এই শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল।
এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল॥
তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয়,
ওরে ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন-ভয়।
এই বাঁধন প’রেই বাঁধন-ভয়কে কর্ব মোরা জয়,
এই শিকল-বাঁধা পা নয় এ শিকল ভাঙা কল॥
তোমার বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে কর্ছ বিশ্ব গ্রাস,
আর ভয় দেখিয়েই ক’র্বে ভাবছ বিধির শক্তি হ্রাস
সেই ভয়-দেখানো ভূতের মোরা ক’র্বো সর্বনাশ,
এবার আন্বো মাভৈঃ বিজয়-মন্ত্র বল-হীনের বল॥
তোমরা ভয় দেখিয়ে কর্ছ শাসন জয় দেখিয়ে নয়;
সেই ভয়ের টুঁটি ধর্ব টিপে কর্ব তারে লয়।
মোরা আপনি ম’রে মরার দেশে আন্ব বরাভয়,
প’রে ফাঁসি আন্ব হাসি মৃত্যু-জয়ের ফল॥
ওরে ক্রন্দন নয় বন্ধন এই শিকল-ঝঞ্ঝনা,
এ যে মুক্তি-পথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা!
এই লাঞ্ছিতেরাই অত্যাচারকে হান্ছে লাঞ্ছনা,
মোদের অশ্রু দিয়েই জ্ব’লবে দেশে আবার বজ্রানল॥
ব্রিটিশ শাসনে হুগলি জেলে বন্দি কাজি নজরুল ইসলাম এই কবিতা লিখেছিলেন, পরে তিনি নিজেই এই কবিতায় সুর দেন, স্বরলিপিও তৈরি করে দেন। ব্রিটিশ প্রশাসন ১৯২৩-এ গোটা ভারতকে এক জেলখানা তৈরি করেছিল, সাধারণ প্রতিবাদের ফলও ছিল ডান্ডাবেড়ি, জেলে পচে মরা। কিন্তু সে তো ছিল ব্রিটিশ শাসন, আজ স্বাধীন ভারতে এক স্বৈরাচারী সরকার প্রত্যেক প্রতিবাদী, বিরোধী মানুষজনকে জেলে পুরে এক অন্যায়ের শাসন চাপিয়ে দিয়েছে মানুষের উপর। আজ সেইজন্যই নজরুলের এই গান মনে পড়ে গেল? শিকল দিয়ে যারা প্রতিবাদ থামানোর চেষ্টা করেছে তারা একটা সময়ের পরে ইতিহাসে আঁস্তাকুড়ে ঠাঁই পেয়েছে। কোনও অত্যাচারী শাসক রেহাই পায়নি জনরোষ থেকে। হিটলার, মুসোলিনি, স্তালিন, পল পট, ইদি আমিন থেকে সাদ্দাম হোসেন, ইয়াহিয়া খান থেকে বার্মার মিলিটারি জুন্টা, প্রত্যেকে হেরেছে, হারবে। আজ দেশের দু’জন অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী জেলে, জেলে আছেন গুচ্ছ গুচ্ছ বিরোধী নেতা, সাংবাদিক থেকে সমাজকর্মী জেলে এবং নরেন্দ্র মোদি ভাবছেন এভাবেই কেটে যাবে। চিরটাকাল স্বৈরাচারীরা এভাবেই ভেবে এসেছে।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ২৮)
২৫ মার্চ, ইয়াহিয়া খানের পাঠানো পাক বাহিনী দখল নিয়েছিল ঢাকার, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে খুন করা হয়েছিল ছাত্রদের, বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিল্পী, কবি, নাট্যকার, অধ্যাপকদের বাড়ি থেকে বের করে গুলি করে মারা হয়েছিল, অসংখ্য মহিলা ধর্ষিতা হয়েছিলেন। মুজিবর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আর এতকিছু করার পরে ২৬ মার্চ কালুরঘাট রেডিও স্টেশন থেকে সেই ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র পাঠ, পরের দিন আবার ওই একই জায়গা থেকে মেজর জিয়াউর রহমান মুজিবের সেই ঘোষণা পড়ে শোনান। শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ। পতন হয়েছিল স্বৈরাচারীর। এটাই ইতিহাস। এক অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করার পরে আবার ইন্ডিয়া জোটের নেতারা এক মঞ্চে, দিল্লি থেকে আওয়াজ উঠছে জেল কে তালে তোড়েঙ্গে। স্লোগান উঠছে জনতন্ত্র কো বঁচানা হ্যায়, জেল কে তালে তোড়না হ্যায়। হ্যাঁ, অত্যাচারই শেষ কথা নয়, প্রতিবাদীরা ফিনিক্স পাখির মতো ফিরে আসে বার বার, তারাই ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়গুলো লেখে। আর সেই সময়ে আবার মনে করিয়ে দিই, আমাদের চ্যানেল সম্পাদক আজ ২৫৪ দিন হল জেলেই আছেন। আমরা বিচার চাইছি। জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।