছরের ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কমিউনিস্ট স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা ‘মারো এবং আত্মগোপন করো’ কৌশলে আমেরিকাকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিল। সুড়ঙ্গের ‘ভুলভুলাইয়া’র কারণে বিমান ও স্থল হানাদারিতেও আমেরিকা বিভ্রান্ত হয়েছিল। এই সুড়ঙ্গ পথ দিয়েই এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে সহজে চলে যাওয়া যেত। এর ভিতরে কুয়ো, জল সরবরাহ, রসদ মজুত এমনকী শত্রু আক্রমণ রুখতে ফাঁদ পাতা থাকত। শেষমেশ সুড়ঙ্গে ঢুকে বিপ্লবীদের খতম করতে আমেরিকা বিশেষ প্রশিক্ষিত ‘সুড়ঙ্গ মূষিক’ নামে একটি বাহিনী গড়েছিল। যাদের লড়াই করতে হয়েছে শুধু ভিয়েত কংগ্রেসের সঙ্গে নয়, মাটির নীচে থাকা বিষধর সাপের সঙ্গেও।
আফগানিস্তানের তোরা বোরা যুদ্ধেও আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের কাছে ধোঁকা খেয়েছিল আমেরিকা। কয়েক সপ্তাহের লড়াইয়ে আল কায়েদাকে কবজা করলেও লাদেনকে ধরতে পারেনি। সুড়ঙ্গ পথেই লাদেন পাকিস্তানে পালিয়ে যান। দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধেও ইরাককে দমাতে নাভিশ্বাস উঠেছিল আমেরিকার সুড়ঙ্গের জন্যই। মাইলের পর মাইল সুড়ঙ্গ ছিল বাড়ি বাড়ি থেকে সেনা ঘাঁটি পর্যন্ত। এমনকী সাদ্দাম হোসেনের প্রাসাদের নীচে পালানোর জন্য বিশাল সুড়ঙ্গ পথ ছিল। এই যুদ্ধের ছাইয়ের উপরেই গড়ে ওঠে নতুন জঙ্গি গোষ্ঠী, যাদের নাম আইসিস।
একই পদ্ধতিতে এবার লড়াই চালাচ্ছে হামাসও। দলের নেতা ইয়াহা সিনওয়ারের দাবি, গাজায় ৫০০ কিমি দীর্ঘ সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে। যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থলপথে ঢুকব ঢুকব করেও ইজরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজায় অভিযান চালাচ্ছে না এই কারণেই। মনে করা হচ্ছে, সুড়ঙ্গে ঘাপটি মেরে থাকা হামাসের কাছে ব্যাপক মার খেতে পারে ইহুদি বাহিনী। ইজরায়েল হামাসের এই সুড়ঙ্গ পথের নাম দিয়েছে ‘গাজা মেট্রো।’ এখানে খাদ্য ও অস্ত্র মজুত করার পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। ভিতরে আলো রয়েছে এবং দেওয়াল সিমেন্টে গাঁথা। ইজরায়েলের অভিযোগ, গাজায় যে ত্রাণসামগ্রী যাচ্ছে তা হামাসরা সুড়ঙ্গে মজুত করছে লড়াইকে দীর্ঘ করার উদ্দেশে।
আরও খবর দেখুন