অপরাধী অপরাধ করার সময় নিজের ছাপ রেখে যায়, শার্লক হোমস থেকে কিরীটী রায় থেকে ফেলুদা এই এক কথা বার বার বলেছেন। ধরুন একজন খুনি তিনি পেশায় ডাক্তার, তিনি তাঁর শিকারের গলা কাটেন কিন্তু তা এক দক্ষ সার্জনের মতো, এটাই তাঁর অপরাধের ছাপ। কিন্তু যদি সে এক কসাই হত, তাহলে তার অস্ত্রও হত আলাদা, কাটার ধরনও হত আলাদা। এটা প্রত্যেক অপরাধের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমাদের ইডি বা সিবিআইয়েরও কাজ করার একটা বিশেষ মোডাস অপারেন্ডি, কাজ করার এক বিশেষ ধরন আমাদের চোখে পড়েছে, তাই নিয়েই আমাদের আলোচনা। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ইডি ধরে জেলে পুরে দিল।
কিসের ভিত্তিতে? কোন প্রমাণ বা কার সাক্ষ্য বয়ানের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে পোরা হল। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পি শরৎ চন্দ্র রেড্ডি নামের একজনের বয়ানের ভিত্তিতে ওঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসুন দেখা যাক এই রত্নটি কে? দিল্লি লিকার মামলায় গত নভেম্বর ২০২২-এ এই ভদ্রলোককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইনি অরবিন্দ ফার্মা নামের এক কোম্পানির ডিরেক্টর, এঁর মদ বিক্রির লাইসেন্স আছে, আরও কিছু ব্যবসা আছে। তো এঁকে গ্রেফতার করেই জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে এই মামলাতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কোনও ভূমিকা আছে কি না? আপনি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন কি না? উনি বলেছিলেন না, এই মামলার সঙ্গে কেজরিওয়ালের কোনও যোগাযোগ নেই। কিছুদিন পরেই তিনি স্বীকার করেন যে হ্যাঁ, উনি কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করে লিকার পলিসি নিয়ে কথাও বলেছেন। এবং হাতেনাতে ফল, তারপরেই তিনি মে ২০২৩-এ অসুস্থতার জন্য জামিন পেয়ে যান। গল্প এখানেই শেষ নয়, এই পি শরৎ চন্দ্র রেড্ডি ২০২২-এর জানুয়ারি এবং জুলাই মাসে ৪.৫ কোটি টাকা করে দু’বার বন্ড কিনেছেন এবং বলাই বাহুল্য যে তা গিয়েছে বিজেপির অ্যাকাউন্টে।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ২৯)
এখানেই শেষ নয়, গ্রেফতার হওয়ার পরে অরবিন্দ ফার্মা, ওঁর ওষুধের কোম্পানি ৫ কোটি টাকার ইলেকশন বন্ড দিয়েছে বিজেপিকে। নভেম্বর ২০২৩-এ ছাড়া পাওয়ার পরে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ওঁর কোম্পানি মাত্র ২৫ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনে বিজেপিকে দিয়েছে। এবং এইসব তথ্য তো এখন পাবলিক ডোমেনে আছে। এই লোকটির বয়ানের ভিত্তি করে ইডি একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে পুরেছে। এবার আসুন আরেক ঘটনায়, পিনকন কোম্পানির ফেরেব্বাজ ডিরেক্টর আদালতে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী মনোরঞ্জন রায়ের বয়ানের ভিত্তিতে আজ ২৫৫ দিন ধরে জেলে রাখা হয়েছে আমাদের চ্যানেল সম্পাদক কৌস্তুভ রায়কে। অপরাধীর মোডাস অপারেন্ডি এক্কেবারে এক, প্রথমে এক অপরাধীকে গ্রেফতার করো, জেলে পোরো তারপর তার বয়ানের ভিত্তিতে যাকে খুশি গ্রেফতার করো। এই অপরাধ লাগাতার করে চলেছে ইডি, সিবিআই, সেই নির্দেশ আসছে মোদি–শাহের কাছ থেকে। আমরা তার বিচার চাইছি। জাস্টিস। জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: